ঢাকা ০৫:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

দুই দশকের ভয়াবহ ১০ দুর্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা

  • আপডেট সময় : ০৬:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন গত দুই দশকের সবচেয়ে ১০টি মারাত্মক দুর্যোগের ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে, এমনই দেখা গেছে সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে। ইউরোপ’সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, খরা এবং বন্যার ঘটনায় দুই দশকে পাঁচ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)’ তাদের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলেছে, এইসব ঘটনার সবগুলোই দিন দিন তীব্রতর হওয়ার পাশাপাশি এগুলোর পেছনে সম্ভাব্য হাত ছিল আগের চেয়ে উষ্ণ বায়ুমণ্ডলের। সম্প্রতি স্পেনে ঘটে যাওয়া মারাত্মক বন্যার মতো বিভিন্ন জটিল আবহাওয়ার ক্ষেত্রে ‘জলবায়ু পরিবর্তন যে নিজ চিহ্ন রেখে যায়’, সে বিষয়গুলো বিজ্ঞানীরা কীভাবে শনাক্ত করতে পারেন, তা দেখা গেছে এ গবেষণায়। “জলবায়ু পরিবর্তন কোনো স্বল্পমেয়াদি হুমকি, বিষয়টি এমন নয়,” বলেছেন ডব্লিউডব্লিউএ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ড. ফ্রেডেরিক অটো। “গবেষণাটি সেইসব রাজনৈতিক নেতার জন্য ‘আই-ওপেনার’ হওয়া উচিৎ, যারা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে এই গ্রহের তাপমাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের জীবনও ধ্বংস করছেন। আর আমরা যদি এভাবে তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়াতে থাকি, তাহলে এ ভোগান্তি চলতেই থাকবে।” এ গবেষণায় ‘ইন্টারন্যাশনাল ডিজাস্টার ডেটাবেইজ’-এর তালিকায় থাকা গত ২০ বছরের সবচেয়ে মারাত্মক ১০টি দূর্যোগের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখেছে গবেষণা দলটি। এর মধ্যে রয়েছে:
২০০৭ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় সিডর, যার ফলে চার হাজার দুইশ ৩৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় নার্গিস, যার ফলে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
২০১০ সালে রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ, যেখানে নিহত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৩৬ জন।
২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সোমালিয়ার তীব্র খরা, যার ফলে দুই লাখ ৫৮ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে।
২০১৩ সালে ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের বন্যা, যেখানে নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৫৪ জন।
২০১৩ সালে ফিলিপিন্সে ঘটে যাওয়া টাইফুন হাইয়ান, যেখানে সাত হাজার ৩৫৪ জন নিহত হয়েছেন।
২০১৫ সালে ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া তাপ প্রবাহ, যেখানে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা তিন হাজার ২৭৫ জন।
২০২২ সালে ইউরোপে তাপ প্রবাহের ঘটনা, যার ফলে নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৫৪২ জন।
২০২৩ সালে ইউরোপের তাপ প্রবাহ, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৭ হাজার ১২৯ জন।
২০২৩ সালে লিবিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় ড্যানিয়েল, যার ফলে প্রাণ গেছে ১২ হাজার ৩৫২ জনের।
২০২৩ সালে তাপপ্রবাহ শুরুর পর পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটা জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া ‘অসম্ভব ছিল’ বলে দাবি করেছে গবেষণা দলটি। এ গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সমৃদ্ধ এলাকাও এই ধরনের দুর্যোগগুলোর সামনে অসহায়। ডব্লিউডব্লিউএ বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে আসার প্রবণতা আগের চেয়ে তীব্রতর হয়েছে। আর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, যেখানে মাটি থেকে পানি শোষিত হয়, তাতে খরার মতো পরিস্থিতিও দিন দিন বাজে দিকে যাচ্ছে। গবেষণা দল সতর্ক করেছে, এইসব ঘটনার সর্বমোট মৃত্যু সংখ্যা বিবেচনা করা আসলে ‘বড় অবমূল্যায়ণ’। কারণ, তাপ প্রবাহ সংশ্লিষ্ট এমন লাখ লাখ মৃত্যুর ঘটনা আছে, যেগুলো সম্ভবত আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে উঠে আসেনি।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দুই দশকের ভয়াবহ ১০ দুর্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা

