ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

দুর্গার আবাহনে দেবীপক্ষের শুরু

  • আপডেট সময় : ০২:০৮:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাতৃত্ব ও শক্তির প্রতীক দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে শুরু হল শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
গতকাল রোববার ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারাদেশে ম-পে-ম-পে চ-ীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বান জানালেন ভক্তরা। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া; সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রোববার ভোরে ঢাকের বোলে চ-ি পাঠে শুরু হয় সেই মহালয়ার পর্ব। প্রথমে চ-ীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন ম-ল বলেন, “ভোর ৬টা থেকে সকাল ৭টাটা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া সকাল ৯টায় পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল তর্পণ এবং সাড়ে ৯টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা করা হয়েছে।“
মহালয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হল তর্পণ শ্রাদ্ধ। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন। এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন।
বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিনয় জর্জ এবং প্রথম সচিব (রাজনৈতিক ও তথ্য) অনিমেষ চৌধুরী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতার সময়। ঢাকেশ্বরী ছাড়াও রাজধানীর স্বামীবাগ ও বনানীসহ বিভিন্ন ম-পে আহ্বান জানানো হয় দেবীকে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য বলেন, “আজ সারাদিনে আর বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। এখন ষষ্ঠী পূজার জন্যই অপেক্ষা।”
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন রোববার সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার। অষ্টমী ও নবমী শেষে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। ঢাকেশ্বরীর প্রধান পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য বলেন, এবারে দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন গজের পিঠে চেপে, ফিরবেন নৌকায়।
হিন্দু শাস্ত্র বলছে, “রবৌ সোমে গজরূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়ৌঃ। দোলায়ঞ্চ গুরৌ শুক্রে, নৌকায়ং বুধবাসরে।”
অর্থাৎ, দুর্গার গমনাগমন যদি রবি বা সোমবার হয়, তাহলে তার বাহন হয় গজ বা হাতি। আবার শনি বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। কিন্তু বৃহস্পতি বা শুক্রবার যদি দুর্গার গমনাগমন ঘটে তাহলে তিনি দোলায় বা পালকিতে যাতায়াত করেন। আর সেটা বুধবার হলে তার বাহন হয় নৌকা। সপ্তমী এবার রোববার হওয়ায় দুর্গা আসবেন হাতিতে চড়ে, আর বুধবার দশমীতে কৈলাসে দেবালয়ে ফিরবেন নৌকায় করে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দ্ইু বছর দুর্গাপূজা হয়েছে সীমিত পরিসরে, এবার এ আয়োজনে ফিরছে উৎসবের রঙ। সারাদেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮ টি ম-পে পূজা উদযাপন হবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। তবে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। দেশের প্রতিটি ম-পে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্গার আবাহনে দেবীপক্ষের শুরু

আপডেট সময় : ০২:০৮:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাতৃত্ব ও শক্তির প্রতীক দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে শুরু হল শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
গতকাল রোববার ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারাদেশে ম-পে-ম-পে চ-ীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বান জানালেন ভক্তরা। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া; সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রোববার ভোরে ঢাকের বোলে চ-ি পাঠে শুরু হয় সেই মহালয়ার পর্ব। প্রথমে চ-ীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন ম-ল বলেন, “ভোর ৬টা থেকে সকাল ৭টাটা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া সকাল ৯টায় পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল তর্পণ এবং সাড়ে ৯টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা করা হয়েছে।“
মহালয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হল তর্পণ শ্রাদ্ধ। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন। এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন।
বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিনয় জর্জ এবং প্রথম সচিব (রাজনৈতিক ও তথ্য) অনিমেষ চৌধুরী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতার সময়। ঢাকেশ্বরী ছাড়াও রাজধানীর স্বামীবাগ ও বনানীসহ বিভিন্ন ম-পে আহ্বান জানানো হয় দেবীকে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য বলেন, “আজ সারাদিনে আর বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। এখন ষষ্ঠী পূজার জন্যই অপেক্ষা।”
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন রোববার সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার। অষ্টমী ও নবমী শেষে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। ঢাকেশ্বরীর প্রধান পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য বলেন, এবারে দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন গজের পিঠে চেপে, ফিরবেন নৌকায়।
হিন্দু শাস্ত্র বলছে, “রবৌ সোমে গজরূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়ৌঃ। দোলায়ঞ্চ গুরৌ শুক্রে, নৌকায়ং বুধবাসরে।”
অর্থাৎ, দুর্গার গমনাগমন যদি রবি বা সোমবার হয়, তাহলে তার বাহন হয় গজ বা হাতি। আবার শনি বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। কিন্তু বৃহস্পতি বা শুক্রবার যদি দুর্গার গমনাগমন ঘটে তাহলে তিনি দোলায় বা পালকিতে যাতায়াত করেন। আর সেটা বুধবার হলে তার বাহন হয় নৌকা। সপ্তমী এবার রোববার হওয়ায় দুর্গা আসবেন হাতিতে চড়ে, আর বুধবার দশমীতে কৈলাসে দেবালয়ে ফিরবেন নৌকায় করে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দ্ইু বছর দুর্গাপূজা হয়েছে সীমিত পরিসরে, এবার এ আয়োজনে ফিরছে উৎসবের রঙ। সারাদেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮ টি ম-পে পূজা উদযাপন হবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। তবে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। দেশের প্রতিটি ম-পে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।