ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
সাংবাদিকদের জানালেন বার্ন পরিচালক

দগ্ধদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই

  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে ৪৪ জন দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা ৮, গুরুতর অবস্থা ১৩ ও বাকি ২৩ জন মধ্যবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে আহতদের নতুন করে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিংগাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তিনি আমাদের সরাসরি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বা রোগীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা রোগী নিয়ে যে আলোচনা করেছি, উনি আমাদের সঙ্গে কিছু মতামত দিয়েছেন। তার মতামতের ভিত্তিতে আমরা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ঠিক করেছি। বার্নের (পোড়া) ম্যানেজমেন্ট একটি ডায়নামিক প্রক্রিয়া, এটি প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তিত হয়। আমরা ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সিনিয়ররা রোগীদের ব্যাপারে বোর্ড মিটিংয়ে বসব, সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি বার্নেবল (ঝুঁকিপূর্ণ) থাকে। আমরা শিশুদের সবসময় নিয়মিতভাবে চিকিৎসা করে থাকি। আমরা ওই পয়েন্টগুলো ধরেই তাদের চিকিৎসা করছি। তবে রোগীদের যে কন্ডিশন, তাতে তাদের এই মুহূর্তে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে যারা ভর্তি আছে, তারা যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে আবার ইম্প্রুভও করতে পারে বলে জানান তিনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে একটি টিম আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।

বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যু ২৯, চিকিৎসাধীন ৬৯: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়: উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বুধবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৯ জন। এদিন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এক হালনাগাদ তথ্যে এ কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হাসান মো. মঈনুল আহসান এতে স্বাক্ষর করেছেন। যদিও মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছিল মৃত্যু ৩১ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএসপিআরের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২১ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন এবং হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন আছেন। আর মৃতদের মধ্যে ১১ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১৫ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন। আইএসপিআরের সঙ্গে তথ্যে গড়মিল কেন হচ্ছে, এর ব্যাখ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল থেকে একজনের মৃতদেহ সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। সেই সংখ্যাটি নিয়ে আমাদের তথ্যের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আমরা বলেছি ১৫ জন, সিএমএইচে ১৫ জনের মৃতদেহ আছে। যদিও আইএসপিআরের তথ্যে ১৬ জন বলা আছে। তথ্যের পার্থক্যগুলো দূর হতে একটু সময় লাগবে। এছাড়া আইএসপিআরের তথ্যে লুবানা হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওই হাসপাতালের তথ্য সম্পর্কে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের রেজিস্ট্রিতে কোথাও মৃত্যু নেই। কিন্তু তারা মুখে বলছে, দুজনকে মৃত অবস্থায় তাদের অভিভাবকেরা নিয়ে এসেছিলেন। ওই দুজনের নাম পরে কোনো হাসপাতালে আসেনি।

মরদেহ শনাক্তে ১১ জনের ডিএনএ সংগ্রহ: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনও শনাক্ত না হওয়া ছয়টি মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত ১১ জন স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগ। সিআইডি বলছে, মরদেহগুলো যেহেতু শিশুর, তাই শনাক্তের জন্য কেবল বাবা-মায়ের ডিএনএ নমুনাই যথেষ্ট হবে। এর আগে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা সিএমএইচে রাখা অজ্ঞাত ৬ মরদেহ শনাক্তে বুধবার থেকে সিআইডি নমুনা সংগ্রহ শুরু করবে। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার সম্পা ইয়াসমিন বলেন, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার ছয়টি মরদেহ রাখা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। যেগুলোর পরিচয় মেলেনি। ইতোমধ্যে আমরা ওই ছয়টি মরদেহের ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছি; যা থেকে মিলিয়ে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বুধবার সকাল থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত ১১ জন বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে-যদি কারও সন্তান বা স্বজন নিখোঁজ থাকেন এবং তাদের নাম এখনও সরকারি তালিকায় না থাকে, তাহলে মালিবাগে সিআইডি অফিসে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেবেন। শুধু বাবা-মায়ের নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানায় সিআইডি।

বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি পরিচালক আহসান হাবীবকে প্রত্যাহার: বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আহসান হাবীবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার করে বিমান বাহিনীতে ফিরিয়ে নিতে তার চাকরি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. মনিরুল ইসলামকে প্রেষণে বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক নিয়োগ দিয়ে তার চাকরি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

মাইলস্টোনের ফটক আটকানো, বাইরে ভিড়: ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের দুই দিন বাদে ক্যাম্পাসে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বুধবার সকাল থেকে প্রধান ফটকে ভিড় জমান আশেপাশের মানুষ। তবে প্রধান ফটক ভেতর থেকে আটকানো থাকায় তাদের সঙ্গে সংবাদকর্মীরাও ভেতরে যেতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক ডিরেক্টর মনিরুজ্জামান মিয়ার ভাষ্য, বহিরাগতরা অনেক ‘সমস্যা সৃষ্টি করে’ বলে ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিন দিনের জন্য বন্ধ আছে। সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ। প্রশাসনিক কার্যক্রম না। তাদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবীরা কেউ যোগাচ্ছেন রক্তের ডোনার, কারো হাতে পানি-স্যালাইন: জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সামনের সড়কটি অনেকটাই ফাঁকা। সিএনজিচালিত অটোরকিশাসহ রিকশার চলাচল আছে, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খবরের অপেক্ষায় আছেন সাংবাদমাধ্যম কর্মীরা। প্রবেশ গেইটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। রোগীর স্বজন এবং হাসপাতালে দায়িত্বরত ছাড়া কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের সামনে স্বেচ্ছাসেবী কয়েক সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েরও অনেকে ভিড় করেছেন দুর্গতের সেবায়। যাদের কেউ রোগীর স্বজনদের সহযোগিতা করছেন রক্তের ডোনারের খোঁজ দিয়ে। প্রয়োজনে যোগাচ্ছেন খাবার পানি ও স্যালাইনও। বুধবার বার্ন ইন্সটিটিউটের সামনের দৃশ্য ছিল এমনই। ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে বার্ন ইন্সটিটিউটে।

সরকার নির্ধারিত জায়গায় দাফন করতে সম্মত হননি কেউ: উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থান। ঠিক উত্তর কোণের দিকে পড়ে থাকা পুরোনো কয়েকটি কবর, যেগুলোর কোনো নামফলক নেই। অযত্নে গজিয়ে ওঠা ঝোঁপঝাড় আঁকড়ে ধরে রেখেছে কবরগুলোকে। মঙ্গলবারই সেই ঝোঁপঝাড়ের কিছু অংশ পরিষ্কার করা হয়েছে দেখে বোঝা গেলো। কেননা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য এই জায়গাটিই নির্ধারণ করেছে সরকার। পুরোনো কবরের ওপরেই দেওয়া হবে নতুন কবর, এমনটাই সিদ্ধান্ত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহত কাউকেই এখানে দাফন করতে সম্মত হয়নি তাদের পরিবার। নিজ সন্তান বা স্বজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন তারা। তাই উত্তরা ১২ নম্বর কবরস্থানের এই পুরোনো কবরগুলোতে নতুন মাটি পড়েনি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝোঁপঝাড়গুলো।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাংবাদিকদের জানালেন বার্ন পরিচালক

দগ্ধদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই

আপডেট সময় : ০৯:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে ৪৪ জন দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা ৮, গুরুতর অবস্থা ১৩ ও বাকি ২৩ জন মধ্যবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে আহতদের নতুন করে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিংগাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তিনি আমাদের সরাসরি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বা রোগীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা রোগী নিয়ে যে আলোচনা করেছি, উনি আমাদের সঙ্গে কিছু মতামত দিয়েছেন। তার মতামতের ভিত্তিতে আমরা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ঠিক করেছি। বার্নের (পোড়া) ম্যানেজমেন্ট একটি ডায়নামিক প্রক্রিয়া, এটি প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তিত হয়। আমরা ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সিনিয়ররা রোগীদের ব্যাপারে বোর্ড মিটিংয়ে বসব, সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি বার্নেবল (ঝুঁকিপূর্ণ) থাকে। আমরা শিশুদের সবসময় নিয়মিতভাবে চিকিৎসা করে থাকি। আমরা ওই পয়েন্টগুলো ধরেই তাদের চিকিৎসা করছি। তবে রোগীদের যে কন্ডিশন, তাতে তাদের এই মুহূর্তে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে যারা ভর্তি আছে, তারা যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে আবার ইম্প্রুভও করতে পারে বলে জানান তিনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে একটি টিম আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।

বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যু ২৯, চিকিৎসাধীন ৬৯: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়: উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বুধবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৯ জন। এদিন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এক হালনাগাদ তথ্যে এ কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হাসান মো. মঈনুল আহসান এতে স্বাক্ষর করেছেন। যদিও মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছিল মৃত্যু ৩১ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএসপিআরের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২১ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন এবং হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন আছেন। আর মৃতদের মধ্যে ১১ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১৫ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন। আইএসপিআরের সঙ্গে তথ্যে গড়মিল কেন হচ্ছে, এর ব্যাখ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল থেকে একজনের মৃতদেহ সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। সেই সংখ্যাটি নিয়ে আমাদের তথ্যের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আমরা বলেছি ১৫ জন, সিএমএইচে ১৫ জনের মৃতদেহ আছে। যদিও আইএসপিআরের তথ্যে ১৬ জন বলা আছে। তথ্যের পার্থক্যগুলো দূর হতে একটু সময় লাগবে। এছাড়া আইএসপিআরের তথ্যে লুবানা হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওই হাসপাতালের তথ্য সম্পর্কে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের রেজিস্ট্রিতে কোথাও মৃত্যু নেই। কিন্তু তারা মুখে বলছে, দুজনকে মৃত অবস্থায় তাদের অভিভাবকেরা নিয়ে এসেছিলেন। ওই দুজনের নাম পরে কোনো হাসপাতালে আসেনি।

