ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

দিল্লিতে মৃত নারীর হাত প্রতিস্থাপন করা হলো পুরুষের শরীরে

  • আপডেট সময় : ০১:১১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : রংতুলিই ছিল জীবন। ছবি এঁকেই রোজগার হতো। সেই দুই হাতই কাটা পড়ে ট্রেন দুর্ঘটনায়। তারপর থেকেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল বেঁচে থাকা। রোজগার নেই, সংসার চলে না। আর কোনোদিন রংতুলি ধরতে পারবেন না ভেবেই অবসাদে ছিলেন ৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। কিন্তু না জীবন তাকে নতুন সুযোগ দিল। চিকিৎসকদের দক্ষতায় নতুন দুই হাত পেলেন সেই চিত্রশিল্পী। সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ব্রেন-ডেথ এক নারীর দুই হাত ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপারেশনের মাধ্যমে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় ওই চিত্রশিল্পীর কেটে বাদ দেওয়া দুই হাতের জায়গায়। দিল্লিতে এটিই প্রথম হাত প্রতিস্থাপনের অপারেশন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দাতার থেকে নেওয়া হাতের শিরা-ধমনী, হাড়-মজ্জা-মাংস সব নিখুঁতভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফলে নতুন দুই হাত দিয়ে এখন সব কাজই করতে পারবেন শিল্পী। ২০২০ সালে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই হাত কাটা পড়ে বলে জানান ওই চিত্রশিল্পী। তিনি বলেন, সম্প্রতি দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বলেছিলেন হাত প্রতিস্থাপন সম্ভব। শুধু দাতার খোঁজ করতে হবে। সে সুযোগও সামনে আসে তার। মীনা মেহতা নামে ব্রেন-ডেথ এক রোগীর খোঁজ পান চিকিৎসকরা। দক্ষিণ দিল্লির একটি স্কুলের প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন মীনা। তিনি লিখিতভাবেই তার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অনুমতি দিয়ে গিয়েছিলেন। মীনার লিভার, কিডনি, হার্ট নেওয়ার পাশাপাশি দুই হাতও প্রতিস্থাপন করার কথা ভাবেন চিকিৎসকরা। ১২ ঘণ্টার অপারেশনে নিখুঁতভাবে মীনার দুই হাত চিত্রশিল্পীর কাটা হাতের জায়গায় জুড়ে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, মরণোত্তর অঙ্গদানে হৃৎপি-, কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা শোনা গেলেও, ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া রোগীর হাত অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করার কথা সচরাচর শোনা যায় না। বিশ্বে এখনো পর্যন্ত এর সংখ্যা ১১০টির মতো। ভারতে সেই সংখ্যা ১৫। বিশ্বে প্রথম হাত প্রতিস্থাপন হয় ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে। দিল্লির আগেই কলকাতায় হাত প্রতিস্থাপনের সার্জারি হয়েছে এসএসকেএমে। চিকিৎসকরা বলছেন, লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপনের মতোই হাত প্রতিস্থাপনও খুবই জটিল প্রক্রিয়া। দাতার হাত শরীর গ্রহণ করবে কি না সেটাই আসল ব্যাপার। অনেক সময় দেখা যায় হাড়-মাংস বা ধমনী জুড়লেও শরীরে সেই হাত ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না বা নতুন বসানো হাতে রক্ত সরবরাহ হচ্ছে না। তখন বিপদ বাড়বে। শিরা, ধমনী, স্নায়ু ও টেন্ডন (শক্ত ও মোটা তন্তু) সব ঠিকঠাকভাবে জুড়তে হয়। প্লাস্টিক সার্জারি, অর্থোপেডিক, নেফ্রোলজিসহ অনেক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দরকার হয়। চিকিৎসক মতে, এই প্রতিস্থাপনের পরবর্তী অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গ্রহীতার শরীর কতটা গ্রহণ করবে, সেদিকে খুব সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হয়। শরীর যাতে ওই অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান না করে, তার জন্য গ্রহীতাকে সারা বছর ইমিউনো থেরাপি নিতে হবে। যাতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক্ষেত্রে ব্রেন ডেথ ঘোষণার এক থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে দাতার থেকে হাত আহরণ করতে হয়। তার পরে ছ’ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবে এখন উন্নত প্রযুক্তিতে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ (হার্ভেস্টিং) করা যাচ্ছে। সূত্র: এনডিটিভি

