ঢাকা ১২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশের জন্য লড়তে হবে’ আফগান নেতাদের: বাইডেন

  • আপডেট সময় : ১১:৫৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অগাস্ট ২০২১
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজেদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করতে আফগান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাইডেন গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, “আফগান নেতাদের একত্রিত হতে হবে। তাদের নিজেদের জন্য এবং দেশের জন্য লড়াই করতে হবে।” আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সদস্য সংখ্যা তালেবানের চেয়ে বেশি এবং তাদের যুদ্ধ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের ৬৫ শতাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় তারা দেশের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাঘলানের রাজধানী পুল-এ-খুমরির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তালেবানের হামলার মুখে পিছু হটে কেলাগি মরুভূমির দিকে সরে গেছে, যেখানে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটি বড় ঘাঁটি রয়েছে।
পুল-এ-খুমরি দখলের মধ্য দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সাতটি প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তান নিয়ে জো বাইডেন বলেন, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে এক লাখ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে ওয়াশিংটন এবং তাদের হাজার হাজার সেনা সেখানে প্রাণ দিয়েছে।
সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপ নেই জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে আফগান বাহিনীকে বিমানবাহিনীর সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং খাদ্য, সরঞ্জাম ও আফগান সেনাদের বেতনও দেওয়া হচ্ছে।
কাবুলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি জানান, তালেবানকে ঠেকাতে তিনি আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের সহায়তা চেয়েছেন, যাদের সঙ্গে বহুদিন ধরেই তার বিবাদ চলছিল। আফগানিস্তানের ‘গণতান্ত্রিক আবরণ’ রক্ষায় সাধারণ নাগরিকদের প্রতিও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এদিকে প্রাদেশিক রাজধানী আইবাকে তালেবান যোদ্ধারা সরকারি ভবনগুলোতে প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেশিরভাগ সরকারি বাহিনীকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে কর কর্মকর্তা শের মোহামেদ আব্বাস বলেন, “একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখা অথবা কাবুলে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করা। কিন্তু কাবুলও এখন আর নিরাপদ নয়।”
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ছিল, যেখানে তালেবানের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। এখন মনে হচ্ছে আগে উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণের সীমান্ত ক্রসিংগুলো দখল করে কাবুলের দিকে অগ্রসর হওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারকে পরাস্ত করতে লড়াইরত তালেবান বাহিনীর সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনাও আটকে আছে। মঙ্গলবার তালেবানের একজন মুখপাত্র আল জাজিরা টেলিভিশনকে বলেছেন তারা দোহায় শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটা ভেস্তে যেতে দিতে চান না।
গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তালেবান যোদ্ধারা বর্তমানে আফগানিস্তানের ১১টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা কাবুলে উত্তরাঞ্চল থেকে সহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ করতে চাইছে। অন্যদিকে আফগান সরকার প্রান্তিক অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিয়ে দেশের জনবহুল কেন্দ্রগুলো রক্ষার কৌশল নিয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা সীমান্তের ওপার থেকে তালেবান বাহিনীকে সরঞ্জাম ও অন্যান্য যুদ্ধ সহায়তা বন্ধে উদ্যোগী হয়। তালেবানকে সহায়তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের প্রধান গুলাম বাহাউদ্দিন জাইলানি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দেশের ৩৪টি প্রদেশের ২৫টিতেই লড়াই চলছে এবং গত দুই মাসে ৬০ হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় কাবুল অভিমুখে রয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের প্রধান মিশেল ব্যাশেলেত বলেন, যুদ্ধাপরাধ ও মনবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সরকারি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর তাদের হত্যার মতো খবরগুলো খুবই উদ্বেগজনক।
তালেবান আফগানিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মাজার-ই-শরিফের দিকেও এগোচ্ছে। এই শহরের পতন আশরাফ গনির সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
উত্তরাঞ্চলের একটি মিলিশিয়া বাহিনীর প্রধান আতা মোহাম্মদ নুর বলেছেন, ‘শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে’ তিনি শহরটি রক্ষার চেষ্টা করবেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “আমি হতাশাজনক মৃত্যুর চেয়ে মর্যাদা নিয়ে মৃত্যুকেই বেছে নেব।”
এই মাসের শেষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তালেবান বাহিনী কোনো বিদেশি সেনাকে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র বিরতিতে যেতে রাজি নয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মব বন্ধ না করলে ডেভিল হিসেবে ট্রিট করবো: উপদেষ্টা মাহফুজ

