মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল
আমাদের সড়ক ও মহাসড়কগুলো দেশের অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য ও যাতায়াতের প্রধান ভিত্তি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্য- এসব সড়কের দুপাশ দখল হয়ে যাচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত দোকানপাট, হাট-বাজার, গ্যারেজ, চা-ঢালাই স্টল, এমনকি বসতবাড়ির সম্প্রসারণে। এই দখল শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়; এটি সরাসরি জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করছে। মহাসড়কের দুপাশে দোকানপাট গড়ে উঠলে প্রথমত সড়কের দৃশ্যমানতা কমে যায়। হঠাৎ করে দোকানে ঢোকা-বেরোনো মানুষ, ক্রেতার ভিড়, রাস্তার কিনারায় দাঁড়ানো মোটরসাইকেল বা ভ্যান- এসবের কারণে চালকদের মনোযোগ বিচ্যুত হয়। এতে প্রায়শই বড় ধরনের দুর্ঘটনার কথা আমরা শুনি। বিশেষ করে বাজারসংলগ্ন স্থানে গতি কমানো বা সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনার হার আরো ব্যাপক হয়। অনিয়ন্ত্রিত দখলের কারণে মহাসড়কের মূল নকশাও ব্যাহত হয়। রাস্তার কাঁধ সংকুচিত হয়ে পড়ে, জরুরি মুহূর্তে ওভারটেক করা বা দুর্ঘটনার সময় গাড়ি থামানোও কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, দোকানের ময়লা-আবর্জনা, নির্মাণসামগ্রী কিংবা পণ্য রাস্তার ওপর পর্যন্ত চলে আসে, যা সড়ককে বিপজ্জনক করে তোলে। এসব দোকানপাটের কারণে মহাসড়ক হয়ে যায় জনসমাগমের জায়গা, যা নিয়মতান্ত্রিক চলাচলের জন্য মারাত্মক প্রতিবন্ধক। স্কুল, বাজার, চায়ের দোকান বা গ্যারেজের সামনে যাত্রী উঠানামার জটলা সৃষ্টি হয়- যা মহাসড়কের গতিশীলতার সঙ্গে একেবাড়েই অসামঞ্জস্য।
অতি সম্প্রতি ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় ব্যবসা সংক্রান্ত এক কাজে যাওয়ার সুভাগ্য আমার হয়েছিল। সেখানকার সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছু চিত্র এই লেখায় তুলে ধরছি। এ কথা সত্য যে, দেশ দুটি অর্থনীতির নানান সূচকে আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও যোগাযোগ খাতে দেশ দুটির অগ্রগতি সত্যি অবাক করার মতো।
প্রথমে ইথিওপিয়ার কথা বলছি। বিগত এক দশক ধরে আফ্রিকার অন্যতম বিকাশমান দেশটির অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মতো কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিই ইথিওপিয়ার প্রধান অবলম্বন হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাকশিল্প, টেক্সটাইল, লেদার ইন্ডাস্ট্রি এবং লাইট ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। হাওয়াসা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ কয়েকটি শিল্পাঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। সড়ক, রেল, টেলিকম এবং বিদ্যুতে বড় ধরনের সরকারি বিনিয়োগ অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দিয়েছে। ১১ কোটির বেশি জনসংখ্যা-এর বিশাল অংশ তরুণ- দেশটির অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার সম্ভাবনা তৈরি করছে। শিল্পের রূপান্তর দেশটির আগামী দিনে লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি যে কাউকে অনুপ্রাণিত করবে। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরের গাদা (এঅউঅ) ইকোনমি পার্ক ও জোন ভিজিটে আমাকে যেতে হয়। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, পথিমধ্যে প্রশস্ত রাস্তার দু’পাশে দোকানপাট, অযথা বসতি ও অবৈধ দখলদার চোখে পড়েনি। বরং রাস্তা গতিময়, আধুনিক ও ঝামেলামুক্ত। নেই যানজটের চাপ, নেই ট্রাফিক সিগন্যাল, গাড়ির গতি থাকে স্থির ও নিরাপদ। স্থানে স্থানে রয়েছে পথচারীর জন্য আলাদা ফুটপাত, আলাদা লেন ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে ওঠেছে পরিকল্পিত স্থাপনায়, রাস্তার আশপাশেও নয়। যেকোন দেশের নগর উন্নয়নের চমৎকার উদাহরণ হতে পারে এমন প্রশস্ত, দখলমুক্ত রাস্তা। যেখানে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং দ্রুত যোগাযোগ একসাথে নিশ্চিত। এমন একটি শৃঙ্খলিত সড়কের স্বপ্ন দেখি আমরা, যেখানে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিহিত।
কেনিয়ায় সড়ক অবকাঠামো তুলনামূলকভাবে উন্নত। দেশটির সরকারি হিসেবে, বিটুমিন করা রাস্তার দৈর্ঘ্য বাড়ছে: জাতীয় ও কাউন্টি রাস্তার কিছু অংশ পাকা রয়েছে, কিন্তু বহু রাস্তা এখনো অপরিপূর্ণ বা নির্মাণাধীন। সব রাস্তা নয়, কিছু মহাসড়কে (ঈষধংং অ, ই, ঈ) নিরাপত্তা মূল্যায়ন শুরু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সড়ক নিরাপত্তা সংগঠন ওজঅচ-এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ সেকশন চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এই দুটি প্রসঙ্গ তুলে ধরার মূল কারণ, দেশদুটোর সড়ক ব্যবস্থাপনা কার্যত সীমিত হলে আমাদের চেয়ে উন্নত। মহাসড়কগুলো সুরক্ষায় দেশ দুটি যথেষ্ট দায়িত্বশীল। আমাদের দেশের মতো সড়কের সরকারি জায়গায় ফুটপাত দখল করে দোকানপাট-গ্যারেজ-কলকারখানা-বস্তি বা বসবাস গড়ে উঠেনি। আইন প্রয়োগ ও নজরদারির কারণে এসবের সুযোগও নেই। ফলে দেশ দুটি তাদের বিনিয়োগ-ব্যবস্থাপনা চারদিকে ছড়িয়ে দিতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে।
