ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দলের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন রাঙ্গা

  • আপডেট সময় : ০২:২১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি করেছেন দলটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা। তবে নিয়ম অনুসারে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদকে তার পদ থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে রয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা এসব কথা বলেন।
মশিউররহমান রাঙ্গা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহর চেয়েছি। যদি উনি তা না করেন তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। এমন কি সংসদ সদস্য পদটি চলে গেলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। বরং আমি প্রাণ খুলে ঘোরাফেরা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘জিএম কাদের আমাকে বহিষ্কার করতে পারেন, এটা আমি আগেই জানতাম। জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক ধারায় না চললে আমি দলে থাকব না। এমনকি কোনো দলেও যোগদান করব না।’
রাঙ্গা বলেন, ‘আমি কাউন্সিলের সময় বলেছিলাম দলের গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু ধারা গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ওই ধারাগুলো বদলানোর প্রয়োজন। গঠনতন্ত্রেও ওই ধারাগুলো জিএম কাদেরও বদলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু চামচাদের কারণে উনি এই ধারা বহাল রেখেছেন। ধারাটি পরিবর্তন করা না হলে দল করব না। অন্যদলেও যাব না। আগামীতে দু’টি দল ছাড়া আর কোনো দল থাকবে না। আমি থাকি, না থাকি যায় আসে না। দলটা যেন ভালোভাবে চলতে পারে। খরা-বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়াব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধু বলেছি, রওশন এরশাদকে সরানোর প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। এতেই ক্ষেপেছেন জিএম কাদের। আকস্মিকভাবে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমি যদিও এখনো চিঠি পাইনি, মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। ১৮ বছর ধরে প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমাকে কোনো শোকজ করা হয়নি। পান দোকানে কর্মচারীকেও বাদ দিতে গেলে শোকজ করা হয়। আমাদের গঠনতন্ত্রে ধারা ১৩-এ চেয়ারম্যান যা খুশি তাই করতে পারেন।’
‘সম্প্রতি রওশন এরশাদ কাউন্সিলের জন্য চিঠি দেন। সেই চিঠির পর পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকতে বলেন। আমি এজেন্ডার কথা বললে উনি (চেয়ারম্যান) প্রয়োজন নেই বলেন। আমরা ৩১ আগস্ট সভা করি, চিঠিতে সই করা হয় ১ সেপ্টেম্বর। রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর চিঠি দিতে গেলেন। স্পিকার বললেন, কী দিলেন! এই কয়টা দিন উনি থাকলে কী হতো? বলেন জাতীয় পার্টির এই সাবেক নেতা।
রাঙ্গা বলেন, ‘এরশাদ সাহেব মারা গেলে দল ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। একদিকে জিএম কাদের অন্যদিকে রওশন এরশাদ। আমি দু’জনকেই বুঝিয়েছি। রওশন এরশাদ বারবার ডাকলেও আমি তার কাছে যাইনি। দলটি যদি এবার ভাঙে আট ভাগ হবে।’
তিনি বলেন, ‘ আমার ছবিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমার সামনে দিক আপত্তি করব না, এটি গণতান্ত্রিক অধিকার, আমাকে তারা পছন্দ নাও করতে পারেন। গতকাল মারামারি করে লোকজন আহত হয়ে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত, তাতে কি দলের ভালো হবে? আমি বলে দিচ্ছি রংপুরে আর কোনো সংঘাত হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য শেষ হলে প্রশ্ন উত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক জানতে চান জাতীয় পার্টি অগণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হচ্ছে বলে আপনি বলছেন, তা হলে জিএম কাদের বর্তমানে স্বৈরাচারী কায়দায় দল পরিচালনা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি স্বৈরাচারী কায়দায় দল চালাচ্ছেন কি না তা বলব না। তবে দলের গঠনতন্ত্রে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো ধারা থাকা উচিৎ নয়।’
জিএম কাদেরের সকল অপকর্মের ডকুমেন্ট আপনার কাছে আছে। অপকর্মের ওই ডকুমেন্টগুলো আজ সাংবাদিকদের দিবেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘আজকে দেব না। আমার কাছে অনেক ডকুমেন্ট আছে। সময় হলে সব ফাঁস করে দেব।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় সংসদেও বিরোধীদলের চিফ হুইপের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি গত সরকারের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি ৩০০ কোটির উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া তিনি বৃহত্তর রংপুরের জন্য একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।
এর আগে, বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কোনো রকম শোকজ কিংবা নোটিশ ছাড়াই মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। দলটির গত কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। কয়েক মাসের মাথায় তাকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে জাপার তৎকালীন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে রাঙ্গাকে মহাসচিব করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের দলটির চেয়ারম্যানের পদে আসেন। ওই সময় দলটি ভাঙনের মুখে পড়ে। এ সময় শক্তহাতেই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন রাঙ্গা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দলের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন রাঙ্গা