মরদেহ শনাক্তে ১১ জনের ডিএনএ সংগ্রহ: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনও শনাক্ত না হওয়া ছয়টি মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত ১১ জন স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগ। সিআইডি বলছে, মরদেহগুলো যেহেতু শিশুর, তাই শনাক্তের জন্য কেবল বাবা-মায়ের ডিএনএ নমুনাই যথেষ্ট হবে। এর আগে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা সিএমএইচে রাখা অজ্ঞাত ৬ মরদেহ শনাক্তে বুধবার থেকে সিআইডি নমুনা সংগ্রহ শুরু করবে। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার সম্পা ইয়াসমিন বলেন, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার ছয়টি মরদেহ রাখা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। যেগুলোর পরিচয় মেলেনি। ইতোমধ্যে আমরা ওই ছয়টি মরদেহের ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছি; যা থেকে মিলিয়ে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বুধবার সকাল থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত ১১ জন বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে-যদি কারও সন্তান বা স্বজন নিখোঁজ থাকেন এবং তাদের নাম এখনও সরকারি তালিকায় না থাকে, তাহলে মালিবাগে সিআইডি অফিসে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেবেন। শুধু বাবা-মায়ের নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানায় সিআইডি।

বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি পরিচালক আহসান হাবীবকে প্রত্যাহার: বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আহসান হাবীবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার করে বিমান বাহিনীতে ফিরিয়ে নিতে তার চাকরি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. মনিরুল ইসলামকে প্রেষণে বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক নিয়োগ দিয়ে তার চাকরি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

মাইলস্টোনের ফটক আটকানো, বাইরে ভিড়: ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের দুই দিন বাদে ক্যাম্পাসে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বুধবার সকাল থেকে প্রধান ফটকে ভিড় জমান আশেপাশের মানুষ। তবে প্রধান ফটক ভেতর থেকে আটকানো থাকায় তাদের সঙ্গে সংবাদকর্মীরাও ভেতরে যেতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক ডিরেক্টর মনিরুজ্জামান মিয়ার ভাষ্য, বহিরাগতরা অনেক ‘সমস্যা সৃষ্টি করে’ বলে ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিন দিনের জন্য বন্ধ আছে। সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ। প্রশাসনিক কার্যক্রম না। তাদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবীরা কেউ যোগাচ্ছেন রক্তের ডোনার, কারো হাতে পানি-স্যালাইন: জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সামনের সড়কটি অনেকটাই ফাঁকা। সিএনজিচালিত অটোরকিশাসহ রিকশার চলাচল আছে, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খবরের অপেক্ষায় আছেন সাংবাদমাধ্যম কর্মীরা। প্রবেশ গেইটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। রোগীর স্বজন এবং হাসপাতালে দায়িত্বরত ছাড়া কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের সামনে স্বেচ্ছাসেবী কয়েক সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েরও অনেকে ভিড় করেছেন দুর্গতের সেবায়। যাদের কেউ রোগীর স্বজনদের সহযোগিতা করছেন রক্তের ডোনারের খোঁজ দিয়ে। প্রয়োজনে যোগাচ্ছেন খাবার পানি ও স্যালাইনও। বুধবার বার্ন ইন্সটিটিউটের সামনের দৃশ্য ছিল এমনই। ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে বার্ন ইন্সটিটিউটে।

সরকার নির্ধারিত জায়গায় দাফন করতে সম্মত হননি কেউ: উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থান। ঠিক উত্তর কোণের দিকে পড়ে থাকা পুরোনো কয়েকটি কবর, যেগুলোর কোনো নামফলক নেই। অযত্নে গজিয়ে ওঠা ঝোঁপঝাড় আঁকড়ে ধরে রেখেছে কবরগুলোকে। মঙ্গলবারই সেই ঝোঁপঝাড়ের কিছু অংশ পরিষ্কার করা হয়েছে দেখে বোঝা গেলো। কেননা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য এই জায়গাটিই নির্ধারণ করেছে সরকার। পুরোনো কবরের ওপরেই দেওয়া হবে নতুন কবর, এমনটাই সিদ্ধান্ত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহত কাউকেই এখানে দাফন করতে সম্মত হয়নি তাদের পরিবার। নিজ সন্তান বা স্বজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন তারা। তাই উত্তরা ১২ নম্বর কবরস্থানের এই পুরোনো কবরগুলোতে নতুন মাটি পড়েনি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝোঁপঝাড়গুলো।