এই দুটি দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো অর্থনৈতিক অগ্রগতি, যোগাযোগব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও মানুষের চলাচল বৃদ্ধি মহাসড়কগুলো জাতীয় উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি সত্য কিন্তু দুঃখজনক, এসব মহাসড়কেই প্রতিদিন ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ, পঙ্গুত্ববরণ করছে বহু পরিবার। বেশিরভাগ স্থানেই সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে দোকান, স্টল, অবৈধ দখলদার, রিকশা গ্যারেজ, এমনকি রাজনৈতিক দলের অস্থায়ী স্থাপনায়। ফলে যে সড়কে যানজট কমানোর স্বপ্ন ছিল, সেখানে হাঁটাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বলতে দ্বিধা নেই, ময়মনসিংহের ১০ লেন সড়ক কেবল একটি সড়ক নয়- এটি বিভাগীয় শহরের উন্নয়নের প্রতীক। ময়মনসিংহ বর্তমানে ‘বিভাগীয় শহর’ হিসেবে স্বীকৃত। প্রশাসনিক উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বিস্তার, ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য- সবকিছু মিলিয়ে ময়মনসিংহ একটি আধুনিক নগরী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নগরজীবনকে সহজ ও গতিশীল করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, তা এখনো গড়ে উঠেনি। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মহা সড়কটির কথাই ধরুন। এটি ১০ লেনের সড়কের ঘোষণা দেওয়া হয়েছি। সময়ের চাহিদায় এটি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ- এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ১০ লেনের কাজের কোন অগ্রগতি নেই। বলা চলে উন্নয়ন কাজ প্রায় বন্ধ। দৃশ্যমান অগ্রগতি তো নেই বরং নানা স্থানে খানাখন্দে ভরা। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে ঢাকা থেকে সড়ক পথে আমাকে এই বিভাগীয় শহরটিতে যেতে হয়। বিশেষ করে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়ময়সিংহ সড়কটি যেন শত দুর্ভোগের চরম দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মাওনা, শ্রীপুর, জৈনাবাজার, এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার, ভালুকা, ত্রিশালের মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানের দুর্ভোগের চিত্র ভয়াবহ। অথচ সময়ের বাস্তবতায় সড়কটি ১০ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ লেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু সেই সড়ক আজ দুর্ভোগের নতুন প্রতীক। ফুটপাত দখল, বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এই মহাসড়কটি তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ শহর পর্যন্ত এই সমস্যাগুলো দৃশ্যমান। আসলে কোনো শহরের উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয়, যখন মানুষের হাঁটার জায়গা, চলাচলের নিরাপত্তা এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। ময়মনসিংহের সম্ভাবনা বিশাল- কিন্তু সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সমন্বিত পরিকল্পনা, কঠোর বাস্তবায়ন এবং নাগরিকদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সড়ক নিরাপত্তা এখন আর শুধু একটি খাতভিত্তিক সমস্যা নয়; এটি জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। তাই মহাসড়ক সুরক্ষায় এখনই প্রয়োজন সার্বিক, আধুনিক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ।
স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১০ লেনের প্রশস্ত সড়ক শহরের যানবাহনের চাপ কমাবে, জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক হবে, বাণিজ্য ও ব্যবসায়ের প্রসার ঘটাবে এবং নগরজীবনকে বিশ্বমানের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। কিন্তু নানা কারণে সেই সম্ভাবনার বড় অংশ আজ থমকে গেছে। পরিকল্পিত নগরায়ণ ও দৈনন্দিন শৃঙ্খলার ঘাটতি এই সড়ককে এখন এক বিশাল বিশৃঙ্খলার নাম। সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হয় যেন কোনো বাজারপথে হাঁটছি। অনেক স্থানে ফুটপাত নেই- বরং কাঠের বেঞ্চি, স্টল, পলিথিনের ছাউনি, চুলায় ধোঁয়া। রিকশা ও অটোরিকশার চাপ যেকোনো মুহূর্তে সড়কের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করে। বাস ও ট্রাকও একই লেনে চলে, কারণ পৃথক লেন ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রবিন্দু।
ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে ফুটপাত অত্যন্ত প্রশস্ত ও পরিকল্পিত হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায় নির্মাণ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দখলের শুরু। চা-সিগারেটের দোকান, খাবারের স্টল, ফলের ভ্যান, ইলেকট্রিক মেরামতের টেবিল, ছোটখাটো বাজার- সবকিছু ফুটপাত গিলতে শুরু করল। তারপর রাজনৈতিক ব্যানার, দলীয় অফিস, অটোরিকশা গ্যারেজ ও ভ্যানগাড়ির অঘোষিত টার্মিনাল। এ অবস্থায় পথচারীদের সড়কে নেমে হাঁটা ছাড়া উপায় থাকে না। তা শুধু বিপজ্জনকই নয়, একটি উন্নয়নবিমুখ মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। ফুটপাত মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না, দখলদাররা ভোগ করবে- এ রকম চিত্র কোনো সভ্য নগরের সঙ্গে যায় না।
