ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন====

দুশ্চিন্তায় ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে আবার দমিয়েও রাখে

  • আপডেট সময় : ০৮:০১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: স্ট্রেস কিংবা মানসিক চাপ মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্ট্রেসের কারণে মাথাব্যথা, পেটে যন্ত্রণা, ঘুম না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, মানসিক চাপ। কিন্তু আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এর কারণে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন দেখা দেয়।

লক্ষ্য করে দেখবেন- আমরা যখন কোনো কারণে মানসিক চাপের সঙ্গে লড়াই করি, তখন কখনো কখনো চকোলেট বা পিৎজার মতো খাবার খেতে ইচ্ছা করে। মাঝে মধ্যে আবার কিছুই খেতে মন চায় না। এখন প্রশ্ন হলো, স্ট্রেস কেন আমাদের ক্ষুধার ওপর প্রভাব ফেলে এবং এ সমস্যা কীভাবেই বা কাটিয়ে উঠতে পারি আমরা?

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রাজিতা সিন্হা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্ট্রেস সেন্টার’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘কোনো কঠিন এবং বিহ্বল হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে যখন আপনার মনে হতে থাকে এখন আর কিছু করার নেই; তখন শরীর এবং মন যে প্রতিক্রিয়া দেয় সেটাই হলো স্ট্রেস।’

আমাদের চারপাশের পরিস্থিতি, উদ্বেগ এবং শরীরের পরিবর্তন। যেমন- তীব্রতর খিদে বা তেষ্টা পাওয়ার মতো ঘটনা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে সক্রিয় করে তোলে। হাইপোথ্যালামাস আমাদের মস্তিষ্কের মটরের মতো আকারের একটা ক্ষুদ্র অংশ।

রাজিতা সিন্হা জানিয়েছেন, এই ‘অ্যালার্ম সিস্টেম’ আমাদের শরীরের প্রতি কোষের ওপর কাজ করে ও অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসলের মতো হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে আমাদের হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রসঙ্গত, স্বল্পমেয়াদে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কিছু ক্ষেত্রে সহায়কও হতে পারে। আপনাকে বিপদ থেকে বাঁচতে বা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ ক্ষতিকারক হতে পারে।

ক্রনিক স্ট্রেস রয়েছে অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন, ঘুমের সমস্যা এবং ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ক্রনিক স্ট্রেসের জন্য দায়ী হতে পারে বিভিন্ন বিষয়, যেমন ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কে সমস্যা, কাজের চাপ বা অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করা ইত্যাদি।

স্ট্রেসের কারণে কেন ক্ষুধায় প্রভাব পড়ে: স্ট্রেস কখনো কখনো ক্ষুধা বা খিদে বাড়িয়ে তুলতে পারে আবার কখনো বা তা একেবারে দমিয়েও ফেলতে পারে।

মিঠু স্টোরোনি একজন নিউরো-অপথালমোলজিস্ট। ‘স্ট্রেস-প্রুফ’ এবং ‘হাইপার এফিশিয়েন্ট’-এর মতো বইও লিখেছেন তিনি। এই বিশেষজ্ঞের কথায়- আমার মনে আছে, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মনে হয়েছিল আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এখন অবশ্য আমরা জানি যে এমনটা ঘটার কারণ আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেম, পেট এবং অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে সরাসরি যোগ রয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানসিক চাপ ভেগাস নার্ভের কার্যকলাপকে দমিয়ে দিতে পারে। এই স্নায়ু ব্রেনস্টেম (মস্তিষ্কের কান্ড) থেকে পেট পর্যন্ত গিয়েছে। এর কাজ পাকস্থলী থেকে ব্রেনে সিগনাল পাঠিয়ে জানানো পেট কতটা ভরা আছে এবং শরীরের কতটা এনার্জি প্রয়োজন রয়েছে।

ক্রনিক স্ট্রেস কীভাবে খিদেকে প্রভাবিত করে: মানসিক চাপের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে লড়তে থাকলে তার প্রভাব বমি বমি ভাব বা মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অধ্যাপক রাজিতা সিন্হা ব্যাখ্যা করেছেন, আপনার শরীর যখন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়; যা ইনসুলিনকে (গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যে হরমোন) স্বল্প সময়ের জন্য কম মাত্রায় কার্যকর করে তোলে।

প্রকৃতপক্ষে গ্লুকোজ ব্যবহার হওয়ার পরিবর্তে রক্তে থেকে যায়; যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। এটা দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রেসের সঙ্গে লড়তে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ দেখা যেতে পারে যা ওজন বৃদ্ধি বা ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

উদ্বেগজনিত খাওয়া কীভাবে বন্ধ করা যেতে পারে: ডা. স্টোরোনির মতে মানসিক চাপে থাকাকালীন স্ট্রেস ইটিং বা উদ্বেগজনিত খাওয়া কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আগাম পরিকল্পনা করা যাতে ব্যস্ত সময়ে আমরা অতিরিক্ত না খেয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে মূল বিষয়গুলোও ভুলে গেলে চলবে না। যেমন ঘুম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন তিনি।

