ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দিয়াবাড়ির চারপাশজুড়ে হলুদে ছায়া সূর্যমুখীর জগৎ

  • আপডেট সময় : ০৫:২২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: শহরের ধুলোবালি মাখা সড়ক পেরিয়ে ইট-পাথরের দেওয়াল ঠেলে যখন উত্তরা দিয়াবাড়ির সেই সোনালি বাগানে পৌঁছাই; তখন মনে হয় যেন এক অন্য জগতে এসে পড়েছি। চারপাশজুড়ে হলুদের সমারোহ। মাথার ওপরে নীল আকাশ, নিচে সবুজ পাতায় ঘেরা মাটি আর মাঝখানে এক বিশাল ফসলের মতো দুলছে সূর্যমুখীর সারি।

একটা সময় ছিল, যখন শহর মানেই ছিল গাছগাছালি, মাঠ, ফুলের বাগান। এখন সবটুকু জায়গা দখল করে নিয়েছে কংক্রিট, ধোঁয়া আর শব্দের দুর্যোগ। তাই এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়ালে মনে হয় শ্বাস নিতে পারছি। মনে হয় প্রকৃতির শুদ্ধতার সঙ্গে আবার নতুন করে পরিচিত হচ্ছি।

বাগানে ঢুকতেই প্রবেশমূল্য হিসেবে দিতে হয় ৩০ টাকা। নগরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেতে, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই ক্ষুদ্র মূল্য যেন তুচ্ছ। তবে বাগানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হবে, এ টাকায় যেন স্বর্গীয় এক দৃশ্যের টিকিট কেটেছি।
সূর্যমুখীর আলাদা সৌন্দর্য আছে। অন্য ফুলেরা হয়তো বাতাসের সঙ্গে দোল খায়, এদিক-ওদিক মাথা নাড়ায় কিন্তু সূর্যমুখী দাঁড়িয়ে থাকে স্থির। একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আকাশের একমাত্র আলোকবর্তিকা সূর্যের দিকে। যেন কারো প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসায় যেমন কোনো দ্বিধা থাকে না। সূর্যমুখীর ভালোবাসাও একমুখী, সূর্যের দিকেই নিবদ্ধ। ফুলগুলো দেখে গাইতে ইচ্ছে করে, ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন, আজ ওই চোখে সাগরেরও নীল।’

দিয়াবাড়ির এ সূর্যমুখী বাগান যেন শহরের বুকে এক স্বর্ণালি বিস্ময়। শত শত সূর্যমুখী একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। এত আলো, এত সৌন্দর্য তবু কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। যেন প্রকৃতি নিজেই হাতে ধরে একে একে তাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, সাজিয়ে তুলেছে নিখুঁত ছন্দে।
বিকেলের রোদ যখন একটু নরম হয়; তখন বাগানের সৌন্দর্য আরও গভীর হয়ে ওঠে। হালকা বাতাসে ফুলগুলো একটু একটু কেঁপে ওঠে। তাদের বড় বড় পাপড়িগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন এক বিশাল সোনার তরঙ্গ দুলছে বাতাসের স্রোতে।

বাগানে ঢুকলেই যেন একটা মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় মনকে। পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেলে-মেয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সৌন্দর্যের দিকে। কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার ব্যস্ত ক্যামেরার ফ্রেম ঠিক করতে। কিছু মানুষ শুধু দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ, যেন শব্দ দিয়ে এই দৃশ্যের বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে চায় না।
সূর্যমুখী ফুলের একটা অদ্ভুত চরিত্র আছে। এরা দিনের আলোতেই প্রাণবন্ত, সূর্যের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাপড়ি আলগা হয়ে যায়, যেন ক্লান্ত দেহ নুয়ে আসে দিনের শেষে। রাতের অন্ধকারে তারা বিশ্রাম নেয়, পরের দিনের নতুন সূর্যের অপেক্ষায়। এ স্বভাবটাই যেন বলে দেয়, জীবনের সব উচ্ছ্বাস দিনের আলোতেই জ্বলজ্বল করে, সন্ধ্যার নরম ছায়ায় আসে এক প্রশান্তির বিরতি।

সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে; তখন পুরো বাগান যেন অন্য এক রঙে রাঙিয়ে দেয়। হলুদ ফুলের ওপর লালচে আলো এসে পড়ে। তারা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাতাসে তখন এক ধরনের নরম স্নিগ্ধতা, যেন দিনের ক্লান্তি শেষে প্রকৃতিও একটু বিশ্রাম নিতে চায়। মুহূর্তটা এতটাই মোহনীয় যে, মনে হয় সময় থমকে গেছে। আমি কোনো গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়েছি।
দিন শেষে যখন ফিরে আসি, তখন শরীরে থাকে সূর্যের মৃদু উষ্ণতা। মনে থাকে সূর্যমুখীর হলুদ আভা। মনে হয়, জীবনটা যদি এমনই হতো—সব সময় শুধু আলোকে অনুসরণ করা, কেবল ভালোবাসার দিকে মুখ তুলে থাকা। সূর্যমুখীর মতো সরল, সূর্যের মতো প্রাণময়।

রাজধানীর আশপাশে যারা থাকেন, তাদের জন্য সূর্যমুখীর রাজ্যে যাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে খুব সহজেই উত্তরা দিয়াবাড়ি যাওয়া যায়। মতিঝিল, ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর ১০, আগারগাঁওসহ যে কোনো মেট্রো স্টেশন থেকে সরাসরি দিয়াবাড়ির সবচেয়ে কাছের স্টেশন উত্তরা উত্তরে (দিয়াবাড়ি) নেমে যেতে পারেন। সেখান থেকে রিকশায় মাত্র ২০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি সূর্যমুখী বাগানে পৌঁছে যাওয়া যায়। চাইলে একটু সময় হাতে নিয়ে হেঁটেও যাওয়া যায়, পথটা বেশ মনোরম।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মব বন্ধ না করলে ডেভিল হিসেবে ট্রিট করবো: উপদেষ্টা মাহফুজ

দিয়াবাড়ির চারপাশজুড়ে হলুদে ছায়া সূর্যমুখীর জগৎ

আপডেট সময় : ০৫:২২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: শহরের ধুলোবালি মাখা সড়ক পেরিয়ে ইট-পাথরের দেওয়াল ঠেলে যখন উত্তরা দিয়াবাড়ির সেই সোনালি বাগানে পৌঁছাই; তখন মনে হয় যেন এক অন্য জগতে এসে পড়েছি। চারপাশজুড়ে হলুদের সমারোহ। মাথার ওপরে নীল আকাশ, নিচে সবুজ পাতায় ঘেরা মাটি আর মাঝখানে এক বিশাল ফসলের মতো দুলছে সূর্যমুখীর সারি।

একটা সময় ছিল, যখন শহর মানেই ছিল গাছগাছালি, মাঠ, ফুলের বাগান। এখন সবটুকু জায়গা দখল করে নিয়েছে কংক্রিট, ধোঁয়া আর শব্দের দুর্যোগ। তাই এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়ালে মনে হয় শ্বাস নিতে পারছি। মনে হয় প্রকৃতির শুদ্ধতার সঙ্গে আবার নতুন করে পরিচিত হচ্ছি।

বাগানে ঢুকতেই প্রবেশমূল্য হিসেবে দিতে হয় ৩০ টাকা। নগরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেতে, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই ক্ষুদ্র মূল্য যেন তুচ্ছ। তবে বাগানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হবে, এ টাকায় যেন স্বর্গীয় এক দৃশ্যের টিকিট কেটেছি।
সূর্যমুখীর আলাদা সৌন্দর্য আছে। অন্য ফুলেরা হয়তো বাতাসের সঙ্গে দোল খায়, এদিক-ওদিক মাথা নাড়ায় কিন্তু সূর্যমুখী দাঁড়িয়ে থাকে স্থির। একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আকাশের একমাত্র আলোকবর্তিকা সূর্যের দিকে। যেন কারো প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসায় যেমন কোনো দ্বিধা থাকে না। সূর্যমুখীর ভালোবাসাও একমুখী, সূর্যের দিকেই নিবদ্ধ। ফুলগুলো দেখে গাইতে ইচ্ছে করে, ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন, আজ ওই চোখে সাগরেরও নীল।’

