নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড (পশ্চিমা বিশ্ব) ইউরোপের মতো বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন। ‘দ্বিতীয় চা দিবস ২০২২’ উপলক্ষে এ ব্রিফিং করা হয়।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে। আমি কখনই বলিনি ১৭ কোটি মানুষের পয়সা বেশি হয়েছে। রিয়েলিটি (বাস্তবতা) হলোÑদেশের ২০ ভাগ মানুষের লো ইনকাম (নিম্নআয়), সেটাকে মাথায় রাখতে হবে।টিপু মুনশি বলেন, ১৭ কোটি থেকে তিন কোটি বাদ দিলে যে ১৪ কোটি থাকে, তাদের মধ্যে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড (পশ্চিমা বিশ্ব) ইউরোপের মতো। দরিদ্র শ্রেণির তিন কোটি মানুষকে অ্যাডজাস্ট করা দরকার, সেটার চেষ্টাই করে যাচ্ছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, সেটা আপনারাও জানেন। তিনি বলেন, আমাদের দেখা দরকার সাধারণ মানুষ সঠিক দামে পণ্য কিনতে পারছেন কি না। ক্রয়ক্ষমতাও দুটি দিক রয়েছে, একটি হলোÑযারা উৎপাদনকারী ও যারা ভোক্তা। যদি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাই যে, উৎপাদনকারী আর ইন্টারেস্ট পাচ্ছে না। তাহলে কিন্তু প্রভাব পড়বে। টিপু মুনশি আরও বলেন, আমাদের দেখতে হবে উৎপাদন খরচ, প্রফিট, মার্জিন কতটা থাকা উচিত। সামঞ্জস্যপূর্ণ দামের ক্ষেত্রে যেন কোনোভাবে বড় ধরনের পার্থক্য না থাকে। এটা দেখার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে সাহায্য চাইবে, আমরা সাহায্য করবো। মন্ত্রী বলেন, নিম্নআয়ের মানুষের স্বার্থ দেখাটাই আমাদের লক্ষ্য। যাদের টাকা আছে, তিনি কী করবেন সেটা দেখার বিষয় না। কথা হলোÑন্যায্যমূল্যে যেসব পণ্য পাওয়া উচিত, সেটার দাম অবশ্যই আমরা দেখবো। খাদ্য মন্ত্রণালয় যখন আমাদের ডাকবে, তখন অবশ্যই যাবো। খাদ্যের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কনসার্ন। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় দেশের বাজারেও দাম কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে, ইন্দোনেশিয়াও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেÑএমন পরিস্থিতিতে সরকার তেলের দাম রিভিউ (সমন্বয়) করবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এক-দুমাস আমরা রিঅ্যাসেস করবো। ৫-৭ দিনের মধ্যে মে মাসের পুরো তথ্য নিয়ে রিভিউ করবো। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেটা রিপোর্ট আছে, আজকে দাম কমেছে। আজকের দামের প্রভাব দেশের বাজারে ফেলতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস। টিপু মুনশি বলেন, সুখবর যেটা পাম অয়েলের দাম কমেছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সয়াবিনের দামও কমার দিকে। ৬-৭ দিনের মধ্যে যে সভা হবে, সেখানে অ্যাসেস করে দেখে নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে। আমরা ধারণা, বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন দাম অনুযায়ী দামটা কমবে। পাম অয়েলে তো যথেষ্ট প্রভাব পড়বে বলে মনে করি। চালের দাম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত চাল কনট্রোল করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য চাইলে, সাহায্য করবো। যতটুকু জেনেছি, খাদ্য মন্ত্রণালয় আটটি টিম কাজ করেছে। এসব টিম ইতোমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে, জানার জন্য এবং কতটুকু স্টক আছে, তা বের করার চেষ্টা করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনো কিছুর সুফল পেতে হলে সময় দিতে হয়। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে তারা আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশে চালের অভাব নেই, যা দরকার তা আছে। কোথাও কোথাও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে। টিপু মুনশি বলেন, একটি সিম্পল প্রশ্ন আমার রয়ে গেছে, সেদিনও বলতে চেয়েছিলাম। যে চালটা ৫০ টাকা, সেটি শুধুমাত্র প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তারা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন।