ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা রাজপথে

  • আপডেট সময় : ০২:২৯:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর রাপা প্লাজার সামনে বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করলেন শিক্ষার্থীরা। দেখেন, চালকের লাইসেন্স নেই। পরে বাসের চাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নেমে যান। চালকের দাবি, তাঁর সহকারীর কাছে লাইসেন্স, যানজটে আটকে থাকায় আগেই নেমে গেছেন তিনি।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বাসের চাবি নিয়ে গেলে চালক তাঁদের কাছে অনুরোধ করছিলেন সেটি ফেরত দেওয়ার। শিক্ষার্থীরাও নাছোড়বান্দা। উপস্থিত এক পুলিশ সদস্যকে দেখে তাঁরা বলছিলেন, ‘দেখেন, চালকের লাইসেন্স নাই। মামলা দেন।’ এ সময় শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া কাগজপত্র দেখে উপস্থিত ট্রাফিক সার্জেন্টকে মামলা দিতে বলেন।
নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা, নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান হত্যার বিচার ও গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়াসহ ৯ দফা দাবিতে গতকাল রোববারও পথে নেমেছিলেন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আগামীকাল সোমবার দুপুরে সায়েন্সল্যাব বা রাপা প্লাজার সামনে আবারও বিক্ষোভ শুরুর ঘোষণা দিয়ে দুপুরের পর আজকের মতো সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা গত তিন দিনের মতো আজও সড়ক অবরোধ করে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। কোনো চালকের লাইসেন্স না থাকলে, যানবাহনের কাগজের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কাছে চালকদের নিয়ে আসছিলেন। পুলিশ সদস্যরা কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে মামলা ও জরিমানা করছিলেন।
শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ওসি উৎপল বড়ুয়া। শিক্ষার্থীরা কোনো গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা শেষ করলে দ্রুত সেটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাপা প্লাজার সামনে আজ দুই ঘণ্টায় বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহন করা গাড়ির চাপায় নাঈম হাসান নিহত হয়। সেদিন থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীম নিহত হন। সেদিন থেকে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশবাসীর সমর্থন পেয়েছিল। টানা ৯ দিন রাজপথে আন্দোলনের পর সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির অন্যতম ছিল ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ, লাইসেন্স ছাড়া কেউ যাতে গাড়ি চালাতে না পারে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে পদচারী-সেতুর ব্যবস্থা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় গতিরোধক বা স্পিডব্রেকার বসানো, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নেওয়া ও সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা। সাড়ে তিন বছর আগে করা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তোলা দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা তুলে ধরে আজও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সড়ক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ হবে। এই সময়ে আগের দাবিগুলোর অধিকাংশই পূরণ হয়নি। এই কারণেই সড়কে আবার এক ভাইয়ের রক্ত ঝরল। তাই তো তাঁরা স্লোগান তোলেন, ‘আশ্বাস আর না, বাস্তবায়ন কর না’।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা রাজপথে

আপডেট সময় : ০২:২৯:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর রাপা প্লাজার সামনে বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করলেন শিক্ষার্থীরা। দেখেন, চালকের লাইসেন্স নেই। পরে বাসের চাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নেমে যান। চালকের দাবি, তাঁর সহকারীর কাছে লাইসেন্স, যানজটে আটকে থাকায় আগেই নেমে গেছেন তিনি।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বাসের চাবি নিয়ে গেলে চালক তাঁদের কাছে অনুরোধ করছিলেন সেটি ফেরত দেওয়ার। শিক্ষার্থীরাও নাছোড়বান্দা। উপস্থিত এক পুলিশ সদস্যকে দেখে তাঁরা বলছিলেন, ‘দেখেন, চালকের লাইসেন্স নাই। মামলা দেন।’ এ সময় শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া কাগজপত্র দেখে উপস্থিত ট্রাফিক সার্জেন্টকে মামলা দিতে বলেন।
নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা, নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান হত্যার বিচার ও গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়াসহ ৯ দফা দাবিতে গতকাল রোববারও পথে নেমেছিলেন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আগামীকাল সোমবার দুপুরে সায়েন্সল্যাব বা রাপা প্লাজার সামনে আবারও বিক্ষোভ শুরুর ঘোষণা দিয়ে দুপুরের পর আজকের মতো সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা গত তিন দিনের মতো আজও সড়ক অবরোধ করে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। কোনো চালকের লাইসেন্স না থাকলে, যানবাহনের কাগজের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কাছে চালকদের নিয়ে আসছিলেন। পুলিশ সদস্যরা কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে মামলা ও জরিমানা করছিলেন।
শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ওসি উৎপল বড়ুয়া। শিক্ষার্থীরা কোনো গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা শেষ করলে দ্রুত সেটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাপা প্লাজার সামনে আজ দুই ঘণ্টায় বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহন করা গাড়ির চাপায় নাঈম হাসান নিহত হয়। সেদিন থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীম নিহত হন। সেদিন থেকে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশবাসীর সমর্থন পেয়েছিল। টানা ৯ দিন রাজপথে আন্দোলনের পর সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির অন্যতম ছিল ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ, লাইসেন্স ছাড়া কেউ যাতে গাড়ি চালাতে না পারে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে পদচারী-সেতুর ব্যবস্থা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় গতিরোধক বা স্পিডব্রেকার বসানো, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নেওয়া ও সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা। সাড়ে তিন বছর আগে করা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তোলা দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা তুলে ধরে আজও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সড়ক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ হবে। এই সময়ে আগের দাবিগুলোর অধিকাংশই পূরণ হয়নি। এই কারণেই সড়কে আবার এক ভাইয়ের রক্ত ঝরল। তাই তো তাঁরা স্লোগান তোলেন, ‘আশ্বাস আর না, বাস্তবায়ন কর না’।