বিশেষ সংবাদদাতা: দেশে চালের সর্বকালের সর্বোচ্চ মজুত আছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। হওয়ার কোনো চান্স নেই। যদি আল্লাহ নিজে হাতে গজব না ফেলেন। এদিকে দেশে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কৃষি উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে এসব কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী। সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমনটা ভালো হয়েছে। আমন যেখানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৬ মণ হতো, সেখানে এবার ২০ থেকে ২৫ মণ হয়েছে। তাছাড়া সামনে আবার বোরোর আবাদ। বোরোর ফলনও ভালো হবে। অতএব শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে গ্লোবালি যে মার্কেট বৃদ্ধি আছে সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকেকেও চলতে হবে। চালের এত মজুত তবুও দাম কমছে না কেন-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, চালের দাম যাদের জন্য অসহনীয় তাদের জন্য ওএমএস, খাদ্যবান্ধব ভিজিডি, ভিজিএফ আছে। অতএব শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সবাই ভালো আছে। তবে খাদ্যের অপচয় যেন রোধ হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ অনেক বিয়ে বাড়িতে ১৫ থেকে ২০ পারসেন্ট খাবার নষ্ট হয়। এগুলো রোধ করতে হবে। দেশে যে পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে, এতে করে এবার শতকরা ৩০ ভাগ ভোজ্য তেল সরিষা থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী। চলতি বছরে বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সে বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম বাড়লে আপানরা তা নিয়ে কথা বলে যান। কমলে আর বলেন না। খটকা লাগে এখানে। একটি পত্রিকা প্রথম পাতায় লিখেছে, চালের দামে অস্থিতিশীল, আবার ছয় নম্বর পাতায় দেখলাম লিখেছে, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। তাহলে আমরা যাব কোন দিকে?
‘এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য দরকার। কৃষকদের বাঁচতে হবে। আবার ভোক্তা পর্যায়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকতে হবে। আমরা দুই হাজার ১৯টি ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস চালু করেছি; যা সারাবছর চলছে। আগে তিন মাস চলত। সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, তারপর ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে খাদ্যবান্ধব চাল দিচ্ছি। ২৪ টাকা কেজিতে আটা দিচ্ছি। আমনের আগে খরা হবে বলে আমরা মনে করেছিলাম, কিন্তু এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সংগ্রহ ভালো হয়েছে। আমাদের এখন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মজুত। প্রায় ১৯ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল সরকারি মজুতে। যা আগে কোনোদিন ছিল না।
দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ: দেশে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কৃষি উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে বলে জানিয়ে ডিসি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে ধান, গম, ভুট্টাসহ ৪ কোটি ৭০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন করছি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন, যা বর্তমানে চারগুণ বেড়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ, পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা। দেশের মানুষ পুষ্টিকর খেতে পারে না। তবে সবকিছুরই উৎপাদন বেড়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে আমাদের সবজি উৎপাদন ছিল ৩ মিলিয়ন টন, যা এখন ২২ মিলিয়ন টন। সবজি উৎপাদন বেড়েছে সাতগুণ। কিন্তু মানুষের আয় না বাড়লে মানুষ এগুলো গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, যেন কৃষকদের আয় বাড়ে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাই। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। সবকিছু কৃষিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষির অবদান সবসময়ই থাকবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনবার ক্ষমতায় এসেছি। জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যের দাম কমানোর। আমরা এখন সেই চেষ্টা করছি। মন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি আর গরু-ছাগল দিয়ে হবে না, কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করতে হবে। কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আমরা নতুন নতুন বীজ উৎপাদন করছি। আমাদের নতুন একটি ধান বীজ উৎপাদন করছি, যা থেকে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩২ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব।
দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা নেই
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