প্রত্যাশা ডেস্ক : মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। অর্জনের প্রতি পদে ছিল সমাজের বাধা। এছাড়া শারীরিকভাবেও কিছুটা দুর্বল হওয়ায় সবসময় পেয়েছেন মানুষের অবহেলা, শুনেছেন নানা কটুকথা। শুধু তিনি একা নন তার পরিবারকেও সহ্য করতে হয়েছে মানুষের নানা কটুকথা। তবে দমে যাননি। হাল ছাড়েননি তিনি। এসব কটুকথা থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন। শতবাধা ডিঙিয়ে হয়েছেন অন্যদের অনুপ্রেরণার মডেল।
বলছিলাম দেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ডধারী তরুণ কনক কর্মকারের কথা। সম্প্রতি তিনি ২০টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। এ নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই তার কাজের প্রাপ্তিটা সুখকর হয়। তেমনি আমার কাছে আমার প্রাপ্তিটাও সুখকর ছিল। ২০টি রেকর্ড করতে অসংখ্যবার অনুশীলন করতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে যখন আমার রেকর্ডটা হাতে এসেছে তখন অনুভূতিটা সত্যিই খুব ভালো ছিল।’
কনক বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তার ব্যস্ততা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড নিয়ে কাজ করছেন।
কনকের ২০টি রেকর্ড করতে সময় লেগেছে প্রায় তিনবছর। তিনি ২০১৮ সালে প্রথম ফ্রি স্টাইল শুরু করেন। প্রথমে ফুটবলকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে যেমন- কপালে, থুতনিতে, মুখে, হাঁটুতে ও পায়ের তালুতে রাখার চেষ্টা করতেন। অনুশীলন করতে করতে এক সময় দেখলেন ফুটবল মাথায় ব্যালেন্স করতে পারছেন। ফ্রি স্টাইল করার ফলে ফুটবলের উপর বেশ ভালো দক্ষতা চলে আসে।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার ব্যালেন্সিং দক্ষতা উন্নতির দিকে যায়। এরপর ফুটবলের জায়গায় গিটার, চেয়ার ও ফুটবল আর্ম রোলও ব্যালেন্স করার চেষ্টা করতেন। অনুশীলনের ফলে দিনদিন ব্যালেন্সিং উন্নতি হতে থাকে। ধীরে ধীরে বড় বস্তুও ব্যালেন্সিং করতে শিখতে থাকেন তিনি। এরপর ব্যালেন্সিংকে ফুটবল ফ্রি স্টাইলের সঙ্গে যোগ করে নতুন নতুন কসরত শিখেন। সেসময় কনকের এসব কর্মকা- দেখে আশেপাশের মানুষজন তাকে নিরুৎসাহিত করতেন। কনক তাদের সমালোচনার জবাব দিতে নিজ চেষ্টা ও উদ্যমে এগিয়ে যেতে থাকেন। তিনি চাইতেন এই দক্ষতাগুলো দিয়ে ভিন্ন কিছু করা যায় কি না। সেই থেকে তার গিনেস বুকে রেকর্ডের ইচ্ছা জাগে।
স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দিনরাত কাজ করেছেন কনক। হাজার বার হারতে হারতে জিততে শিখেছেন তিনি। কনক ব্যালেন্সিং, ফুটবল ফ্রি স্টাইল ও বঙ্গবন্ধু ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এই তিন ক্যাটাগরিতে রেকর্ডগুলো করেছেন। ব্যালেন্সিংয়ের উপর প্রায় ১১টি রেকর্ড রয়েছে তার। বিভিন্ন বস্তু যেমন- চেয়ার, গিটার কপালে ও থুতনিতে রেখে ব্যালেন্স করতে পারেন তিনি। এছাড়া ফুটবল ফ্রি স্টাইলে কয়েকটি রেকর্ডও রয়েছে তার দখলে।
তবে পরিবার প্রথম দিকে এই কাজে নিরুৎসাহিত করতেন তাকে। তবে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বন্ধুদের কাছ থেকে। যে কোনো সমস্যার কথা মন খুলে শেয়ার করলে বন্ধুরাই সবসময় সাপোর্ট দিয়েছে এবং অনুশীলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছে। তাদের উৎসাহতেই কনক সামনে এগিয়ে যাওয়ার শতি পেয়েছেন বলে জানান কনক কর্মকার। কনক দেশের তরুণদের গিনেস বুকে রেকর্ড গড়তে সব রকম সহযোগিতা করেন। ২০১৮ সাল থেকে সরাসরি আট জনকে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়ায় সহযোগিতা করেন। এজন্য ফেসবুকে ‘ক্রিয়েট নিউ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ফর বাংলাদেশ’নামে একটা গ্রুপ খোলেন তিনি। এছাড়া যারা ফুটবল ফ্রি স্টাইলে আসতে চায় তাদের প্রশিক্ষণ দেন কনক। কনকের স্বপ্ন শততম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মাধ্যমে লাল-সবুজের পতাকাকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরবেন। তবে কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ২০টি রেকর্ড করতে তার শতকোটি বার কষ্ট করতে হয়েছে। তাছাড়া এটি অনেক ব্যয়বহুলও বটে। তাই ভবিষ্যতে নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে তিনি সমাজ, রাষ্ট্র বা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।
দেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ডধারী কনক কর্মকার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