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দিল্লিতে মৃত নারীর হাত প্রতিস্থাপন করা হলো পুরুষের শরীরে

আপডেট সময় : ০১:১১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪

বিদেশের খবর ডেস্ক : রংতুলিই ছিল জীবন। ছবি এঁকেই রোজগার হতো। সেই দুই হাতই কাটা পড়ে ট্রেন দুর্ঘটনায়। তারপর থেকেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল বেঁচে থাকা। রোজগার নেই, সংসার চলে না। আর কোনোদিন রংতুলি ধরতে পারবেন না ভেবেই অবসাদে ছিলেন ৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। কিন্তু না জীবন তাকে নতুন সুযোগ দিল। চিকিৎসকদের দক্ষতায় নতুন দুই হাত পেলেন সেই চিত্রশিল্পী। সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ব্রেন-ডেথ এক নারীর দুই হাত ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপারেশনের মাধ্যমে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় ওই চিত্রশিল্পীর কেটে বাদ দেওয়া দুই হাতের জায়গায়। দিল্লিতে এটিই প্রথম হাত প্রতিস্থাপনের অপারেশন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দাতার থেকে নেওয়া হাতের শিরা-ধমনী, হাড়-মজ্জা-মাংস সব নিখুঁতভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফলে নতুন দুই হাত দিয়ে এখন সব কাজই করতে পারবেন শিল্পী। ২০২০ সালে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই হাত কাটা পড়ে বলে জানান ওই চিত্রশিল্পী। তিনি বলেন, সম্প্রতি দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বলেছিলেন হাত প্রতিস্থাপন সম্ভব। শুধু দাতার খোঁজ করতে হবে। সে সুযোগও সামনে আসে তার। মীনা মেহতা নামে ব্রেন-ডেথ এক রোগীর খোঁজ পান চিকিৎসকরা। দক্ষিণ দিল্লির একটি স্কুলের প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন মীনা। তিনি লিখিতভাবেই তার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অনুমতি দিয়ে গিয়েছিলেন। মীনার লিভার, কিডনি, হার্ট নেওয়ার পাশাপাশি দুই হাতও প্রতিস্থাপন করার কথা ভাবেন চিকিৎসকরা। ১২ ঘণ্টার অপারেশনে নিখুঁতভাবে মীনার দুই হাত চিত্রশিল্পীর কাটা হাতের জায়গায় জুড়ে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, মরণোত্তর অঙ্গদানে হৃৎপি-, কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা শোনা গেলেও, ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া রোগীর হাত অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করার কথা সচরাচর শোনা যায় না। বিশ্বে এখনো পর্যন্ত এর সংখ্যা ১১০টির মতো। ভারতে সেই সংখ্যা ১৫। বিশ্বে প্রথম হাত প্রতিস্থাপন হয় ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে। দিল্লির আগেই কলকাতায় হাত প্রতিস্থাপনের সার্জারি হয়েছে এসএসকেএমে। চিকিৎসকরা বলছেন, লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপনের মতোই হাত প্রতিস্থাপনও খুবই জটিল প্রক্রিয়া। দাতার হাত শরীর গ্রহণ করবে কি না সেটাই আসল ব্যাপার। অনেক সময় দেখা যায় হাড়-মাংস বা ধমনী জুড়লেও শরীরে সেই হাত ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না বা নতুন বসানো হাতে রক্ত সরবরাহ হচ্ছে না। তখন বিপদ বাড়বে। শিরা, ধমনী, স্নায়ু ও টেন্ডন (শক্ত ও মোটা তন্তু) সব ঠিকঠাকভাবে জুড়তে হয়। প্লাস্টিক সার্জারি, অর্থোপেডিক, নেফ্রোলজিসহ অনেক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দরকার হয়। চিকিৎসক মতে, এই প্রতিস্থাপনের পরবর্তী অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গ্রহীতার শরীর কতটা গ্রহণ করবে, সেদিকে খুব সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হয়। শরীর যাতে ওই অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান না করে, তার জন্য গ্রহীতাকে সারা বছর ইমিউনো থেরাপি নিতে হবে। যাতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক্ষেত্রে ব্রেন ডেথ ঘোষণার এক থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে দাতার থেকে হাত আহরণ করতে হয়। তার পরে ছ’ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবে এখন উন্নত প্রযুক্তিতে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ (হার্ভেস্টিং) করা যাচ্ছে। সূত্র: এনডিটিভি