নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পাওনা বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি রিট আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।
শরীফের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। স্থায়ী চাকরিজীবী হওয়ার পরও তিন মাসের বেতন দিয়ে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার চাকরিচ্যুতির আদেশের বিরুদ্ধে আমরা যে রিট করেছি তাতে যে রুল জারি করেছিল, সেই রুলে বুধবার চূড়ান্ত শুনানি হয়েছে এবং শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তার জ্যেষ্ঠতাসহ সকল বেনিফিটসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ এর ২ ধারায় যে বরখাস্ত আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ধরে নেওয়া হবে যে তিনি সবসময় চাকরিতে বহাল ছিলেন।
এ আইনজীবী বলেন, ১৩০টির মত মামলা তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল শরীফ উদ্দিনকে। তার ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে তিনি ১৩০টির মত মামলা তদন্ত করেন। কীভাবে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্তদের ভূমি না দিয়ে কারা কারা ভূমি আত্মসাৎ করেছিল তা নিয়ে তিনি তদন্ত শেষে ৬২০ পাতার রিপোর্টে দাখিল করেছিলেন।
অ্যাডভোকেট দোলন বলেন, ওই রিপোর্ট দিয়ে তিনি ভেবেছিলেন এই কাজের জন্য যে জমি আত্মসাৎ করা হয়েছিল সে জমি ফেরত পাবে, যারা আত্মসাৎ করেছিল তাদের সাজা হবে এবং তিনি এ কাজের জন্য স্বীকৃতি পাবেন।
কিন্তু এ রিপোর্ট দেওয়ার পর তার ওপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। তাকে একের পর এক শোকজ করা হয়। তারপর বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তার চাকরি চলে যায়। ২০২২ সালের ১৩ মার্চ চাকরি ফেরত চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মো. শরীফ উদ্দিন। চাকরি হারানোর পর শরীফকে দোকানের চাকরি করতে হয় বলেও তার আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন জানান। দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি অনুযায়ী ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। সে সময় বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
শরীফকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার এবং ৫৪(২) বিধি বাতিলের দাবিতে তার সহকর্মীরা দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ কমিশনের অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধন করেন, যা নজিরবিহীন। এরপর চাকরি ফেরত চেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেন শরীফ। দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা-২০০৮ এর ৪৮ বিধি অনুযায়ী অপসারণের আদেশ পুনঃনিরীক্ষা করে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার করার আর্জি জানানো হয় সেখানে। কিন্তু দুদক সেই আবেদন নাকচ করে দেয়। তার আগে শরীফকে চাকরি থেকে অপসারণের কারণ ব্যাখ্যা করে দুদকের তরফে বলা হয়, শরীফের বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলা বহির্ভূত’ কর্মকা-ের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও দপ্তর থেকে নানা অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তিনি দুদকের নির্দেশিকা অনুসরণ না করে ‘নিজের খেয়ালখুশি মত’ কাজ করতেন। মানুষকে নোটিস বা টেলিফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে তিনি ‘হয়রানি’ করতেন।
দুদক বলে, অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ বা নো ডেবিট’ করার প্রয়োজন হলে শরীফ ‘আইন মানতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতেন না’। কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের কাছ থেকে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে এক বছর ৪ মাস তিনি নিজের হেফাজতে রাখেন।
প্রভাব খাটিয়ে’ ভাই ও আত্মীয়কে চাকরি দেওয়া এবং চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে পটুয়াখালীতে যাওয়ার পর ‘চাঁদাবাজি’ করার অভিযোগের কথাও বলা হয় দুদকের তরফে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শরীফ সে সময় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেন, যাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলার সুপারিশ করেছেন, তাদের অভিযোগেই তাকে কমিশন থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে ‘যাচাই-বাছাই না করে’। অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ‘আপস’ করলে এতকিছু ‘হত না’।