আপডেট সময় : ০৬:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন গত দুই দশকের সবচেয়ে ১০টি মারাত্মক দুর্যোগের ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে, এমনই দেখা গেছে সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে। ইউরোপ’সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, খরা এবং বন্যার ঘটনায় দুই দশকে পাঁচ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)’ তাদের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলেছে, এইসব ঘটনার সবগুলোই দিন দিন তীব্রতর হওয়ার পাশাপাশি এগুলোর পেছনে সম্ভাব্য হাত ছিল আগের চেয়ে উষ্ণ বায়ুমণ্ডলের। সম্প্রতি স্পেনে ঘটে যাওয়া মারাত্মক বন্যার মতো বিভিন্ন জটিল আবহাওয়ার ক্ষেত্রে ‘জলবায়ু পরিবর্তন যে নিজ চিহ্ন রেখে যায়’, সে বিষয়গুলো বিজ্ঞানীরা কীভাবে শনাক্ত করতে পারেন, তা দেখা গেছে এ গবেষণায়। “জলবায়ু পরিবর্তন কোনো স্বল্পমেয়াদি হুমকি, বিষয়টি এমন নয়,” বলেছেন ডব্লিউডব্লিউএ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ড. ফ্রেডেরিক অটো। “গবেষণাটি সেইসব রাজনৈতিক নেতার জন্য ‘আই-ওপেনার’ হওয়া উচিৎ, যারা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে এই গ্রহের তাপমাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের জীবনও ধ্বংস করছেন। আর আমরা যদি এভাবে তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়াতে থাকি, তাহলে এ ভোগান্তি চলতেই থাকবে।” এ গবেষণায় ‘ইন্টারন্যাশনাল ডিজাস্টার ডেটাবেইজ’-এর তালিকায় থাকা গত ২০ বছরের সবচেয়ে মারাত্মক ১০টি দূর্যোগের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখেছে গবেষণা দলটি। এর মধ্যে রয়েছে:
২০০৭ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় সিডর, যার ফলে চার হাজার দুইশ ৩৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় নার্গিস, যার ফলে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
২০১০ সালে রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ, যেখানে নিহত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৩৬ জন।
২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সোমালিয়ার তীব্র খরা, যার ফলে দুই লাখ ৫৮ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে।
২০১৩ সালে ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের বন্যা, যেখানে নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৫৪ জন।
২০১৩ সালে ফিলিপিন্সে ঘটে যাওয়া টাইফুন হাইয়ান, যেখানে সাত হাজার ৩৫৪ জন নিহত হয়েছেন।
২০১৫ সালে ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া তাপ প্রবাহ, যেখানে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা তিন হাজার ২৭৫ জন।
২০২২ সালে ইউরোপে তাপ প্রবাহের ঘটনা, যার ফলে নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৫৪২ জন।
২০২৩ সালে ইউরোপের তাপ প্রবাহ, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৭ হাজার ১২৯ জন।
২০২৩ সালে লিবিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় ড্যানিয়েল, যার ফলে প্রাণ গেছে ১২ হাজার ৩৫২ জনের।
২০২৩ সালে তাপপ্রবাহ শুরুর পর পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটা জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া ‘অসম্ভব ছিল’ বলে দাবি করেছে গবেষণা দলটি। এ গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সমৃদ্ধ এলাকাও এই ধরনের দুর্যোগগুলোর সামনে অসহায়। ডব্লিউডব্লিউএ বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে আসার প্রবণতা আগের চেয়ে তীব্রতর হয়েছে। আর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, যেখানে মাটি থেকে পানি শোষিত হয়, তাতে খরার মতো পরিস্থিতিও দিন দিন বাজে দিকে যাচ্ছে। গবেষণা দল সতর্ক করেছে, এইসব ঘটনার সর্বমোট মৃত্যু সংখ্যা বিবেচনা করা আসলে ‘বড় অবমূল্যায়ণ’। কারণ, তাপ প্রবাহ সংশ্লিষ্ট এমন লাখ লাখ মৃত্যুর ঘটনা আছে, যেগুলো সম্ভবত আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে উঠে আসেনি।