ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দুবাইয়ে বসুন্ধরা পরিবারের ফ্ল্যাট জব্দ, যুক্তরাজ্যে ৬ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ

  • আপডেট সময় : ০৯:০০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

দুবাইয়ে বসুন্ধরা পরিবারের ফ্ল্যাট জব্দ, যুক্তরাজ্যে ৬ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সবচেয়ে বড় আবাসন কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানির বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় একটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হোসেন এ বিষয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

আকবর সোবহানের ছেলে ও বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামে যুক্তরাজ্যে স্লোভাকিয়ান কোম্পানি ক্যালকাট্রুনিক হোল্ডিংয়ে ৫ হাজার ইউরো বিনিয়োগ, যুক্তরাজ্যে স্লোভাকিয়ান কোম্পানি জিএজিএজিইউজিইউতে ৫ হাজার ইউরো বিনিয়োগ, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি ওয়ার্ল্ডেরা কর্পোরেশন লিমিটেডে ১ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি এএসডব্লিউএ হোল্ডিংস লিমিটেডে ৫ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করতে বলা হয়েছে আদেশে।

আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহানের নামে যুক্তরাজ্যে ইউরোএশিয়া টেলিভিশন নেটওয়ার্ক লিমিটেডে ৫ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ, আনভীরের ভাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাফওয়ান সোবহান তাসভীরের নামে যুক্তরাজ্যে গ্লোবাল মাল্টি ট্রেড লিমিটেডের বিনিয়োগও অবরুদ্ধ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ১১ নম্বর ফ্লোরে আনভীরের নামে থাকা ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলছে।

তাদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, হস্তান্তর ও অর্থ রূপান্তরের মত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন নথি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রধান সন্দেহভাজন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী আফরোজা বেগম, ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, আরেক ছেলে সাদাত সোবহানের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান, ছেলে সাফিয়াত সোবহান, সাফওয়ান সোবহান ও তার স্ত্রী ইয়াশা সোবহানসহ সবাই এই অপরাধের সাথে জড়িত।

তারা অপরাধের বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে এবং সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদক বলছে, ওই পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তাদের কোম্পানির নামে বিপুল অংকের ঋণ নিয়েছেন। ঋণের একটি অংশ বাংলাদেশের বাইরে ‘অবৈধভাবে পাচার’ করা হয়েছে এবং তারা স্লোভাকিয়া, দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তারা বাংলাদেশের বাইরে যে কোনো মূলধন স্থানান্তরের পূর্বানুমতি পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে বাধ্য। কিন্তু দেখা গেছে তাদের পূর্বানুমতি নিয়ে আবেদন করা হয়নি।

বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তারা আইনগতভাবে তাদের আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের আয়কর বিভাগে তাদের সমস্ত আইনগত আয় এবং সম্পত্তি ঘোষণা করতে বাধ্য। কিন্তু কোম্পানি ও প্রকৃত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ দেখাননি। এবং এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে তারা অপরাধের অর্থ ব্যবহার করে সেই সম্পত্তিগুলিতে বিনিয়োগ করেছে।

গতবছরের অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করারআদেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

এছাড়া সিআইডি দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত জানায় গত সেপ্টেম্বরে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আইন-বিবেক অনুযায়ী ডিসিদের কাজ করার নির্দেশনা আইন উপদেষ্টার

দুবাইয়ে বসুন্ধরা পরিবারের ফ্ল্যাট জব্দ, যুক্তরাজ্যে ৬ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ

আপডেট সময় : ০৯:০০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সবচেয়ে বড় আবাসন কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানির বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় একটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হোসেন এ বিষয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

আকবর সোবহানের ছেলে ও বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামে যুক্তরাজ্যে স্লোভাকিয়ান কোম্পানি ক্যালকাট্রুনিক হোল্ডিংয়ে ৫ হাজার ইউরো বিনিয়োগ, যুক্তরাজ্যে স্লোভাকিয়ান কোম্পানি জিএজিএজিইউজিইউতে ৫ হাজার ইউরো বিনিয়োগ, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি ওয়ার্ল্ডেরা কর্পোরেশন লিমিটেডে ১ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি এএসডব্লিউএ হোল্ডিংস লিমিটেডে ৫ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করতে বলা হয়েছে আদেশে।

আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহানের নামে যুক্তরাজ্যে ইউরোএশিয়া টেলিভিশন নেটওয়ার্ক লিমিটেডে ৫ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ, আনভীরের ভাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাফওয়ান সোবহান তাসভীরের নামে যুক্তরাজ্যে গ্লোবাল মাল্টি ট্রেড লিমিটেডের বিনিয়োগও অবরুদ্ধ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ১১ নম্বর ফ্লোরে আনভীরের নামে থাকা ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলছে।

তাদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, হস্তান্তর ও অর্থ রূপান্তরের মত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন নথি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রধান সন্দেহভাজন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী আফরোজা বেগম, ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, আরেক ছেলে সাদাত সোবহানের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান, ছেলে সাফিয়াত সোবহান, সাফওয়ান সোবহান ও তার স্ত্রী ইয়াশা সোবহানসহ সবাই এই অপরাধের সাথে জড়িত।

তারা অপরাধের বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে এবং সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদক বলছে, ওই পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তাদের কোম্পানির নামে বিপুল অংকের ঋণ নিয়েছেন। ঋণের একটি অংশ বাংলাদেশের বাইরে ‘অবৈধভাবে পাচার’ করা হয়েছে এবং তারা স্লোভাকিয়া, দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তারা বাংলাদেশের বাইরে যে কোনো মূলধন স্থানান্তরের পূর্বানুমতি পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে বাধ্য। কিন্তু দেখা গেছে তাদের পূর্বানুমতি নিয়ে আবেদন করা হয়নি।

বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তারা আইনগতভাবে তাদের আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের আয়কর বিভাগে তাদের সমস্ত আইনগত আয় এবং সম্পত্তি ঘোষণা করতে বাধ্য। কিন্তু কোম্পানি ও প্রকৃত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ দেখাননি। এবং এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে তারা অপরাধের অর্থ ব্যবহার করে সেই সম্পত্তিগুলিতে বিনিয়োগ করেছে।

গতবছরের অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করারআদেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

এছাড়া সিআইডি দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত জানায় গত সেপ্টেম্বরে।