ঢাকা ১২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
উৎসবের আমেজে সংবর্ধনা

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে তারেক রহমান দেশে

  • আপডেট সময় : ১১:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সব কিছু ঠিক থাকলে আজ দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার পর থেকেই সারা দেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে শেষ সময়ে এর মাত্রা আরো বেড়েছে। নেতাকে বরণ করতে দুই-একদিন আগেই সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।

গতকাল বুধবারও বিভিন্ন রুটের যানবাহনে ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের ভিড় বেড়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে একই চিত্র। নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য দলের পক্ষ থেকে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন বুকিং দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানকে বরণ করতে দলের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। এরই মধ্যে মঞ্চের মূল কাঠামো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

আর বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট ও কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত থাকবে ৯০০ মাইক। এ উপলক্ষে সারা দেশেই নান্দনিক ব্যানার-ফেস্টুন করা হয়েছে। সংবর্ধনাস্থলের আশপাশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নেতাকে বরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন তার অনুসারীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আশা করছেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সারা দেশের, মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকেই আসছেন নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতাকর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনই রাজপথ থেকে সফল হয়েছে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। ঠিক ২৪-এর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে লন্ডন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারেক রহমান। অর্থাৎ দেশের পক্ষে প্রতিটি আন্দোলনেই নেতৃত্বের আসনে ছিল জিয়া পরিবার। সেই পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে দেশের মাটিতে আসছেন। সেটা তো আমাদের নেতাকর্মীদের আবেগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তাকে বরণ করতে আমাদের সর্বস্তরের জনশক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সর্বোচ্চ সম্মান ও ভালোবাসায় নেতাকে বরণ করতে আমরা উন্মুখ। সে অনুযায়ী ৩০০ ফুট এলাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পটকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

প্রস্তুত বিশাল মঞ্চ ও ৯০০ মাইক: তারেক রহমানকে বরণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে; যার উচ্চতা ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুট। কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি এ মঞ্চের মূল কাঠামোর কাজ শেষ পর্যায়ে। সন্ধ্যা নাগাদ সাজসজ্জা সম্পন্ন হবে বলা জানা গেছে। ব্যানারে লেখা থাকবে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটি।

এর আগে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে নির্মাণাধীন মঞ্চের কাজ পরিদর্শন করেছেন তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নানান দিকনির্দেশনা দেন। আর বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট ও কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত থাকবে ৯০০ মাইক।

ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছে: তারেক রহমানের সংবর্ধনায় যোগ দিতে দুই দিন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। অনেকে আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার নেতাকর্মীদের আগমনের পরিধি বাড়ছে। সকাল থেকেই গাবতলী ও সায়দাবাদসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ভিড় দেখা গেছে। এছাড়াও রেল ও নৌপথেও একই চিত্র। অনেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এসেছেন। কুমিল্লা থেকে এসেছেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আহছান উল্লাহ। তিনি বলেন, জেলা থেকে প্রায় অর্ধলক্ষ জনশক্তি আসবে। তিনি আগেই নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে পড়েছেন। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন বিএনপির কর্মী আলী আজগর। তিনি বলেন, নেতার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আগেভাগে এসেছেন। এমন অসংখ্য নেতাকর্মীই এসে পড়েছেন।

১০ রুটে বিশেষ ট্রেন: বিএনপির আবেদনের ভিত্তিতে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেনের অনুমোদন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার থেকে ঢাকা, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা, টাঙ্গাইল-ঢাকা, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা, গাজীপুরের জয়দেবপুর-ঢাকা সেনানিবাস, পঞ্চগড়-ঢাকা, খুলনা-ঢাকা, পাবনার চাটমোহর-ঢাকা সেনানিবাস, রাজশাহী-ঢাকা এবং যশোর-ঢাকা। কর্মসূচি শেষে প্রতিটি ট্রেন বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় এসে আবার নির্ধারিত গন্তব্যে ফিরে যাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে ‘নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা-২০২৫’ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

থাকবেন যুগপতের সঙ্গীরাও: তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির বাইরেও যুগপতের সঙ্গীরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাদের নেতাকর্মীরাও মিছিল সহকারে যাবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সংবাদমমাধ্যমকে বলেন, তিনিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের নেতাকর্মীরাও অংশ নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে বরণে গোটা জাতি প্রস্তুত।

উৎসবের আমেজ: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে সারা দেশেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পূর্বাচল এলাকা। অনুষ্ঠানের একদিন আগেই আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেকের হাতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের ছবি শোভা পাচ্ছে। ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে দলীয় পতাকা। নেতাকে বরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন তার অনুসারীরা।

