নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন দফা দাবিতে ঢাকার কাকরাইল মোড়ে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে অবস্থান কর্মসূচির পর গণ-অনশনে বসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। শুক্রবার (১৬ মে) বিকেল চারটায় অনশন শুরু করেন তাঁরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে গণ-অনশন শুরুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আমাদের গণ-অনশন শুরু। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের গণ-অনশন কর্মসূচি চলবে।’
এর কিছুক্ষণ পর বিকেল ৪টায় অনশন শুরু করেন প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী। গণ-অনশনের শুরুতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তাঁরা। তিনটি দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
এসব দাবিতে গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার অভিমুখে লংমার্চ নিয়ে যাওয়ার সময় কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ওই দিন বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তখন থেকে সেখানে তাঁদের লাগাতার অবস্থান চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী-শিক্ষক সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে ঘোষণা দিয়ে সমাবেশের সময় পেছানো হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজের পর বেলা সোয়া ২টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যোগ দেন।
সমাবেশ শেষে অনশনে যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আজকে তৃতীয় দিনের মতো আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার আশ্বাস কিংবা দাবি পূরণের বিষয়ে জানানো হয়নি। এই দাবি আমাদের যৌক্তিক দাবি। এভাবে পড়াশোনা করা যায় না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী দিনের পর দিন অমানবিক জীবন যাপন করছেন। তাই আজ থেকে শুরু হওয়া চলমান অনশনে সবার সঙ্গে আমিও অংশ নিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে, জীবন চলে গেলেও আমরা কর্মসূচি থেকে উঠব না।’