নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করতে প্রতিটি বাহিনীর জন্য সরকার অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী যুদ্ধ অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদার ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। আমরা সেনাবাহিনীতে নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড যুক্ত করেছি। প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক এবং যুগোপযোগী অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছি।
২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছে বলে জানান তিনি। বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে ৮৩তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের কমিশন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২২’ এ যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতি যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি।
“দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে আমরা সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। গত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে তিনটি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সম্প্রতি মাওয়া-জাজিরাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস এবং মিঠামইন, রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশনের ফরোয়ার্ড বেস এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, “আজকের দিনটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর কাঙ্ক্ষিত কমিশন প্রাপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
“আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আপনাদের উপর ন্যস্ত হলো দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আপনারা যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি মনে করি। জাতির পিতা বলেছিলেন,‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালো বেসো। ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবা, গুরুজনকে মেনো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা’।”
নবীন ক্যাডেটদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতিতে আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। জাতির পিতাই বলে গেছেন সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয় এবং আমরা তা যথাযথভাবে মেনে চলেই আমাদের দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। “যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করে যান। আজকে আমি অন্তত এইটুকু বলতে পারি আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়ন করেছি এবং সেই সাথে বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং সে বছরই বাংলাদেশ জাতিসংঘ কতৃর্ক উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।”
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকের যারা নবীন অফিসার তারই হবেন আমাদের ’৪১-এর সৈনিক এবং তারাই এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেকে গড়ে তুলবেন। লক্ষ্য স্থির রেখে আমরা এগিয়ে যাব।” আওয়ামী লীগের জনসভা উপলক্ষে এক দশক পর রোববার সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছান শেখ হাসিনা। হেলিকপ্টারে করে সীতাকু-ের ভাটিয়ারীতে পৌঁছে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) ৮৩তম লং কোর্সের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন সরকারপ্রধান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তিনি চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে নেমে বিকালে নগরীর পলোগ্রাউন্ডে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখা আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতা দেবেন তিনি।
‘দক্ষ বাহিনী গড়তে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করছি’
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