বিশেষ সংবাদদাতা : বাজারমূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চিনি, মশুর ডাল, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজ কিনতে এসে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছেনা ভুক্তভোগী ক্রেতা-ভোক্তাদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, জোহরের নামাজের আজান ভেসে আসলেও টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের দেখা নেই। গতকাল সোমবার আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে ফুটপাতের চিত্র এটি। রাজধানীর পুরান ঢাকার শহীদনগরের বাসিন্দা ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ শুক্কর আলী বলেন, ‘গাড়ি আহনের নির্দিষ্ট টাইম নাই। কোনো দিন ১০টায়, কোনো দিন দুপুরে। এ বয়সে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে কষ্ট অয়। কিন্তু কী করুম, তাই দেরিতে আইয়া চেষ্টা করি।’ পাশেই লাইনে অপেক্ষমাণ এক যুবক বার বার রাস্তার দিকে তাকিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে কি না তা দেখছিলেন। কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা পেশায় রিকশাচালক মনসুর মিয়া বলেন, ‘রিকশা রাইখ্যা এক ঘন্টারও বেশি টাইম ধইরা ট্রাকের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়াইয়া রইছি। কিন্তু গাড়ির দেখা নাই।’ তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের যা দাম, সারাদিন রিকশা চালাইয়া ৫০০ টাকা রোজগার করলেও বাজারে গেলে এ টাকায় বলতে গেলে কিছুই কেনা যায় না। তাই প্রায়ই লাইনে দাঁড়াইয়া টিসিবির পণ্য কিনতে বাধ্য অই।’ বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামে ১১০ টাকায় তেল কিনতে পারলে বাকি টাকা দিয়া দুই কেজি চাল কিনতে পারেন বলে জানান তিনি। এদের মতো শতাধিক আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। ট্রাকে এলে এবং লাইনে সামনে থাকলে পণ্য পান। বেশি পেছনে লাইনে থাকলে অনেক সময় ফিরেও যেতে হয় বলে জানান অপেক্ষারতরা। তারা জানান, টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৬০ টাকায়, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকায় এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারেন। একজন ক্রেতা সর্বনি¤œ দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। আজিমপুরে দেখা গেছে, অসংখ্য নারী ও পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাক না এলেও লাইনে আগে-পিছে দাঁড়ানো নিয়ে ঝগড়া করছেন অনেকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী সাজু আক্তার জানান, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। তবুও পেটের দায়ে একটু সস্তায় পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, টিসিবির ট্রাক আসার একটা নির্দিষ্ট সময় বলে দিলে কষ্ট কম হতো। এছাড়া গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে মালের পরিমাণও বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়।
অনেকে জানান, কেউ কেউ বিশেষ করে কিছু নারী সংঘবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনেন। তারা এখান থেকে পণ্য কিনে বেশি দামে মার্কেটে বা মুদি দোকানে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ তাদের।
দুপুরেও দেখা নেই টিসিবি গাড়ির
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