স্ট্রেস বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন ঘুমের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হতে। কারণ ঘুম মানসিক চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্ত তিনটি অঙ্গকে আবার রিসেট করে দেয়। ঘুম মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামে সেই ক্ষুদ্র অংশ, পিটুইটারি ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোকে ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনে। ফলে স্ট্রেস হরমোন তৈরি হওয়া বন্ধ হয়।

এ সময় কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: প্রফেসর সিন্হা জানিয়েছেন, মানসিক চাপে থাকলে খুব বেশি শর্করাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো জাংক ফুড কেনা বন্ধ করা। তার কথায়- এটা একটা প্র্যাক্টিক্যাল (ব্যবহারিক) বিষয়। এই সব জিনিস যেন আপনার নাগালের বাইরে থাকে। কারণ এগুলো আপনার আশেপাশে থাকলেই আপনি খেতে চাইবেন। দ্বিতীয় বিষয় হলো, সারাদিনে নিয়ম মেনে অথচ অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে খিদে এবং খাবারের আকাক্সক্ষা দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার এড়ানোও দরকার। যেমন- পিৎজা, মিষ্টি স্ন্যাকস এবং সাধারণ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এই সময় এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এই জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মটরশুঁটি, মাছ বা স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের তালিকায় মসুর ডাল, ওটস ইত্যাদি রয়েছে। এক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সীমিত অ্যালকোহল সেবন। অনেকে স্ট্রেসের কমানোর জন্য অ্যালকোহল সেবন শুরু করেন।

ডা. স্টোরোনি বলেন, যদি আপনি সেই সমস্ত মানুষের মধ্যে পড়েন যারা মানসিক চাপে পড়লে অ্যালকোহল পান করে, তাহলে বলব ওই সময় (স্ট্রেসে থাকাকালীন) মদ্যপান থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখা সবচেয়ে ভালো। এই সময় সামাজিক সম্পর্কগুলোর ওপর মননিবেশ করা দরকার বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে একদিকে যেমন খাওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় থাকে তেমনই স্ট্রেসের সময় অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াও এড়ানো যেতে পারে। স্ট্রেস এবং খাওয়ার মধ্যে যে যোগ রয়েছে, সেখানে ভারসাম্য বজায় রাখার নিজস্ব উপায় তৈরি করেছে আমাদের সমাজ। তা সে সবার সঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া হোক বা একসঙ্গে রান্না করা হোক।

সূত্র: বিবিসি

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

স্বাস্থ্য প্রতিদিন====

দুশ্চিন্তায় ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে আবার দমিয়েও রাখে

আপডেট সময় : ০৮:০১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: স্ট্রেস কিংবা মানসিক চাপ মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্ট্রেসের কারণে মাথাব্যথা, পেটে যন্ত্রণা, ঘুম না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, মানসিক চাপ। কিন্তু আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এর কারণে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন দেখা দেয়।

লক্ষ্য করে দেখবেন- আমরা যখন কোনো কারণে মানসিক চাপের সঙ্গে লড়াই করি, তখন কখনো কখনো চকোলেট বা পিৎজার মতো খাবার খেতে ইচ্ছা করে। মাঝে মধ্যে আবার কিছুই খেতে মন চায় না। এখন প্রশ্ন হলো, স্ট্রেস কেন আমাদের ক্ষুধার ওপর প্রভাব ফেলে এবং এ সমস্যা কীভাবেই বা কাটিয়ে উঠতে পারি আমরা?

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রাজিতা সিন্হা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্ট্রেস সেন্টার’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘কোনো কঠিন এবং বিহ্বল হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে যখন আপনার মনে হতে থাকে এখন আর কিছু করার নেই; তখন শরীর এবং মন যে প্রতিক্রিয়া দেয় সেটাই হলো স্ট্রেস।’

আমাদের চারপাশের পরিস্থিতি, উদ্বেগ এবং শরীরের পরিবর্তন। যেমন- তীব্রতর খিদে বা তেষ্টা পাওয়ার মতো ঘটনা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে সক্রিয় করে তোলে। হাইপোথ্যালামাস আমাদের মস্তিষ্কের মটরের মতো আকারের একটা ক্ষুদ্র অংশ।

রাজিতা সিন্হা জানিয়েছেন, এই ‘অ্যালার্ম সিস্টেম’ আমাদের শরীরের প্রতি কোষের ওপর কাজ করে ও অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসলের মতো হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে আমাদের হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রসঙ্গত, স্বল্পমেয়াদে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কিছু ক্ষেত্রে সহায়কও হতে পারে। আপনাকে বিপদ থেকে বাঁচতে বা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ ক্ষতিকারক হতে পারে।

ক্রনিক স্ট্রেস রয়েছে অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন, ঘুমের সমস্যা এবং ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ক্রনিক স্ট্রেসের জন্য দায়ী হতে পারে বিভিন্ন বিষয়, যেমন ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কে সমস্যা, কাজের চাপ বা অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করা ইত্যাদি।

