ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে অমিক্রনের নতুন উপধরন শনাক্ত

  • আপডেট সময় : ০২:০৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনের নতুন উপধরনের (সাব ভেরিয়েন্ট) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আক্রান্ত দুজনই পুরুষ। তাঁদের একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরেকজনকে বাসাতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে এই দুই ব্যক্তি অমিক্রনের নতুন উপধরনে (বিএ ৪/৫) আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার যবিপ্রবি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক ওই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া নমুনার জিন নকশা (জিনোম সিকুয়েন্স) বিশ্লেষণ করে করোনার নতুন এই উপধরণটি শনাক্ত করেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো এই উপধরনে শনাক্ত হওয়ার কথা শুনিনি। তবে এটা যদি উপধরন হয়ে থাকে, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই বলেই আমার ধারণা। তবে মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।’
দেশে প্রথম অমিক্রনে সংক্রমিত হন জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্য। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দেশে প্রথম অমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানা যায়। করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) মঙ্গলবার বিকেলের তথ্য বলছে, জিনোম সিকুয়েন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৯ জন অমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হয়েছে।
যবিপ্রবি গবেষক দল জানায়, আক্রান্ত দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ৪৪, আরেকজনের বয়স ৭৯ বছর। তাঁদের মধ্যে একজন করোনার বুস্টার ডোজের টিকা এবং অপরজন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। আক্রান্তদের শরীরে জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তাঁরা দুজনই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে গবেষকেরা ধারণা করছেন। গবেষক দলটি আরও জানায়, অমিক্রনের নতুন এ উপধরনটির স্পাইক প্রোটিনে অমিক্রনের মতোই রূপান্তর (মিউটেশন) দেখা যায়। তবে এ ধরনে ডেলটা ধরনের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এ ছাড়া এই উপধরনের স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়। যবিপ্রবি গবেষক দল জানিয়েছে, এই উপধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিক কালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও অমিক্রনের এই উপধরনের আক্রান্ত হচ্ছেন। এই উপধরনটি বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য ধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
করোনার এই নতুন উপধরন শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই উপধরনটি মানুষের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, অচিরেই এ উপধরনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স করে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ইকবাল কবীরের নেতৃত্বে করোনার নতুন এই উপধরন শনাক্ত হয়। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান হাসান মো. আল-ইমরান, পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর ইসলাম, সেলিনা আক্তার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ এস এম রুবাইয়াতুল আলম, মো. সাজিদ হাসান, জিনোম সেন্টারের গবেষণা সহকারী প্রশান্ত কুমার দাস, রাসেল পারভেজ প্রমুখ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে অমিক্রনের নতুন উপধরন শনাক্ত

আপডেট সময় : ০২:০৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনের নতুন উপধরনের (সাব ভেরিয়েন্ট) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আক্রান্ত দুজনই পুরুষ। তাঁদের একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরেকজনকে বাসাতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে এই দুই ব্যক্তি অমিক্রনের নতুন উপধরনে (বিএ ৪/৫) আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার যবিপ্রবি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক ওই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া নমুনার জিন নকশা (জিনোম সিকুয়েন্স) বিশ্লেষণ করে করোনার নতুন এই উপধরণটি শনাক্ত করেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো এই উপধরনে শনাক্ত হওয়ার কথা শুনিনি। তবে এটা যদি উপধরন হয়ে থাকে, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই বলেই আমার ধারণা। তবে মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।’
দেশে প্রথম অমিক্রনে সংক্রমিত হন জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্য। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দেশে প্রথম অমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানা যায়। করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) মঙ্গলবার বিকেলের তথ্য বলছে, জিনোম সিকুয়েন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৯ জন অমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হয়েছে।
যবিপ্রবি গবেষক দল জানায়, আক্রান্ত দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ৪৪, আরেকজনের বয়স ৭৯ বছর। তাঁদের মধ্যে একজন করোনার বুস্টার ডোজের টিকা এবং অপরজন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। আক্রান্তদের শরীরে জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তাঁরা দুজনই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে গবেষকেরা ধারণা করছেন। গবেষক দলটি আরও জানায়, অমিক্রনের নতুন এ উপধরনটির স্পাইক প্রোটিনে অমিক্রনের মতোই রূপান্তর (মিউটেশন) দেখা যায়। তবে এ ধরনে ডেলটা ধরনের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এ ছাড়া এই উপধরনের স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়। যবিপ্রবি গবেষক দল জানিয়েছে, এই উপধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিক কালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও অমিক্রনের এই উপধরনের আক্রান্ত হচ্ছেন। এই উপধরনটি বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য ধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
করোনার এই নতুন উপধরন শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই উপধরনটি মানুষের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, অচিরেই এ উপধরনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স করে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ইকবাল কবীরের নেতৃত্বে করোনার নতুন এই উপধরন শনাক্ত হয়। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান হাসান মো. আল-ইমরান, পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর ইসলাম, সেলিনা আক্তার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ এস এম রুবাইয়াতুল আলম, মো. সাজিদ হাসান, জিনোম সেন্টারের গবেষণা সহকারী প্রশান্ত কুমার দাস, রাসেল পারভেজ প্রমুখ।