পাবনা সংবাদদাতা: পাবনার ঈশ্বরদীতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হতদরিদ্রদের সরকারি অনুদান দেওয়া হবে এমন আশ্বাসে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল দাশপাড়া গ্রামের অন্তত ৩৬টি পরিবার থেকে এ টাকা নেয় প্রতারক চক্র।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা সরকারি অনুদান পাওয়ার আশায় সরল বিশ্বাসে দেওয়া টাকা ফেরত পেতে চাইছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচয়ে অপরিচিত একজন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সূনীল চক্রবর্তীর মুঠোফোনে প্রতিটি মন্দির এলাকায় পাঁচ জন হতদরিদ্র পরিবারের জন্য অনুদান বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান। সুনীল চক্রবর্তী বাঘইল দাশপাড়া গ্রামের শ্রী শ্রী বারোয়ারি মাতৃ মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী পলাশ চন্দ্রকে জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে পূজা উপলক্ষে হতদরিদ্রদের নগদ ৪২০০ টাকা, চাল, ডাল তেলসহ বেশ কিছু সরকারি অনুদান দেওয়া হবে। মন্দির এলাকার পাঁচজন বাসিন্দার জন্য বরাদ্দকৃত অনুদান গ্রহণ করতে উপজেলা পরিষদের একটি মোবাইল নম্বর প্রদান করে সেই নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে আরো কিছু অনুদান দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার’ সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয় পলাশ চন্দ্রকে।
সেই প্রতারক চক্রের কথা অনুযায়ী ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার’ সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলা হয় বাড়তি অনুদান নিতে হলে জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে দিতে হবে। পলাশ চন্দ্র নিজ এলাকার অন্যান্য দরিদ্র বাসিন্দাদের সঙ্গে অনুদানের ব্যাপারে কথা বললে ৩৬টি পরিবারের নিকট থেকে মোট ২১ হাজার ৬০০ টাকা তুলে বিকাশের মাধ্যমে পাঠান। পরদিন ওই নম্বর থেকে পলাশ চন্দ্রকে জানানো হয় ১১ সেপ্টেম্বর সরকারি অনুদানের গাড়ি যাবে। কিন্তু কয়েকদিন অপেক্ষা করলেও কোনো অনুদান আসেনি। যে নম্বরে অনুদানের জন্য টাকা পাঠানো হয়েছিল সে নম্বরটিও বন্ধ।
ভুক্তভোগী শ্রী জয় চন্দ্র দাশ, ভারতী রাণী ও পারুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যারা বাঘইল দাসপাড়া মহল্লায় বসবাস করি তারা খুবই দরিদ্র। কেউ জুতা সেলাই, রিকশা চালানো ও মাছ ধরার মতো নিম্নআয়ের পেশায় জড়িত। দুর্গাপূজা উপলক্ষে অনুদান দেওয়ার কথা বলে ৩৬ জনের কাছে থেকে প্রতারকরা ৬০০ টাকা করে নিয়েছে। আমাদের অনেকের ৬০০ টাকা আয় করতে দুইদিন সময় লেগে যায়। অনুদান না পেলেও আমরা আমাদের নিজেদের টাকা ফেরত পেতে চাই।
বাঘইল দাশপাড়া শ্রী শ্রী বারোয়ারি মাতৃমন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী পলাশ চন্দ্র বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী আমাকে মুঠোফোনে ৫ জনের নামে অনুদান বরাদ্দ হয়েছে জানিয়ে উপজেলা পরিষদে যোগাযোগের একটি নম্বর দিলে সেখানে যোগাযোগ করি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেই অনুদান নিতে সরল মনে ৩৬ জনের থেকে ২১ হাজার ৬০০ টাকা তুলে বিকাশে পাঠাই। টাকা দেওয়ার পর থেকে ওই নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছি। এদিকে সূনীল চক্রবর্তীর সঙ্গেও কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সূনীল কুমার দাশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচয় দিয়ে অনুদানের কথা জানালে আমি দরিদ্রদের কথা ভেবে তাদের নম্বরটি দিয়েছি। কিন্তু বুঝতে পারিনি এটা প্রতারক চক্র। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি চলছে। দেখা যাক কি হয়?
ঈশ্বরদী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, দুর্গাপূজাতে কোনো অনুদান দেওয়া হচ্ছে না। আর সমাজসেবা কার্যালয় থেকে কাউকে ফোনও করা হয়নি। এটি প্রতারক চক্রের কারসাজি হতে পারে। সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান করছি।
এসি/আপ্র/২০/০৯/২০২৫