স্ট্রেসের কারণে কেন ক্ষুধায় প্রভাব পড়ে: স্ট্রেস কখনো কখনো ক্ষুধা বা খিদে বাড়িয়ে তুলতে পারে আবার কখনো বা তা একেবারে দমিয়েও ফেলতে পারে।

মিঠু স্টোরোনি একজন নিউরো-অপথালমোলজিস্ট। ‘স্ট্রেস-প্রুফ’ এবং ‘হাইপার এফিশিয়েন্ট’-এর মতো বইও লিখেছেন তিনি। এই বিশেষজ্ঞের কথায়- আমার মনে আছে, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মনে হয়েছিল আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এখন অবশ্য আমরা জানি যে এমনটা ঘটার কারণ আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেম, পেট এবং অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে সরাসরি যোগ রয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানসিক চাপ ভেগাস নার্ভের কার্যকলাপকে দমিয়ে দিতে পারে। এই স্নায়ু ব্রেনস্টেম (মস্তিষ্কের কান্ড) থেকে পেট পর্যন্ত গিয়েছে। এর কাজ পাকস্থলী থেকে ব্রেনে সিগনাল পাঠিয়ে জানানো পেট কতটা ভরা আছে এবং শরীরের কতটা এনার্জি প্রয়োজন রয়েছে।

ক্রনিক স্ট্রেস কীভাবে খিদেকে প্রভাবিত করে: মানসিক চাপের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে লড়তে থাকলে তার প্রভাব বমি বমি ভাব বা মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অধ্যাপক রাজিতা সিন্হা ব্যাখ্যা করেছেন, আপনার শরীর যখন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়; যা ইনসুলিনকে (গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যে হরমোন) স্বল্প সময়ের জন্য কম মাত্রায় কার্যকর করে তোলে।

প্রকৃতপক্ষে গ্লুকোজ ব্যবহার হওয়ার পরিবর্তে রক্তে থেকে যায়; যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। এটা দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রেসের সঙ্গে লড়তে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ দেখা যেতে পারে যা ওজন বৃদ্ধি বা ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

উদ্বেগজনিত খাওয়া কীভাবে বন্ধ করা যেতে পারে: ডা. স্টোরোনির মতে মানসিক চাপে থাকাকালীন স্ট্রেস ইটিং বা উদ্বেগজনিত খাওয়া কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আগাম পরিকল্পনা করা যাতে ব্যস্ত সময়ে আমরা অতিরিক্ত না খেয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে মূল বিষয়গুলোও ভুলে গেলে চলবে না। যেমন ঘুম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন তিনি।

স্ট্রেস বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন ঘুমের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হতে। কারণ ঘুম মানসিক চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্ত তিনটি অঙ্গকে আবার রিসেট করে দেয়। ঘুম মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামে সেই ক্ষুদ্র অংশ, পিটুইটারি ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোকে ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনে। ফলে স্ট্রেস হরমোন তৈরি হওয়া বন্ধ হয়।

এ সময় কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: প্রফেসর সিন্হা জানিয়েছেন, মানসিক চাপে থাকলে খুব বেশি শর্করাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো জাংক ফুড কেনা বন্ধ করা। তার কথায়- এটা একটা প্র্যাক্টিক্যাল (ব্যবহারিক) বিষয়। এই সব জিনিস যেন আপনার নাগালের বাইরে থাকে। কারণ এগুলো আপনার আশেপাশে থাকলেই আপনি খেতে চাইবেন। দ্বিতীয় বিষয় হলো, সারাদিনে নিয়ম মেনে অথচ অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে খিদে এবং খাবারের আকাক্সক্ষা দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার এড়ানোও দরকার। যেমন- পিৎজা, মিষ্টি স্ন্যাকস এবং সাধারণ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এই সময় এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এই জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মটরশুঁটি, মাছ বা স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের তালিকায় মসুর ডাল, ওটস ইত্যাদি রয়েছে। এক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সীমিত অ্যালকোহল সেবন। অনেকে স্ট্রেসের কমানোর জন্য অ্যালকোহল সেবন শুরু করেন।

ডা. স্টোরোনি বলেন, যদি আপনি সেই সমস্ত মানুষের মধ্যে পড়েন যারা মানসিক চাপে পড়লে অ্যালকোহল পান করে, তাহলে বলব ওই সময় (স্ট্রেসে থাকাকালীন) মদ্যপান থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখা সবচেয়ে ভালো। এই সময় সামাজিক সম্পর্কগুলোর ওপর মননিবেশ করা দরকার বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে একদিকে যেমন খাওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় থাকে তেমনই স্ট্রেসের সময় অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াও এড়ানো যেতে পারে। স্ট্রেস এবং খাওয়ার মধ্যে যে যোগ রয়েছে, সেখানে ভারসাম্য বজায় রাখার নিজস্ব উপায় তৈরি করেছে আমাদের সমাজ। তা সে সবার সঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া হোক বা একসঙ্গে রান্না করা হোক।

সূত্র: বিবিসি

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