ঢাকা ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

দুই দশকে বিশ্বে বন্যার ঝুঁকিতে আরও ২৫ শতাংশ মানুষ

  • আপডেট সময় : ০১:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১
  • ১০৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী বন্যার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোয় বসবাসরত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ। স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বন্যা বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্লাউড টু স্ট্রিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বেথ টেলম্যান বলেন, আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে যাওয়া নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত করছে বিশ্ববাসীকে। সম্প্রতি ভারত, চীন, জার্মানি ও বেলজিয়ামে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যায় সেখানে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। বিশেষ করে দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাধারণত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে দেখা হয়। তবে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বন্যার পরিমাণ বাড়ছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, ভবিষ্যতে আফ্রিকায় বন্যার কারণে প্রতিবছর ২৭ লাখ মানুষ ভিটেমাটি হারাবে। এ কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে সেখানকার সাড়ে আট কোটি মানুষ গৃহহীন হতে পারে।
সাধারণত বন্যাসংক্রান্ত তথ্যের জন্য বন্যাকবলিত এলাকায় বৃষ্টিপাত ও জলসীমার উচ্চতার মতো বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করা হয়। এ কারণে যেসব অঞ্চল বন্যাপ্রবণ নয়, সেসব স্থানের তথ্য সাধারণত পাওয়া যায় না। এ সমস্যা সমাধানে ২০০০ সাল থেকে মার্কিন গবেষকদের একটি দল বিশ্বে ৯০০টির বেশি বন্যার ঘটনা এবং ১৬৯টি দেশের ওপর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নজরদারি শুরু করে। এ সময় প্রতিদিন দুবার করে ওই এলাকাগুলোর ছবি স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া হয়।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে একটি ডেটাবেইস তৈরি করা হয়। সেখানে নজরদারিতে থাকা ৯১৩টি বন্যার সময় মৃত মানুষের সংখ্যা, বাস্তুচ্যুত হওয়ার পরিমাণ এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য মিলবে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এ বিষয়ে গবেষকেরা বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। তাঁরা জানান, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ২২ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে বন্যাকবলিত এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।
কম্পিউটারভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া তথ্যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের ভৌগোলিক স্থানান্তরের কারণে আরও ২৫টি দেশ বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে পড়বে।
গবেষণা দলের প্রধান এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষক বেথ টেলম্যান এএফপিকে জানান, গত ২০ বছরে নতুনভাবে বন্যাকবলিত অঞ্চলের আওতায় আসা মানুষের বন্যার ঝুঁকি আগের তুলনায় ১০ গুণ বেড়েছে। বাঁধ ভেঙে বন্যার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। টেলম্যান বলেন, বাঁধে ভাঙন বা বাঁধ উপচে পড়ার ১৩টি ঘটনায় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ গবেষণায় শহর ও গ্রাম নির্মাণ পরিকল্পনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নানা পদক্ষেপের সুফলগুলো তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বেথ টেলম্যান। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এক মার্কিন ডলার খরচ করলে তা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে খরচ হওয়া ছয় ডলার সাশ্রয় করতে পারে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দুই দশকে বিশ্বে বন্যার ঝুঁকিতে আরও ২৫ শতাংশ মানুষ

আপডেট সময় : ০১:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী বন্যার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোয় বসবাসরত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ। স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বন্যা বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্লাউড টু স্ট্রিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বেথ টেলম্যান বলেন, আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে যাওয়া নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত করছে বিশ্ববাসীকে। সম্প্রতি ভারত, চীন, জার্মানি ও বেলজিয়ামে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যায় সেখানে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। বিশেষ করে দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাধারণত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে দেখা হয়। তবে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বন্যার পরিমাণ বাড়ছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, ভবিষ্যতে আফ্রিকায় বন্যার কারণে প্রতিবছর ২৭ লাখ মানুষ ভিটেমাটি হারাবে। এ কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে সেখানকার সাড়ে আট কোটি মানুষ গৃহহীন হতে পারে।
সাধারণত বন্যাসংক্রান্ত তথ্যের জন্য বন্যাকবলিত এলাকায় বৃষ্টিপাত ও জলসীমার উচ্চতার মতো বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করা হয়। এ কারণে যেসব অঞ্চল বন্যাপ্রবণ নয়, সেসব স্থানের তথ্য সাধারণত পাওয়া যায় না। এ সমস্যা সমাধানে ২০০০ সাল থেকে মার্কিন গবেষকদের একটি দল বিশ্বে ৯০০টির বেশি বন্যার ঘটনা এবং ১৬৯টি দেশের ওপর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নজরদারি শুরু করে। এ সময় প্রতিদিন দুবার করে ওই এলাকাগুলোর ছবি স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া হয়।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে একটি ডেটাবেইস তৈরি করা হয়। সেখানে নজরদারিতে থাকা ৯১৩টি বন্যার সময় মৃত মানুষের সংখ্যা, বাস্তুচ্যুত হওয়ার পরিমাণ এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য মিলবে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এ বিষয়ে গবেষকেরা বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। তাঁরা জানান, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ২২ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে বন্যাকবলিত এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।
কম্পিউটারভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া তথ্যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের ভৌগোলিক স্থানান্তরের কারণে আরও ২৫টি দেশ বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে পড়বে।
গবেষণা দলের প্রধান এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষক বেথ টেলম্যান এএফপিকে জানান, গত ২০ বছরে নতুনভাবে বন্যাকবলিত অঞ্চলের আওতায় আসা মানুষের বন্যার ঝুঁকি আগের তুলনায় ১০ গুণ বেড়েছে। বাঁধ ভেঙে বন্যার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। টেলম্যান বলেন, বাঁধে ভাঙন বা বাঁধ উপচে পড়ার ১৩টি ঘটনায় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ গবেষণায় শহর ও গ্রাম নির্মাণ পরিকল্পনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নানা পদক্ষেপের সুফলগুলো তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বেথ টেলম্যান। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এক মার্কিন ডলার খরচ করলে তা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে খরচ হওয়া ছয় ডলার সাশ্রয় করতে পারে।