বিশেষ সংবাদদাতা : নতুন করে দুধের দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তাদের অনেকে। দুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে বেশি দামে দুধ কেনা, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, বাড়তি পরিবহন খরচ আর কাঁচামালসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় দুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরলে সাধারণ ক্রেতাদের দুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। গে-ারিয়া এলাকায় সালমান স্টোরে প্যাকেটজাত তরল দুধের বিভিন্ন ব্রান্ডের দাম জিজ্ঞেস করছিলেন আব্দুর রহিম নামে একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, ‘ফার্মফ্রেশ, প্রাণ, আড়ং, মিল্ক ভিটার এক লিটার প্যাকেটজাত দুধের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে। কদিন আগেও এর গায়ের দাম ছিল ৭০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে নেওয়া হতো ৬৫ টাকা। হাফ লিটারের দাম রাখা হতো ৩৫ টাকা। দুধ কিনতে এসে জানতে পারলাম এর দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ক্রেতা বলেন, ‘আমরা পরিবারে যারা বড়রা আছি তারা তো অনেক আগেই দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। শুধু বাচ্চাদের একটু আধটু দুধ খাওয়াই। এখন বাচ্চাদের খাবার দুধেও টান পড়বে। তাদেরকেও সপ্তাহে দুধ খাওয়ার পরিমাণ কমায়ে দিতে হবে। এছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখছি না।’
সালমান স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১০ দিন হলো সব ধরনের তরল দুধের দাম ৮০ টাকা হয়েছে। তবে যারা এক লিটার কেনেন তাদের আমরা ৭৫ টাকাতেই বিক্রি করি। অনেকে ৮০ টাকাই বিক্রি করছে।’ তবে কী কারণে দাম বেড়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।
রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা ইয়াসমিন আরা চন্দনা বলেন, ‘দুধের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। সবকিছুর দাম বেড়েছে, এগুলো দেখাদেখিতে পানি আর দুধের দামও বাড়ানো হলো। এটি ব্যবসায়ীদের একটি পলিসি। অন্যদিকে যাই কিছু বাড়ুক না কেন? সেটির তো কোনো মনিটরিং সিস্টেম আমাদের নেই। মনিটরিং সিস্টেম না থাকার কারণে যে যেভাবে পারছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ শুধু দুধ নয় ভোক্তা পর্যায়ে পানির দাম কী কারণে বাড়ল সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন ওই নারী। এদিকে প্রান্তিক খামারি যাদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয় তারা বলছেন, আগে ৫০ টাকায় দুধ কিনত বিভিন্ন কোম্পানির পয়েন্টগুলো। এখন সেখানে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। তার মানে আগের চেয়ে লিটারে দাম ১০/১২ টাকা কমে গেছে।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল এলাকার প্রান্তিক খামারি রাহেলা বেগম বলেন, ‘ইদের আগেও ৫০ টাকায় দুধ সংগ্রহ করতো প্রাণ। অথচ ইদের পর লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা দিচ্ছে।’ তবে তিনি একজন মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে দুধ প্রাণের পয়েন্টে পাঠান। সেই মধ্যস্বত্বভোগীরা টাকা মেরে দিচ্ছেন কিনা সেটি বলতে পারছেন না তিনি।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের খামারি আব্দুল মতিন বলেন, ‘প্রতিদিন ৪৫ লিটার দুধ মিল্কভিটায় দিয়ে আসি। সেখানে ৪৫ টাকা লিটারে দুধের দাম পরিশোধ করা হচ্ছে। দুধের ফ্যাটের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে দাম। বাজারে শুনছি, মিল্কভিটার এক লিটার দুধের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে। অথচ আমরা দাম পাচ্ছি ৪৫ টাকা লিটার।’
দুধের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, প্রান্তিক খামারিদের ৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া সব প্রতিষ্ঠানই দুধের দাম বৃদ্ধি করেছে। সবাই বাড়িয়েছে আমরা পোষাতে পারছি না, তাই দুধের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে।’ প্রান্তিক খামারিরা এখন লিটার প্রতি কত টাকা পাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুধের ফ্যাটের ওপর নির্ভর করে ওই খামারি কত টাকা পাবেন। ফ্যাটের পরিমাণ ৪ হলে ৪৫ টাকা, সাড়ে ৪ হলে ৪৭ বা ৪৮ টাকা পেয়ে থাকেন। ফ্যাট ৪ এর নিচে হলে আরও কম টাকা পাবেন। বেশির ক্ষেত্রে দুধের ফ্যাটের পরিমাণ ৪ হয়ে থাকে।’
মিল্কভিটার এমডি আরও বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধিসহ নানাবিধ ইস্যুতে খামারিরা বেশ কিছু দিন ধরে দুধের দাম বৃদ্ধির দাবি করে আসছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রান্তিক খামারিদের ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে আমরাও ১০ টাকা বাড়িয়েছি। এক লিটার তরল দুধের দাম আগে ৭০ টাকা ছিল এখন ৮০ টাকা করা হয়েছে। তবে এই দাম খুচরা বিক্রেতাদের জন্য। তার আগে পাইকারি পর্যায়ে আগে ৬০ টাকা নেওয়া হতো এখন ৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
দুধের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