দিয়াবাড়ির এ সূর্যমুখী বাগান যেন শহরের বুকে এক স্বর্ণালি বিস্ময়। শত শত সূর্যমুখী একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। এত আলো, এত সৌন্দর্য তবু কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। যেন প্রকৃতি নিজেই হাতে ধরে একে একে তাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, সাজিয়ে তুলেছে নিখুঁত ছন্দে।
বিকেলের রোদ যখন একটু নরম হয়; তখন বাগানের সৌন্দর্য আরও গভীর হয়ে ওঠে। হালকা বাতাসে ফুলগুলো একটু একটু কেঁপে ওঠে। তাদের বড় বড় পাপড়িগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন এক বিশাল সোনার তরঙ্গ দুলছে বাতাসের স্রোতে।

বাগানে ঢুকলেই যেন একটা মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় মনকে। পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেলে-মেয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সৌন্দর্যের দিকে। কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার ব্যস্ত ক্যামেরার ফ্রেম ঠিক করতে। কিছু মানুষ শুধু দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ, যেন শব্দ দিয়ে এই দৃশ্যের বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে চায় না।
সূর্যমুখী ফুলের একটা অদ্ভুত চরিত্র আছে। এরা দিনের আলোতেই প্রাণবন্ত, সূর্যের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাপড়ি আলগা হয়ে যায়, যেন ক্লান্ত দেহ নুয়ে আসে দিনের শেষে। রাতের অন্ধকারে তারা বিশ্রাম নেয়, পরের দিনের নতুন সূর্যের অপেক্ষায়। এ স্বভাবটাই যেন বলে দেয়, জীবনের সব উচ্ছ্বাস দিনের আলোতেই জ্বলজ্বল করে, সন্ধ্যার নরম ছায়ায় আসে এক প্রশান্তির বিরতি।

সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে; তখন পুরো বাগান যেন অন্য এক রঙে রাঙিয়ে দেয়। হলুদ ফুলের ওপর লালচে আলো এসে পড়ে। তারা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাতাসে তখন এক ধরনের নরম স্নিগ্ধতা, যেন দিনের ক্লান্তি শেষে প্রকৃতিও একটু বিশ্রাম নিতে চায়। মুহূর্তটা এতটাই মোহনীয় যে, মনে হয় সময় থমকে গেছে। আমি কোনো গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়েছি।
দিন শেষে যখন ফিরে আসি, তখন শরীরে থাকে সূর্যের মৃদু উষ্ণতা। মনে থাকে সূর্যমুখীর হলুদ আভা। মনে হয়, জীবনটা যদি এমনই হতো—সব সময় শুধু আলোকে অনুসরণ করা, কেবল ভালোবাসার দিকে মুখ তুলে থাকা। সূর্যমুখীর মতো সরল, সূর্যের মতো প্রাণময়।

রাজধানীর আশপাশে যারা থাকেন, তাদের জন্য সূর্যমুখীর রাজ্যে যাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে খুব সহজেই উত্তরা দিয়াবাড়ি যাওয়া যায়। মতিঝিল, ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর ১০, আগারগাঁওসহ যে কোনো মেট্রো স্টেশন থেকে সরাসরি দিয়াবাড়ির সবচেয়ে কাছের স্টেশন উত্তরা উত্তরে (দিয়াবাড়ি) নেমে যেতে পারেন। সেখান থেকে রিকশায় মাত্র ২০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি সূর্যমুখী বাগানে পৌঁছে যাওয়া যায়। চাইলে একটু সময় হাতে নিয়ে হেঁটেও যাওয়া যায়, পথটা বেশ মনোরম।