দেশের জন্য লড়তে হবে’ আফগান নেতাদের: বাইডেন

আপডেট সময় : ১১:৫৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অগাস্ট ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজেদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করতে আফগান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাইডেন গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, “আফগান নেতাদের একত্রিত হতে হবে। তাদের নিজেদের জন্য এবং দেশের জন্য লড়াই করতে হবে।” আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সদস্য সংখ্যা তালেবানের চেয়ে বেশি এবং তাদের যুদ্ধ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের ৬৫ শতাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় তারা দেশের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাঘলানের রাজধানী পুল-এ-খুমরির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তালেবানের হামলার মুখে পিছু হটে কেলাগি মরুভূমির দিকে সরে গেছে, যেখানে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটি বড় ঘাঁটি রয়েছে।
পুল-এ-খুমরি দখলের মধ্য দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সাতটি প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তান নিয়ে জো বাইডেন বলেন, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে এক লাখ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে ওয়াশিংটন এবং তাদের হাজার হাজার সেনা সেখানে প্রাণ দিয়েছে।
সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপ নেই জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে আফগান বাহিনীকে বিমানবাহিনীর সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং খাদ্য, সরঞ্জাম ও আফগান সেনাদের বেতনও দেওয়া হচ্ছে।
কাবুলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি জানান, তালেবানকে ঠেকাতে তিনি আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের সহায়তা চেয়েছেন, যাদের সঙ্গে বহুদিন ধরেই তার বিবাদ চলছিল। আফগানিস্তানের ‘গণতান্ত্রিক আবরণ’ রক্ষায় সাধারণ নাগরিকদের প্রতিও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এদিকে প্রাদেশিক রাজধানী আইবাকে তালেবান যোদ্ধারা সরকারি ভবনগুলোতে প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেশিরভাগ সরকারি বাহিনীকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে কর কর্মকর্তা শের মোহামেদ আব্বাস বলেন, “একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখা অথবা কাবুলে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করা। কিন্তু কাবুলও এখন আর নিরাপদ নয়।”
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ছিল, যেখানে তালেবানের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। এখন মনে হচ্ছে আগে উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণের সীমান্ত ক্রসিংগুলো দখল করে কাবুলের দিকে অগ্রসর হওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারকে পরাস্ত করতে লড়াইরত তালেবান বাহিনীর সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনাও আটকে আছে। মঙ্গলবার তালেবানের একজন মুখপাত্র আল জাজিরা টেলিভিশনকে বলেছেন তারা দোহায় শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটা ভেস্তে যেতে দিতে চান না।
গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তালেবান যোদ্ধারা বর্তমানে আফগানিস্তানের ১১টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা কাবুলে উত্তরাঞ্চল থেকে সহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ করতে চাইছে। অন্যদিকে আফগান সরকার প্রান্তিক অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিয়ে দেশের জনবহুল কেন্দ্রগুলো রক্ষার কৌশল নিয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা সীমান্তের ওপার থেকে তালেবান বাহিনীকে সরঞ্জাম ও অন্যান্য যুদ্ধ সহায়তা বন্ধে উদ্যোগী হয়। তালেবানকে সহায়তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের প্রধান গুলাম বাহাউদ্দিন জাইলানি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দেশের ৩৪টি প্রদেশের ২৫টিতেই লড়াই চলছে এবং গত দুই মাসে ৬০ হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় কাবুল অভিমুখে রয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের প্রধান মিশেল ব্যাশেলেত বলেন, যুদ্ধাপরাধ ও মনবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সরকারি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর তাদের হত্যার মতো খবরগুলো খুবই উদ্বেগজনক।
তালেবান আফগানিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মাজার-ই-শরিফের দিকেও এগোচ্ছে। এই শহরের পতন আশরাফ গনির সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
উত্তরাঞ্চলের একটি মিলিশিয়া বাহিনীর প্রধান আতা মোহাম্মদ নুর বলেছেন, ‘শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে’ তিনি শহরটি রক্ষার চেষ্টা করবেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “আমি হতাশাজনক মৃত্যুর চেয়ে মর্যাদা নিয়ে মৃত্যুকেই বেছে নেব।”
এই মাসের শেষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তালেবান বাহিনী কোনো বিদেশি সেনাকে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র বিরতিতে যেতে রাজি নয়।