ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় : যা জানা জরুরি

  • আপডেট সময় : ১২:২০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম : অনেক রোগী বলে থাকেন যে তাদের পুরোনো আমাশয় রয়েছে। মানে কখনোই মলত্যাগটা তার ঠিকমতো হয় না, মলত্যাগের পর পূর্ণতা আসে না। মলত্যাগের সময় আমাশয়জাতীয় বা আমজাতীয় পদার্থ যায়; মানে পিচ্ছিলজাতীয় পদার্থ বের হয়। এই যে পুরোনো আমাশয়, তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে-আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম। আরেকটি কারণ হচ্ছে- ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ বা আইবিডি। এক্ষেত্রে মলদ্বারে বা কোলনে প্রদাহ দেখা দেয়। এ ছাড়া আলসারঅ্যাটিব কোলাইটিস এবং ক্রনস ডিজিজের মতো রোগেও একই উপসর্গ থাকে। আবার কারো যদি কোলনে ক্যানসার হয়, তাহলেও কিন্তু মলত্যাগের পর আমজাতীয় পদার্থ যায়, রক্ত যায় কিংবা পেটে ব্যথা করতে পারে। কাজেই মলদ্বারো কারো যদি আমাশয়জাতীয় কোনো সমস্যা থাকে, মলত্যাগ করার সময় পিচ্ছিলজাতীয় পদার্থ মিশ্রিত থাকে, তাহলে পুরোনো আমাশয় ভেবে বাসায় বসে থাকবেন না। আমরা এমন অনেক রোগী পাই, দেখা যায় তার হয়তো ক্যানসার হয়েছে; কিন্তু সে পুরোনো আমাশয় ভেবে বাসায় বসে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ওষুধ কিনে খাচ্ছে। এতে হয়তো সে কিছুটা প্রাথমিক উপকার পাচ্ছে; কিন্তু যখন আমাদের কাছে আসে তখন দেখা যায় তার ক্যানসারটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। যেমন: লিভারে ছড়াতে পারে, পেটের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে; তখন তার চিকিৎসা খুবই জটিল হয়ে পড়ে।
কারো যদি ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ থাকে এবং প্রাথমিক অবস্থায় যদি আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পারি; তার ক্ষেত্রে সার্জারি কিংবা অপারেশনের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কিন্তু যদি দেখা যায়, ১০ বছর পরে তার রোগটা নির্ণয় হচ্ছে, তাহলেতার চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে খাদ্যনালীতে উপসর্গের পাশাপাশি তার অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়-হাঁটুতে ব্যথা, চোখে সমস্যা যেটাকে আমরা এক্সটা ইনটেসটিনাল ম্যানিফেস্টেমন/অন্ত্রের বাইরে উপসর্গ বলে থাকি। কাজেই পুরোনো আমাশয় ভেবে কেউ ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। এ জাতীয় সমস্যা হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। চিকিৎসক আপনার বর্ণনা শুনবেন, ক্ষেত্রবিশেষে আপনার কোলনস্কোপি করবেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে আপনার রোগটাকে নির্ণয় করে; সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা দিবেন। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম থাকে; সেক্ষেত্রে দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেলে এই সমস্যাটা বাড়ে, এটাকে আমরা ফাংশনাল ডিসঅর্ডার বলে থাকি। এসব রোগীকে যখন আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারব তার ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ এবং ক্যানসার নেই, তার সমস্যা হচ্ছে আইবিএস; তাদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে বা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে সম্পূর্ণভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। কাজেই পুরোনো আমাশয় সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক চিকিৎসা আগে-ভাগে শুরু করা গেলে, রোগের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ম না মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ১৫ গাড়িচালকের নামে ঝিলমিলে প্লট বরাদ্দ

দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় : যা জানা জরুরি

আপডেট সময় : ১২:২০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম : অনেক রোগী বলে থাকেন যে তাদের পুরোনো আমাশয় রয়েছে। মানে কখনোই মলত্যাগটা তার ঠিকমতো হয় না, মলত্যাগের পর পূর্ণতা আসে না। মলত্যাগের সময় আমাশয়জাতীয় বা আমজাতীয় পদার্থ যায়; মানে পিচ্ছিলজাতীয় পদার্থ বের হয়। এই যে পুরোনো আমাশয়, তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে-আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম। আরেকটি কারণ হচ্ছে- ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ বা আইবিডি। এক্ষেত্রে মলদ্বারে বা কোলনে প্রদাহ দেখা দেয়। এ ছাড়া আলসারঅ্যাটিব কোলাইটিস এবং ক্রনস ডিজিজের মতো রোগেও একই উপসর্গ থাকে। আবার কারো যদি কোলনে ক্যানসার হয়, তাহলেও কিন্তু মলত্যাগের পর আমজাতীয় পদার্থ যায়, রক্ত যায় কিংবা পেটে ব্যথা করতে পারে। কাজেই মলদ্বারো কারো যদি আমাশয়জাতীয় কোনো সমস্যা থাকে, মলত্যাগ করার সময় পিচ্ছিলজাতীয় পদার্থ মিশ্রিত থাকে, তাহলে পুরোনো আমাশয় ভেবে বাসায় বসে থাকবেন না। আমরা এমন অনেক রোগী পাই, দেখা যায় তার হয়তো ক্যানসার হয়েছে; কিন্তু সে পুরোনো আমাশয় ভেবে বাসায় বসে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ওষুধ কিনে খাচ্ছে। এতে হয়তো সে কিছুটা প্রাথমিক উপকার পাচ্ছে; কিন্তু যখন আমাদের কাছে আসে তখন দেখা যায় তার ক্যানসারটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। যেমন: লিভারে ছড়াতে পারে, পেটের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে; তখন তার চিকিৎসা খুবই জটিল হয়ে পড়ে।
কারো যদি ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ থাকে এবং প্রাথমিক অবস্থায় যদি আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পারি; তার ক্ষেত্রে সার্জারি কিংবা অপারেশনের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কিন্তু যদি দেখা যায়, ১০ বছর পরে তার রোগটা নির্ণয় হচ্ছে, তাহলেতার চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে খাদ্যনালীতে উপসর্গের পাশাপাশি তার অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়-হাঁটুতে ব্যথা, চোখে সমস্যা যেটাকে আমরা এক্সটা ইনটেসটিনাল ম্যানিফেস্টেমন/অন্ত্রের বাইরে উপসর্গ বলে থাকি। কাজেই পুরোনো আমাশয় ভেবে কেউ ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। এ জাতীয় সমস্যা হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। চিকিৎসক আপনার বর্ণনা শুনবেন, ক্ষেত্রবিশেষে আপনার কোলনস্কোপি করবেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে আপনার রোগটাকে নির্ণয় করে; সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা দিবেন। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম থাকে; সেক্ষেত্রে দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেলে এই সমস্যাটা বাড়ে, এটাকে আমরা ফাংশনাল ডিসঅর্ডার বলে থাকি। এসব রোগীকে যখন আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারব তার ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ এবং ক্যানসার নেই, তার সমস্যা হচ্ছে আইবিএস; তাদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে বা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে সম্পূর্ণভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। কাজেই পুরোনো আমাশয় সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক চিকিৎসা আগে-ভাগে শুরু করা গেলে, রোগের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।