ঢাকা ০১:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

দিল্লির বাঙালিপাড়া মাছবাজার বন্ধের হুমকি

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক: দিল্লির বহু পরিচিত বাঙালি এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে মন্দির ঘেঁষা এক মাছের বাজার বন্ধের হুমকি দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। বাজারে গিয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের তারা জানিয়েছেন, এই বাজার বন্ধ করতে হবে। কারণ মন্দির লাগোয়া এই বাজার মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করছে।
গেরুয়াধারী ওই যুবকরা দোকানি ও ক্রেতাদের বলেন, এই বাজার সনাতন ধর্ম পরিপন্থী কাজ করছে। সনাতন ধর্মে প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। মন্দির ও মাছবাজার একেবারে লাগোয়া। তাই এ বাজার বন্ধ করতে হবে।
গেরুয়াধারী যুবকদের একজন ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটা আমার নির্দেশ।’

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর দক্ষিণ দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে আসা বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিস্তীর্ণ এলাকায় বাঙালিদের জমি দিয়েছিল সরকার। সেখানকার পুরোনো বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ৬০ বছরে এই ধরনের হুমকি এই তল্লাটের কোনো বাজারের দোকানিদের দেওয়া হয়নি। তারা বলেন, বাঙালি ও মাছ প্রায় সমার্থক। এ কথা অবাঙালিদের জানা।

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র গতকাল মঙ্গলবার একটি ভিডিও শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘অনুগ্রহ করে দেখুন কীভাবে বিজেপির গুন্ডারা চিত্তরঞ্জন পার্কের মৎস্যপ্রেমী বাঙালিদের হুমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ৬০ বছরে এমন ঘটনা এই প্রথম।’
ভিডিওতে দেখা যায়, ১ নম্বর মার্কেটের এক দোকানি ওই যুবকদের বলছেন, এই বাজার দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদের (ডিডিএ) তৈরি করা। তারাই এই বাজারে মাছ বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। এর জবাবে এক গেরুয়াধারীকে বলতে শোনা যায়, ডিডিএ এমন বহু অকাজ করেছে। তাদের ব্যবস্থাও করা হবে। আপনাদের বলা হচ্ছে এখানে মাছ বিক্রি না করতে। সনাতন ধর্মে প্রাণী হত্যা অপরাধ। এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, আসামের কামাক্ষ্যা মন্দিরে পশু-প্রাণী বলি হয়। তাকে থামিয়ে ওই যুবক বলেন, সেসবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানেও প্রতিবাদ হচ্ছে। তার দাবি- মন্দির ও বাজারের দেয়াল লাগোয়া। মাছ বিক্রির দরুন মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে।

দোকানিদের দাবি, বাজারের মাছ বিক্রেতারাই ওই মন্দির তৈরি করেছিলেন। সেখানে নিয়মিত পূজা করা হয়। কেউ কোনো দিন কোনো রকম আপত্তি বা প্রতিবাদ করেননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব গণমাধ্যমকে বলেছেন, মনে হচ্ছে ভিডিওটি ভুয়া। মন্দিরের পবিত্রতা প্রত্যেকেরই রক্ষা করা উচিত। এই বাজারের দোকানিরা প্রত্যেকেই সব সময় সেই পবিত্রতা রক্ষা করে চলেছেন। এই বাজার বেআইনি নয়। তাছাড়া এই তল্লাটের বাসিন্দাদের কাছেও মাছ প্রয়োজনীয়। মাছ বিক্রেতারাও সব সময় পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে ব্যবসা করেন।

দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে মাত্র তিন মাস। আম আদমির পার্টির আমলে অবশ্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাম নবমী উপলক্ষে কোনো কোনো এলাকায় মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ রাখার ফরমান জারি করেছেন। উত্তর প্রদেশের কোনো কোনো জেলা শহরেও এই হুকুম জারি হয়েছে। কিন্তু বাঙালি অধ্যুষিত চিত্তরঞ্জন পার্কে এই জাতীয় হুমকি এই প্রথম। ওই গেরুয়াধারী যুবকরা নিজেদের সনাতনী পরিচয় দিলেও কোন সংগঠনের পক্ষে ওই হুকুম জারি করছেন, তা জানা যায়নি।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

দিল্লির বাঙালিপাড়া মাছবাজার বন্ধের হুমকি

আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক: দিল্লির বহু পরিচিত বাঙালি এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে মন্দির ঘেঁষা এক মাছের বাজার বন্ধের হুমকি দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। বাজারে গিয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের তারা জানিয়েছেন, এই বাজার বন্ধ করতে হবে। কারণ মন্দির লাগোয়া এই বাজার মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করছে।
গেরুয়াধারী ওই যুবকরা দোকানি ও ক্রেতাদের বলেন, এই বাজার সনাতন ধর্ম পরিপন্থী কাজ করছে। সনাতন ধর্মে প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। মন্দির ও মাছবাজার একেবারে লাগোয়া। তাই এ বাজার বন্ধ করতে হবে।
গেরুয়াধারী যুবকদের একজন ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটা আমার নির্দেশ।’

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর দক্ষিণ দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে আসা বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিস্তীর্ণ এলাকায় বাঙালিদের জমি দিয়েছিল সরকার। সেখানকার পুরোনো বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ৬০ বছরে এই ধরনের হুমকি এই তল্লাটের কোনো বাজারের দোকানিদের দেওয়া হয়নি। তারা বলেন, বাঙালি ও মাছ প্রায় সমার্থক। এ কথা অবাঙালিদের জানা।

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র গতকাল মঙ্গলবার একটি ভিডিও শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘অনুগ্রহ করে দেখুন কীভাবে বিজেপির গুন্ডারা চিত্তরঞ্জন পার্কের মৎস্যপ্রেমী বাঙালিদের হুমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ৬০ বছরে এমন ঘটনা এই প্রথম।’
ভিডিওতে দেখা যায়, ১ নম্বর মার্কেটের এক দোকানি ওই যুবকদের বলছেন, এই বাজার দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদের (ডিডিএ) তৈরি করা। তারাই এই বাজারে মাছ বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। এর জবাবে এক গেরুয়াধারীকে বলতে শোনা যায়, ডিডিএ এমন বহু অকাজ করেছে। তাদের ব্যবস্থাও করা হবে। আপনাদের বলা হচ্ছে এখানে মাছ বিক্রি না করতে। সনাতন ধর্মে প্রাণী হত্যা অপরাধ। এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, আসামের কামাক্ষ্যা মন্দিরে পশু-প্রাণী বলি হয়। তাকে থামিয়ে ওই যুবক বলেন, সেসবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানেও প্রতিবাদ হচ্ছে। তার দাবি- মন্দির ও বাজারের দেয়াল লাগোয়া। মাছ বিক্রির দরুন মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে।

দোকানিদের দাবি, বাজারের মাছ বিক্রেতারাই ওই মন্দির তৈরি করেছিলেন। সেখানে নিয়মিত পূজা করা হয়। কেউ কোনো দিন কোনো রকম আপত্তি বা প্রতিবাদ করেননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব গণমাধ্যমকে বলেছেন, মনে হচ্ছে ভিডিওটি ভুয়া। মন্দিরের পবিত্রতা প্রত্যেকেরই রক্ষা করা উচিত। এই বাজারের দোকানিরা প্রত্যেকেই সব সময় সেই পবিত্রতা রক্ষা করে চলেছেন। এই বাজার বেআইনি নয়। তাছাড়া এই তল্লাটের বাসিন্দাদের কাছেও মাছ প্রয়োজনীয়। মাছ বিক্রেতারাও সব সময় পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে ব্যবসা করেন।

দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে মাত্র তিন মাস। আম আদমির পার্টির আমলে অবশ্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাম নবমী উপলক্ষে কোনো কোনো এলাকায় মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ রাখার ফরমান জারি করেছেন। উত্তর প্রদেশের কোনো কোনো জেলা শহরেও এই হুকুম জারি হয়েছে। কিন্তু বাঙালি অধ্যুষিত চিত্তরঞ্জন পার্কে এই জাতীয় হুমকি এই প্রথম। ওই গেরুয়াধারী যুবকরা নিজেদের সনাতনী পরিচয় দিলেও কোন সংগঠনের পক্ষে ওই হুকুম জারি করছেন, তা জানা যায়নি।