নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে করা সিআইডির মামলা আবারো তদন্তে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার অভিযোগ গঠনের অবশিষ্ট শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগপত্রের তথ্যের সমর্থনে পর্যাপ্ত প্রামাণিক কাগজপত্র যুক্ত না থাকাসহ আরো কিছু ত্রুটির কারণ দেখিয়ে বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আবারও তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
গত ৭ মার্চ এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির শুরুর দিন আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তাদের আইনজীবী শাহিনুর রহমান মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন। তবে সেদিন শুনানি শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট শুনানির জন্য বিচারক ২ অগাস্ট দিন রেখেছিলেন।
২ অগাস্ট আসামিদের হাজির করা হলেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল হাসান মঙ্গলবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উত্তম কুমার বিশ্বাসও আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে শুনানি পিছিয়ে যায়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহীনুল ইসলাম বলেন, “এ মামলার অভিযোগে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত করা নথিপত্র পর্যাপ্ত নয় এবং তথ্যের সঙ্গে মিল নেই। সে কারণে বিচারককে বলেছিলাম, মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্য ছাড়া বিচারকার্য শুরু না করতে।”
বরকত ও রুবেল ছাড়াও ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আশিকুর রহমান ফারহান, খোন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম এ মামলার আসামি।
২০২০ সালের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ী সড়কে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলা হয়। পরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তিনি।
ওই ঘটনায় ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হন বরকত ও রুবেল। তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অর্থপাচারের খবর এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে, বেশ কয়েকটি মামলাও হয়।
অর্থপাচারের অভিযোগে ওই বছর ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।
তদন্ত শেষে গতবছরের ৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন বরকত ও রুবেল। ওই ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বরকত ও রুবেল বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হন।
এছাড়া তারা মাদক কারবার ও ভূমি দখল করেও অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন: এসি ও নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ডাম্প ট্রাক, বোল্ডার ও পাজেরোর মালিক তারা। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের মধ্যে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছেন বলে সিআইডির অভিযোগ। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুরের এক আইনজীবী হত্যার মামলারও আসামি বরকত ও রুবেল।
দুই হাজার কোটি টাকা পাচার ফের তদন্তে রুবেল-বরকতের মামলা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