ঢাকা ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দাঁড়াতে পারছে না সোলার কোম্পানিগুলো

  • আপডেট সময় : ১১:৫৩:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্যানেল সংযোজনকারী কোম্পানিগুলো দাঁড়াতে পারেনি। উৎপাদনের তুলনায় অপ্রতুল বাজারকেই এর বড় কারণ হিসেবে দেখছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব থাকার কথাও বলছে। যদিও পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের যুক্তি রয়েছে। কিন্তু সম্প্রসারণশীল নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুলভ জোগান দিতে হলে দেশে সোলার সেল এবং প্যানেল তৈরির কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ২০১১ সালের দিকে দেশে কয়েকটি কোম্পানি সোলার প্যানেল সংযোজনের কাজ শুরু করে। কিন্তু তখন দেশে ব্যাপক হারে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। দু-একটা যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চিন্তা হচ্ছিল, সেগুলোও বাইরে থেকে প্যানেল আমদানির প্রস্তাব দিচ্ছিল। প্রথম দিকে ছয়টি কোম্পানি দেশে সোলার প্যানেল বানানোর কাজ শুরু করে। এগুলো হলো, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোলার, রহিম আফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জি, প্যারাসোল সোলার, ওমেরা সোলার, গ্রিন ইনফিনিটি, ইলেক্ট্রোসোলার। কিন্তু এখন ওমেরা আর রহিম আফরোজ ছাড়া বাজারে কেউ তেমন কাজ করছে না। সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রহিম আফরোজের কর্ণধার মনোয়ার মঈন বলেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। জানা যায়, কেবল দেশের অফগ্রিড এলাকায় ছোট ছোট প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরাই ছিল এসব কোম্পানির বড় ভরসা। কিন্তু যখন অফগ্রিড এলাকা সরকার বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে শুরু করলো, তখন সেসব জায়গার মানুষ সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিলো। ফলে এক ধরনের ব্যবসায়িক বিপর্যয় নেমেছে এই খাতে। এছাড়া যেসব বড় প্ল্যান্ট হচ্ছে সেখানে দেশের প্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কোনোদিনই সোলার সেল তৈরির কারখানা ছিল না। দেশের বাইরে থেকে সোলার সেল আমদানি করে দেশে কেবল সেগুলো সংযোজন করে প্যানেল বানানো হতো। এটি খুব বেশি লাভজনক না। আর সোলার সেল তৈরির জন্য যে ধরনের ভারী শিল্প স্থাপন করতে হয়, এখনও দেশের উদ্যোক্তাদের সেই সামর্থ্য নেই। তবে কারিগরি দক্ষতা রয়েছে এমন কারও সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে এ ধরনের শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেই পথ দেখাতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জানতে চাইলে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং রহিম আফরোজ এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার মেজবাহ মঈন বলেন, আমাদের এখানে প্রধান যে প্যানেল উৎপাদন হতো সেগুলো অফগ্রিড এলাকার জন্য হতো। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে দেশি কোম্পানির প্যানেল কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভারতে গত ২০২১ সালে ১০ হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট দেশের কোম্পানির কাছ থেকে প্যানেল নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকারের তরফ থেকেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। সোলার মডিউল প্রস্তুতকারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম বাকী বলেন, নতুন শিল্প বিকাশে যে ধরনের সহায়তা দরকার তা আমরা পাইনি। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে এদিকে কারও খেয়াল নেই। এমতাবস্থায় অচলঅবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ভবিষ্যত।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাঁড়াতে পারছে না সোলার কোম্পানিগুলো

আপডেট সময় : ১১:৫৩:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্যানেল সংযোজনকারী কোম্পানিগুলো দাঁড়াতে পারেনি। উৎপাদনের তুলনায় অপ্রতুল বাজারকেই এর বড় কারণ হিসেবে দেখছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব থাকার কথাও বলছে। যদিও পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের যুক্তি রয়েছে। কিন্তু সম্প্রসারণশীল নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুলভ জোগান দিতে হলে দেশে সোলার সেল এবং প্যানেল তৈরির কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ২০১১ সালের দিকে দেশে কয়েকটি কোম্পানি সোলার প্যানেল সংযোজনের কাজ শুরু করে। কিন্তু তখন দেশে ব্যাপক হারে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। দু-একটা যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চিন্তা হচ্ছিল, সেগুলোও বাইরে থেকে প্যানেল আমদানির প্রস্তাব দিচ্ছিল। প্রথম দিকে ছয়টি কোম্পানি দেশে সোলার প্যানেল বানানোর কাজ শুরু করে। এগুলো হলো, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোলার, রহিম আফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জি, প্যারাসোল সোলার, ওমেরা সোলার, গ্রিন ইনফিনিটি, ইলেক্ট্রোসোলার। কিন্তু এখন ওমেরা আর রহিম আফরোজ ছাড়া বাজারে কেউ তেমন কাজ করছে না। সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রহিম আফরোজের কর্ণধার মনোয়ার মঈন বলেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। জানা যায়, কেবল দেশের অফগ্রিড এলাকায় ছোট ছোট প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরাই ছিল এসব কোম্পানির বড় ভরসা। কিন্তু যখন অফগ্রিড এলাকা সরকার বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে শুরু করলো, তখন সেসব জায়গার মানুষ সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিলো। ফলে এক ধরনের ব্যবসায়িক বিপর্যয় নেমেছে এই খাতে। এছাড়া যেসব বড় প্ল্যান্ট হচ্ছে সেখানে দেশের প্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কোনোদিনই সোলার সেল তৈরির কারখানা ছিল না। দেশের বাইরে থেকে সোলার সেল আমদানি করে দেশে কেবল সেগুলো সংযোজন করে প্যানেল বানানো হতো। এটি খুব বেশি লাভজনক না। আর সোলার সেল তৈরির জন্য যে ধরনের ভারী শিল্প স্থাপন করতে হয়, এখনও দেশের উদ্যোক্তাদের সেই সামর্থ্য নেই। তবে কারিগরি দক্ষতা রয়েছে এমন কারও সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে এ ধরনের শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেই পথ দেখাতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জানতে চাইলে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং রহিম আফরোজ এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার মেজবাহ মঈন বলেন, আমাদের এখানে প্রধান যে প্যানেল উৎপাদন হতো সেগুলো অফগ্রিড এলাকার জন্য হতো। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে দেশি কোম্পানির প্যানেল কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভারতে গত ২০২১ সালে ১০ হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট দেশের কোম্পানির কাছ থেকে প্যানেল নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকারের তরফ থেকেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। সোলার মডিউল প্রস্তুতকারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম বাকী বলেন, নতুন শিল্প বিকাশে যে ধরনের সহায়তা দরকার তা আমরা পাইনি। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে এদিকে কারও খেয়াল নেই। এমতাবস্থায় অচলঅবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ভবিষ্যত।