আপডেট সময় : ০২:২১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি করেছেন দলটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা। তবে নিয়ম অনুসারে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদকে তার পদ থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে রয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা এসব কথা বলেন।
মশিউররহমান রাঙ্গা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহর চেয়েছি। যদি উনি তা না করেন তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। এমন কি সংসদ সদস্য পদটি চলে গেলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। বরং আমি প্রাণ খুলে ঘোরাফেরা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘জিএম কাদের আমাকে বহিষ্কার করতে পারেন, এটা আমি আগেই জানতাম। জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক ধারায় না চললে আমি দলে থাকব না। এমনকি কোনো দলেও যোগদান করব না।’
রাঙ্গা বলেন, ‘আমি কাউন্সিলের সময় বলেছিলাম দলের গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু ধারা গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ওই ধারাগুলো বদলানোর প্রয়োজন। গঠনতন্ত্রেও ওই ধারাগুলো জিএম কাদেরও বদলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু চামচাদের কারণে উনি এই ধারা বহাল রেখেছেন। ধারাটি পরিবর্তন করা না হলে দল করব না। অন্যদলেও যাব না। আগামীতে দু’টি দল ছাড়া আর কোনো দল থাকবে না। আমি থাকি, না থাকি যায় আসে না। দলটা যেন ভালোভাবে চলতে পারে। খরা-বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়াব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধু বলেছি, রওশন এরশাদকে সরানোর প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। এতেই ক্ষেপেছেন জিএম কাদের। আকস্মিকভাবে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমি যদিও এখনো চিঠি পাইনি, মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। ১৮ বছর ধরে প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমাকে কোনো শোকজ করা হয়নি। পান দোকানে কর্মচারীকেও বাদ দিতে গেলে শোকজ করা হয়। আমাদের গঠনতন্ত্রে ধারা ১৩-এ চেয়ারম্যান যা খুশি তাই করতে পারেন।’
‘সম্প্রতি রওশন এরশাদ কাউন্সিলের জন্য চিঠি দেন। সেই চিঠির পর পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকতে বলেন। আমি এজেন্ডার কথা বললে উনি (চেয়ারম্যান) প্রয়োজন নেই বলেন। আমরা ৩১ আগস্ট সভা করি, চিঠিতে সই করা হয় ১ সেপ্টেম্বর। রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর চিঠি দিতে গেলেন। স্পিকার বললেন, কী দিলেন! এই কয়টা দিন উনি থাকলে কী হতো? বলেন জাতীয় পার্টির এই সাবেক নেতা।
রাঙ্গা বলেন, ‘এরশাদ সাহেব মারা গেলে দল ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। একদিকে জিএম কাদের অন্যদিকে রওশন এরশাদ। আমি দু’জনকেই বুঝিয়েছি। রওশন এরশাদ বারবার ডাকলেও আমি তার কাছে যাইনি। দলটি যদি এবার ভাঙে আট ভাগ হবে।’
তিনি বলেন, ‘ আমার ছবিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমার সামনে দিক আপত্তি করব না, এটি গণতান্ত্রিক অধিকার, আমাকে তারা পছন্দ নাও করতে পারেন। গতকাল মারামারি করে লোকজন আহত হয়ে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত, তাতে কি দলের ভালো হবে? আমি বলে দিচ্ছি রংপুরে আর কোনো সংঘাত হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য শেষ হলে প্রশ্ন উত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক জানতে চান জাতীয় পার্টি অগণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হচ্ছে বলে আপনি বলছেন, তা হলে জিএম কাদের বর্তমানে স্বৈরাচারী কায়দায় দল পরিচালনা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি স্বৈরাচারী কায়দায় দল চালাচ্ছেন কি না তা বলব না। তবে দলের গঠনতন্ত্রে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো ধারা থাকা উচিৎ নয়।’
জিএম কাদেরের সকল অপকর্মের ডকুমেন্ট আপনার কাছে আছে। অপকর্মের ওই ডকুমেন্টগুলো আজ সাংবাদিকদের দিবেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘আজকে দেব না। আমার কাছে অনেক ডকুমেন্ট আছে। সময় হলে সব ফাঁস করে দেব।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় সংসদেও বিরোধীদলের চিফ হুইপের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি গত সরকারের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি ৩০০ কোটির উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া তিনি বৃহত্তর রংপুরের জন্য একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।
এর আগে, বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কোনো রকম শোকজ কিংবা নোটিশ ছাড়াই মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। দলটির গত কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। কয়েক মাসের মাথায় তাকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে জাপার তৎকালীন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে রাঙ্গাকে মহাসচিব করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের দলটির চেয়ারম্যানের পদে আসেন। ওই সময় দলটি ভাঙনের মুখে পড়ে। এ সময় শক্তহাতেই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন রাঙ্গা।