লাইফস্টাইল ডেস্ক: সনাতন ধর্মের মানুষদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ পোশাক। তবে পূজা-পার্বনে নারীদের কাছে শাড়ির কদর সবসময়ই বেশি। শাড়ির সঙ্গে বঙ্গনারীর রয়েছে মনের যোগ। শাড়ি মানেই বাঙালি নারীর আবেগ। তাই ষষ্ঠী থেকে দশমীতে ভিন্ন ভিন্ন শাড়ি পরার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন অনেকে। লাল পাড়ের সাদা শাড়ির সঙ্গে আলতা রাঙানো পা ও সিঁদুরের রক্তিম ছোঁয়া পূর্ণ করবে পূজার সাজ।
ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত নারীরা নানা ডিজাইনের শাড়ি পরে থাকেন। ষষ্ঠীতে হালকা রঙের তাঁতের শাড়ির সঙ্গে হাতে কয়েক গোছা একরঙা চুড়িতে তুলে আনেন পূজার আমেজ। সপ্তমীতে সিল্ক, অ্যান্ডি, তসরের শাড়িতে আসে দুর্গাপূজার আমেজ। অষ্টমী বা নবমীর সকালের অঞ্জলিতে লাল-সাদা শাড়ি দুর্গাৎসবে আলাদা আবেদন তৈরি করে। জামদানির বিভিন্ন নকশার কারুকাজ এ উৎসবের জাঁকজমকে বাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে শাড়ির পাড় বা ব্লাউজে থাকা সোনালি জরির কাজ অন্য রকম আলো ছড়ায়। অনেকেই আবার নকশিকাঁথা বা হাতে তৈরি শাড়ি বেছে নেন ব্যতিক্রম দেখাতে।
শাড়িতে রং
পূজার পোশাকে রঙের ভূমিকা গুরুত্বপুর্ণ। ধুনুচি নাচ, আরতি কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মুহূর্তে ঝলমলে, উজ্জ্বল ও গাঢ় রং শাড়িতে বেশ ভালো মানাবে। সন্ধ্যার উৎসবকে প্রাণবন্ত তুলবে লাল, মেরুন, সোনালি, নীল, সবুজ শাড়ি। শুধু কি তাই! এমন বর্লিণ ঝলমলে রঙের শাড়ি মানেই দারুণ কিছু ছবি, যা স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে যুগের পর যুগ।
ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জানান, তার প্রতিষ্ঠান বিশ্বরঙ সব সময়ই ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারো পূজায় বিভিন্ন রকম শাড়ি নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। শাড়িতে শারদীয় আয়োজনকে সুন্দর করতে মন্দির, পূজামন্ডপ, মধুবনী, দেবী ও দেবীর অলংকার, মুকুট, দেবীর নান্দনিক রূপের সঙ্গে গ্রাফিক্যাল জ্যামিতিক ফর্মের সমন্বয়ে দুর্গা মোটিফ, মন্ত্র ও আলপনাকে থিম হিসেবে নিয়েছেন। গরমের কথা মাথায় রেখে কাপড় হিসেবে সুতি, লিনেন, ভিসকস হাফসিল্ক, জয়সিল্ক, সিফন, জর্জেট ও সিল্কে উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তুলেছেন।
রঙের ক্ষেত্রেও কোনো আপোশ করেননি তিনি। লাল, সাদা, নীল, পিচ, কমলা, হলুদ, ব্রাউন, লাইট অলিভ, ফিরোজা, গেরুয়াসহ বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের শাড়ি বানিয়েছেন। সেসবে রয়েছে হাতের কাজ, চুনরি, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, অ্যাপলিক, প্যাচওয়ার্ক, কারচুপি।
তরুণীদের শাড়ি
তরুণীরা উজ্জ্বল রঙের শাড়ি বেছে নেন দেবীপূজার উচ্ছ্বাসের প্রতীক হিসেবে। শাড়িকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে বেল্ট, জ্যাকেট বা ভিন্নধর্মী ব্লাউজের মাধ্যমে পরতে পারেন। যা ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি আরামও নিশ্চিত করবে। এছাড়া ঐতিহ্যের সৌন্দর্য ধরে রেখে শাড়িতে আলাদা মাত্রা যোগ করবে।
মেয়ে শিশুর শাড়ি
সবাই শাড়ি পরলে বাড়ির ছোট্ট সদস্য শাড়ি পরবে না? তা হবে না। তাদের কথা মাথায় রেখে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো বিভিন্ন আকারের রেডিমেড শাড়ি ডিজাইন করছে। যা ছোটদের সহজে পরানো যায়। সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের মেয়ে শিশুরা অনায়াসে এসব শাড়ি পরতে পারবে।
দাম
প্রায় সব রকম আয়ের মানুষের জন্য শাড়ি বানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁতের শাড়ি পাওয়া যাবে ৭০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। হাফসিল্কে শাড়ির দাম বুনন ও নকশাভেদে ১২০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা। কাতান শাড়ির দাম ৪০০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের সিল্ক পাবেন ২০০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায়। এছাড়া বেনারসি পাবেন ৫০০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়। জামদানি ২৫০০ টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। তবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি শাড়িটি কোথা থেকে কিনছেন।
কোথায় পাওয়া যাবে
শারদীয় দুর্গাপূজায় শাড়ি কিনতে চাইলে ঢাকার নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল কিংবা জামদানির জন্য নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের বাজারে যেতে পারেন। যারা অনলাইনে কিনতে চান তাদের জন্য অথবা ডটকাম, দারাজ, আজকের ডিল, প্রিয়শপ ইত্যাদি। নিজ নিজ এলাকার স্থানীয় মার্কেটেও পাওয়া যেতে পারে পূজার শাড়ি। দেশে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন ব্র্যান্ড, আড়ং, লা রিভ, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশসহ প্রায় সবাই পূজার জন্য বিশেষ শাড়ি বানিয়েছে।
এসি/আপ্র/১৭/০৯/২০২৫