আসলে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো মহাসড়ক। দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, শিক্ষা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত আজ অপরিহার্য। কিন্তু বাস্তবে দেশের অনেক মহাসড়কেই কাক্সিক্ষত মান, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পাওয়া যায় না। দুর্ঘটনা, যানজট, দখল, ভাঙাচোরা রাস্তা, অতিরিক্ত গতি ও নিয়ম না মানার কারণে মহাসড়কগুলো জনগণের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই একটি আদর্শ মহাসড়ক কেমন হওয়া প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা সময়ের দাবি।
মহাসড়ক হতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও টেকসই। বাংলাদেশের জলবায়ু, মাটি ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে বিবেচনায় নিয়ে রাস্তার নির্মাণকাজ করতে হবে। টেকসই উপকরণ ব্যবহার, সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ- এগুলো নিশ্চিত না হলে নির্মাণের অল্প সময়ের মধ্যেই সড়ক নষ্ট হয়ে পড়ে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি রাস্তা প্রশস্ত হওয়া এবং দুই পাশে পরিষ্কার সাইনবোর্ড থাকা জরুরি।
মহাসড়কে শক্তিশালী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, নিয়ম না মানা- এসবই সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। এজন্য সড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে সিসিটিভি ক্যামেরা, স্পিড মনিটরিং সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় জরিমানা আদায় ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আরো দক্ষ করতে হবে। প্রশিক্ষিত হাইওয়ে পুলিশ ও টহল দল থাকলে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
আমরা মনে করি, মহাসড়কের দুপাশ দখলমুক্ত রাখা জরুরি। দোকানপাট, অবৈধ স্থাপনা, গাড়ি পার্কিং বা বাজার বসে গেলে মহাসড়কের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এতে যানজট সৃষ্টি হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে, এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ পড়ে। সরকারকে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান, কঠোর মনিটরিং ও স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে দখলমুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প স্থান নির্ধারণ করে এসব দোকানপাট ও বাজারকে পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে নিতে হবে।
মহাসড়কে প্রতিটি লেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। ভারী যানবাহন, হালকা যানবাহন, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও পথচারীর জন্য পৃথক লেন না থাকলে দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়। উন্নত দেশগুলোতে মহাসড়কের পাশে সার্ভিস লেন থাকে, যেখানে কম গতির যানবাহন সহজে চলতে পারে। আমাদের দেশেও এই ব্যবস্থা চালু করা উচিত। একই সঙ্গে ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস, গার্ডরেল, রোড ডিভাইডার এবং পর্যাপ্ত লাইটিং থাকা প্রয়োজন।
বিশ্রামাগার, টোল প্লাজা, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। দীর্ঘ যাত্রা চালকদের ক্লান্ত করে, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর মানসম্মত বিশ্রামাগার থাকলে চালকরা বিশ্রাম নিতে পারে। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার যান এবং হটলাইন থাকলে দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব। জনসচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া আদর্শ মহাসড়ক সম্ভব নয়। চালকদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স প্রদানের কঠোরতা, সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমে প্রচার সবই প্রয়োজন।
আমি মনে করি, দেশের মহাসড়ক উন্নত হলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে, দুর্ঘটনা কমবে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরবে। তাই মানসম্পন্ন, নিরাপদ, দখলমুক্ত ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মহাসড়ক নির্মাণ আজ অপরিহার্য জাতীয় দাবি। মহাসড়ক নিরাপত্তা একটি সমন্বিত দায়িত্ব- সরকার, চালক, যাত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ জনগণ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হবে, যখন সড়ক হবে নিরাপদ, ভ্রমণ হবে নিশ্চিন্ত, আর এদেশের কোনো পরিবার আর অকারণে প্রিয়জন হারাবে না। মহাসড়ক সুরক্ষায় এখনই প্রয়োজন দৃঢ় সিদ্ধান্ত, কঠোর আইন প্রয়োগ ও মানবিক দায়িত্বশীলতা। আমি দখল-দূষণের কবল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: কলামিস্ট ও শিল্পোদ্যোক্তা
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ























