বিশেষ সংবাদদাতা : ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে গুরুত্ব পাচ্ছে মহামারি ও বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিও। সূত্রমতে, এখনও করোনার মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভর্তুকিও বাড়ছে। ভর্তুকির টাকা যোগাতে এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১ দশমিক ৩ শতাংশ)। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের হার কমানো হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১১ লাখ উপকারভোগী বাড়ছে। তথ্যানুযায়ী, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে ৮টি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা সংক্রান্ত, বাকি ১১টি খাদ্য সহায়তার। সূত্র জানিয়েছে, নতুন বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক কল্যাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্ম সৃজন, অবসর ও পারিবারিক ভাতা এবং অন্যান্যসহ মোট ছয় খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে ১৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তায় ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিও রয়েছে। নতুন বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে ৩২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা রয়েছে। এ খাতের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, বেদে, হিজড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা হয়। আগামী বছরের বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে রয়েছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রাথমিক ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তিতে এ টাকা ব্যয় হবে। কর্মসৃজন খাতে নতুন বাজেটে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। কাবিখা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে এই টাকা ব্যয় হয়। অবসর ও পারিবারিক ভাতায় নতুন বাজেটে ২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে রয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। বয়স্ক, বিধবা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিতে এ টাকা ব্যয় হবে।
নতুন বাজেটে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আওতা বাড়ছে শুধু বয়স্ক ও বিধবাদের ক্ষেত্রে। এই কর্মসূচির আওতায় নতুন করে আরও ১০০ উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে যুক্ত হবে ১১ লাখ নতুন উপকারভোগী। সবমিলিয়ে নতুন বাজেটে যাদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮ লাখে। এ কর্মসূচির আওতায় গত তিন অর্থ বছর ধরে উপকারভোগীরা মাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রণীত হবে আগামী বাজেট।
দারিদ্র্য হ্রাসে মন্দা কাটানোর চেষ্টা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