নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানির ৭০টি কূপের বেশিরভাগেরই উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। দৈনিক উৎপাদন হতো ১ হাজার ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন গড়ে ২৭৫ মিলিয়ন কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু সংস্কারকাজ করলেই উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদী, মেঘনা মিলিয়ে ৪৪টি কূপের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫১ মিলিয়ন ঘনফুট থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে ৬৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সিলেট, কৈলাসটিলা-১ এবং ২, রশিদপুর, বিয়ানিবাজার গ্যাসক্ষেত্রে ১১টি কূপের উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও এখন হচ্ছে ৮৭ মিলিয়ন। বাপেক্স-এর সালদা, ফেন্সুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, সুন্দলপুর, শ্রিকাইল, বেগমগঞ্জ, রূপগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে সব মিলিয়ে কূপ রয়েছে ১৫টি। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে বাপেক্স এগুলো থেকে কিছুটা বেশি— ১৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলছে। তবে রূপগঞ্জ ক্ষেত্রের একটি কূপের উৎপাদন ক্ষমতা ৮ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও এখান থেকে গ্যাস তুলছে না কোম্পানিটি।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মকবুল ই ইলাহী বলেন, ‘পেট্রোবাংলা এবং দেশীয় কোম্পানিগুলো উদ্যোগ নিলেই ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু এই উদ্যোগ বারবার নিতে বলা হলেও নেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রের একটি কূপ থেকেই ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব। এর জন্য সেখানে একটি আড়াই কিলোমিটার ও আরেকটি তিন কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। এই হুক-আপ লাইন করা যায়নি গত চার বছরেও। এমন আরও অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে কাজের সুযোগ আছে। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এটাই মূল সমস্যা।’ জানা গেছে, কোন কোন ক্ষেত্র থেকে গ্যাসের উত্তোলন বৃদ্ধি করা সম্ভব এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্র জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হবে। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গ্যাসের উত্তোলনও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ দিন গ্যাস তোলার পর কূপগুলোয় সংস্কার করতে হয়। এতে আবার আগের মতো গ্যাস উৎপাদন করা যায়। কিন্তু দেশীয় খনিগুলোয় এই সংস্কার সময়মতো হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশে এখন প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ক্ষমতা (আমদানিসহ) তিন হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে দুই হাজার ৯৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট আমদানির কথা থাকলেও এখন ৬৮৩ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদনি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতী বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু তা দিয়ে পুরো সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। সংস্কার করাটা বাপেক্সের নিয়মিত কাজের মতো। তারা সব সময়ই করছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে নতুন কোনও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অফশোরে কোনও কাজ হচ্ছে না। অনেক এলাকায় এখনও আমরা যাইনি। সেখানে যেতে যে প্রযুক্তি ও জনবল প্রয়োজন তা নেই। বাপেক্সের একার পক্ষেও এসব করা সম্ভব নয়। সমন্বিত অ্যাকশন প্ল্যান করেই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’
দেশীয় গ্যাস খনিতে উৎপাদন কমেছে, প্রয়োজন সংস্কার
ট্যাগস :
দেশীয় গ্যাস খনিতে উৎপাদন কমেছে
জনপ্রিয় সংবাদ