১ মণ ধানের জামা পরে ঢাকায় হাজির দুই ভাই: দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে আসছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। সাজানো হয়েছে মঞ্চ। এরমধ্যেই তারেক রহমানকে একনজর দেখতে সমাবেশস্থলে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ এসেছেন ব্যতিক্রম প্লাকার্ড আর দলীয় লোগো সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে। তাদেরই ভিড়ে তারেক রহমানকে এক নজর দেখতে বরগুনা থেকে এসেছেন মো. ইয়ামিন ও সাইফুল ইসলাম। সম্পর্কে তারা চাচাত ভাই। ইয়ামিনের বাবা শুক্কুর আলী খানের হাত ধরে এসেছেন তারা। দুই ভাই শরীরে জড়িয়ে রেখেছেন ২০ কেজি করে মোট এক মণ ধান দিয়ে বানানো পোশাক।

শুক্কুর আলী খান জানান, তিনি ঢাকায় যুবদল করতেন। এখন গ্রামে থাকেন। ছেলে ইয়ামিনের আবদারে তারেক রহমানকে দেখতে ৩০০ ফিটে ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বিএনপি করি। সবসময় বাঘ সেজে আন্দোলন করতাম। তারেক রহমান আমাকে ‘বিএনপির টাইগার’ বলে চেনেন। বরগুনা থেকে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে চলে এসেছি। মো. ইয়ামিন বলেন, তারেক রহমানকে অনেক ভালোবাসি। আগেও এভাবে অনুষ্ঠানে সেজে এসেছি।

কড়া নিরাপত্তার ছক: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবসান হতে চলেছে নির্বাসিত জীবনের। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

‘রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট জোন’: সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছে বিএনপি, যা এরইমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এছাড়াও টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেল গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান ও তার পরিবার লন্ডনের সময় বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সিলেট হয়ে ফ্লাইটটি আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

ঢাকার হোটেলে সিট সংকট: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে ঢাকায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতারা। ইতিমধ্যে এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঢাকায় ঢুকে পড়েছে। ফলে নগরীর বেশির ভাগ আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজে কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এদিকে যেগুলো ফাঁকা আছে, সেগুলোও বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে হোটেলে জায়গা না পেয়ে এখন অনেকেই ঢাকায় বাস করা স্বজন ও আশপাশের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন।

সানা/এসি/আপ্র/২৫/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

উৎসবের আমেজে সংবর্ধনা

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে তারেক রহমান দেশে

আপডেট সময় : ১১:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সব কিছু ঠিক থাকলে আজ দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার পর থেকেই সারা দেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে শেষ সময়ে এর মাত্রা আরো বেড়েছে। নেতাকে বরণ করতে দুই-একদিন আগেই সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।

গতকাল বুধবারও বিভিন্ন রুটের যানবাহনে ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের ভিড় বেড়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে একই চিত্র। নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য দলের পক্ষ থেকে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন বুকিং দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানকে বরণ করতে দলের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। এরই মধ্যে মঞ্চের মূল কাঠামো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

আর বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট ও কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত থাকবে ৯০০ মাইক। এ উপলক্ষে সারা দেশেই নান্দনিক ব্যানার-ফেস্টুন করা হয়েছে। সংবর্ধনাস্থলের আশপাশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নেতাকে বরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন তার অনুসারীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আশা করছেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সারা দেশের, মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকেই আসছেন নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতাকর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনই রাজপথ থেকে সফল হয়েছে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। ঠিক ২৪-এর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে লন্ডন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারেক রহমান। অর্থাৎ দেশের পক্ষে প্রতিটি আন্দোলনেই নেতৃত্বের আসনে ছিল জিয়া পরিবার। সেই পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে দেশের মাটিতে আসছেন। সেটা তো আমাদের নেতাকর্মীদের আবেগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তাকে বরণ করতে আমাদের সর্বস্তরের জনশক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সর্বোচ্চ সম্মান ও ভালোবাসায় নেতাকে বরণ করতে আমরা উন্মুখ। সে অনুযায়ী ৩০০ ফুট এলাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পটকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

প্রস্তুত বিশাল মঞ্চ ও ৯০০ মাইক: তারেক রহমানকে বরণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে; যার উচ্চতা ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুট। কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি এ মঞ্চের মূল কাঠামোর কাজ শেষ পর্যায়ে। সন্ধ্যা নাগাদ সাজসজ্জা সম্পন্ন হবে বলা জানা গেছে। ব্যানারে লেখা থাকবে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটি।

এর আগে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে নির্মাণাধীন মঞ্চের কাজ পরিদর্শন করেছেন তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নানান দিকনির্দেশনা দেন। আর বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট ও কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত থাকবে ৯০০ মাইক।

ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছে: তারেক রহমানের সংবর্ধনায় যোগ দিতে দুই দিন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। অনেকে আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার নেতাকর্মীদের আগমনের পরিধি বাড়ছে। সকাল থেকেই গাবতলী ও সায়দাবাদসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ভিড় দেখা গেছে। এছাড়াও রেল ও নৌপথেও একই চিত্র। অনেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এসেছেন। কুমিল্লা থেকে এসেছেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আহছান উল্লাহ। তিনি বলেন, জেলা থেকে প্রায় অর্ধলক্ষ জনশক্তি আসবে। তিনি আগেই নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে পড়েছেন। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন বিএনপির কর্মী আলী আজগর। তিনি বলেন, নেতার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আগেভাগে এসেছেন। এমন অসংখ্য নেতাকর্মীই এসে পড়েছেন।

১০ রুটে বিশেষ ট্রেন: বিএনপির আবেদনের ভিত্তিতে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেনের অনুমোদন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার থেকে ঢাকা, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা, টাঙ্গাইল-ঢাকা, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা, গাজীপুরের জয়দেবপুর-ঢাকা সেনানিবাস, পঞ্চগড়-ঢাকা, খুলনা-ঢাকা, পাবনার চাটমোহর-ঢাকা সেনানিবাস, রাজশাহী-ঢাকা এবং যশোর-ঢাকা। কর্মসূচি শেষে প্রতিটি ট্রেন বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় এসে আবার নির্ধারিত গন্তব্যে ফিরে যাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে ‘নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা-২০২৫’ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

থাকবেন যুগপতের সঙ্গীরাও: তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির বাইরেও যুগপতের সঙ্গীরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাদের নেতাকর্মীরাও মিছিল সহকারে যাবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সংবাদমমাধ্যমকে বলেন, তিনিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের নেতাকর্মীরাও অংশ নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে বরণে গোটা জাতি প্রস্তুত।

উৎসবের আমেজ: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে সারা দেশেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পূর্বাচল এলাকা। অনুষ্ঠানের একদিন আগেই আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেকের হাতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের ছবি শোভা পাচ্ছে। ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে দলীয় পতাকা। নেতাকে বরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন তার অনুসারীরা।

১ মণ ধানের জামা পরে ঢাকায় হাজির দুই ভাই: দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে আসছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। সাজানো হয়েছে মঞ্চ। এরমধ্যেই তারেক রহমানকে একনজর দেখতে সমাবেশস্থলে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ এসেছেন ব্যতিক্রম প্লাকার্ড আর দলীয় লোগো সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে। তাদেরই ভিড়ে তারেক রহমানকে এক নজর দেখতে বরগুনা থেকে এসেছেন মো. ইয়ামিন ও সাইফুল ইসলাম। সম্পর্কে তারা চাচাত ভাই। ইয়ামিনের বাবা শুক্কুর আলী খানের হাত ধরে এসেছেন তারা। দুই ভাই শরীরে জড়িয়ে রেখেছেন ২০ কেজি করে মোট এক মণ ধান দিয়ে বানানো পোশাক।

শুক্কুর আলী খান জানান, তিনি ঢাকায় যুবদল করতেন। এখন গ্রামে থাকেন। ছেলে ইয়ামিনের আবদারে তারেক রহমানকে দেখতে ৩০০ ফিটে ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বিএনপি করি। সবসময় বাঘ সেজে আন্দোলন করতাম। তারেক রহমান আমাকে ‘বিএনপির টাইগার’ বলে চেনেন। বরগুনা থেকে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে চলে এসেছি। মো. ইয়ামিন বলেন, তারেক রহমানকে অনেক ভালোবাসি। আগেও এভাবে অনুষ্ঠানে সেজে এসেছি।

কড়া নিরাপত্তার ছক: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবসান হতে চলেছে নির্বাসিত জীবনের। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

‘রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট জোন’: সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছে বিএনপি, যা এরইমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এছাড়াও টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেল গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান ও তার পরিবার লন্ডনের সময় বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সিলেট হয়ে ফ্লাইটটি আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

ঢাকার হোটেলে সিট সংকট: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে ঢাকায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতারা। ইতিমধ্যে এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঢাকায় ঢুকে পড়েছে। ফলে নগরীর বেশির ভাগ আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজে কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এদিকে যেগুলো ফাঁকা আছে, সেগুলোও বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে হোটেলে জায়গা না পেয়ে এখন অনেকেই ঢাকায় বাস করা স্বজন ও আশপাশের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন।

সানা/এসি/আপ্র/২৫/১২/২০২৫