পাবনা সংবাদদাতা : একদিকে প্রবহমান পদ্মা নদী। তার উপর দিয়ে ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ রেলসেতু আর লালনশাহ সেতু মিলে জোড়া সেতুর নান্দনিক সৌন্দর্য। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেডসহ দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর। আর এগুলো ঘিরেই মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র ‘স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট’। বিপুল সংখ্যক বিদেশিদের চিত্ত বিনোদন, আবাসন, মনোমুগ্ধকর অবসর সময় কাটানোর অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত দুই বছরেই দৃষ্টি কেড়েছে এই রিসোর্টটি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন নানা বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখর হয়ে ওঠে ‘স্বপ্নদ্বীপ।’ ঢাকা থেকে ১৮৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই দেখা মিলবে অভিজাত ও আধুনিকমানের এই স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের। পাবনা জেলা শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার আর ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত এই রিসোর্ট। ঈশ্বরদীর উল্লেখ্যযোগ্য সব স্থান দর্শনের জন্য রিসোর্ট থেকে রয়েছে সুন্দর ও আরামদায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে রাশিয়া, বেলারুশ, উজবেকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। রূপপুর গ্রীণসিটি, রাশিয়ান পল্লীর পাশাপাশি পাবনার কয়েকটি রিসোর্ট ও ভিআইপি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন তারা। তন্মধ্যে তাদের দৃষ্টি কেড়েছে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট।
খাইরুল গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খাইরুল ইসলামের উদ্যোগে এই স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়। ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের যাত্রা শুরু করে। ১০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা রিসোর্টটি নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর। দেশি বিদেশি বিভিন্ন নামিদামি হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টের সুযোগ সুবিধা এই রিসোর্টেও সন্নিবেশ করতে কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের প্রবেশ মুখেই রয়েছে নান্দনিক কারুকার্য। ভেতরে ঢুকতেই বালি সিমেন্টের তৈরি জাতীয় ফল কাঠাল, নান্দনিক ও শৈল্পিক আল্পনা, সুবিশাল দাবার কোট দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। প্রথম দর্শনেই নানা প্রজাতির রং বেঙের বাহারী ফুল নজর কাড়বে। বিদেশিদের মনোরঞ্জন, বিনোদন, অবসর সময় কাটানো, সাঁতার কাটার সুইমিংসহ নানা সুযোগ সুবিধার পৃথক ও নিরাপদ ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মাফিক বিদেশিদের বাইরে দেশি মানুষও এটি ব্যবহার করতে পারছেন। সুইমিংপুলে যেতে যেতে লাল-সবুজের বাসরলতা ফুলের ছোঁয়া যে কাউকে নিয়ে যাবে রোমাঞ্চকর এক জগতে। এখানে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঘ, জিরাপ, উঠপাখি, পরি, পাহাড়ি ঝর্ণা, ফুলের লাভ রিয়াক্ট, পুষ্পকুঞ্জ। এ ছাড়াও রয়েছে গেমিং জোন। গোল পৃথিবীর উপর বসে আছে জাতীয় পাখি দোয়েল। সিংহ মামা যেন হাকডাক করছে। উড়ে যায় শঙ্ক চিল। ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক নারী পুরুষের প্রতিকৃতি। জলপরি জল ছড়ানো, গ্রামীণ নারীদের কলসি কাঁখে অসাধারণ ও মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক চিত্রায়ণ, শিশুদের পড়ামুখি করতে কার্টুনের বইপড়া, গিটার হাতে গিরারিষ্ট, শিশুদের গেমিং জোনে নানা রাইড। করা হয়েছে ডলফিন ও সিংহ চত্বর। হনুমান, কুমির, নানা প্রজাতির পশুপাখি, সাপ দিয়ে বৃক্ষ সাজানো। সবমিলিয়ে আপনার মনকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। সুবিশাল মনোমুগ্ধকর রিসোর্টে রয়েছে রাত্রি যাপনের সুযোগ সুবিধা। বুফে রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবে নানা রকমের বিভিন্ন স্বাদের দেশি-বিদেশি খাবার। নান্দনিক পার্ক এরিয়ার মধ্যে রয়েছে হানিসুই রাইড, সোয়ান রাইড, কিডস জোন, সুইমিং পুল, পিকনিক স্পট। উদ্যোক্তারা জানান, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেফ দিয়ে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবার প্রস্তুত এবং প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। বাংলা, ইন্ডিয়ান, রাশিয়ান, কন্টিনেন্টাল ও চাইনিজের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। সহ¯্রাধিক মানুষ একসঙ্গে এই রিসোর্ট কাম পার্কে তাদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠান করতে পারেন। রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠার পর বিদেশি বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিসহ দেশীয় সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের পদচারণায় মুখরিত এই প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভারতীয় হাই কমিশনার, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পরিদর্শন করেছেন। তারা পরিদর্শণ বইতে তাদের অভিমত প্রকাশে সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট পরিদর্শনকালে কথা হয় রাশিয়ান, উজবেকিস্তান, বেলারুশসহ কয়েকটি দেশের নারী ও পুরুষ নাগরিকদের সঙ্গে। রাশিয়ান নাগরিক আলেক্সি বলেন, বাংলাদেশে এসে ভেবেছিলাম আরামদায়ক বিনোদন, অবসর সময় কাটানো এবং রাত্রি যাপনে আমাদের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আমাদের সকল চাহিদা প্রায় পূর্ণ করেছে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট। রাশিয়ান নারী নাগরিক নাতালিয়া বলেন, বার ও স্পা ছাড়া সব সুবিধা রয়েছে। ভালো লাগছে অবসর সময় কাটাতে পারছি। এতো সুন্দর পরিবেশ সেটা ভাবাই যায় না। উজবেকিস্তান নাগরিক আরতুন বলেন, আমরা প্রথমে এই রিসোর্টে থাকতাম। এখন রূপপুর গ্রীনসিটিতে থাকি। কিন্তু আনন্দ, বিনোদন, অবসর সময় কাটাতে এখানে আসি। সব ভালো লাগে। রিসোর্টে বেড়াতে আসা কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার জানান, পাবনা জেলায় কর্মরত থাকাবস্থায় শুনেছিলাম এই রিসোর্টের কথা। কিন্তু আসা হয়নি। হঠাৎ পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। এখানে পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন বা ভিআইপি অতিথিদের নিয়ে আসার মতো পরিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। কুষ্টিয়ার আসমা খাতুন, সাগর হোসেন, লালপুরের আব্দুল মমিন, সিরাজগঞ্জের সালমা খাতুন, সুমিতা, ঝর্ণা, পিপুল ইসলাম, পাবনা শহর থেকে আসা হাফিজুর রহমান, মিরাজুল হক, জুয়েল আহমেদ জানান, এখানে বেড়াতে এসে তারা অভিভূত। সবকিছু তাদের ভালো লেগেছে। তবে আরও কিছু নতুন নতুন রাইড, চিত্র বিনোদন, ক্যান্টিন, কিছু প্রাকৃতিক ও নান্দনিক চিত্র বিনোদন যুক্ত হলে আরও প্রাণবন্ত হবে এই রিসোর্ট কাম পার্ক। স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুনেম তাজওয়ার অহিন বলেন, এই রিসোর্ট একটি থ্রি স্টার হোটেল। এখানে সুন্দর ও বিলাস বহুল আবাসিক কক্ষ রয়েছে। রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পে ও ইপিজেডে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা ছাড়াও ভ্রমণ পিপাসু অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। তিনি আরও জানান, পাবনার মধ্যে একমাত্র আমাদের এখানেই বুফে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মাসে অন্তত চারবার বুফে করে থাকি। এ ছাড়ও যেকোনো সময় অতিথিরা এসে বুফে বাদেও আলাদা খাবার অর্ডার করতে পারেন। রাশিয়ান, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, বাঙালি সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা আমাদের কাছে আছে। রয়েছে পিকনিক স্পট। যে কেউ চাইলে এখানে পিকনিক করতে পারেন।
দৃষ্টিনন্দন বিনোদনে ‘স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট’
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