ঢাকা ০৪:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫

থাইল্যান্ড সীমান্তে মানবেতর জীবনে মিয়ানমারের হাজারো মানুষ

  • আপডেট সময় : ১১:৪৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২২
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের হাজারো মানুষ থাইল্যান্ড সীমান্তে মোয়ে নদীর পাড়ে তাঁবুতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশটির সেনাবাহানীর ভয়ে তারা বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছে না।
তাদের দাবি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের গ্রামের উপর বোমাবর্ষণ করায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ নদী পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সেখানে শরণার্থী শিবিরগুলোর করুণ দশায় টিকতে না পেরে অনেকে নদীর এপারে মিয়ানমারের অংশে ফিরে গিয়েছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত বছর নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকে স্থানীয় নানা সশস্রবাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর য্দ্ধু চলছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। উদ্বাস্তু ওইসব মানুষদের জন্য আরো বেশি সহায়তা দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
রয়টার্সের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের অংশে মোয়ে নদীর পাড় থেকে ওপাড়ে মিয়ানমারের অংশে চারটি জায়গায় অন্তত দুই হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে আশ্রয় নিয়ে থাকতে দেখেছে। তারা তারপুলিনের তাঁবুতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ত্রাণের খবার ও পানি সংগ্রহ করতে নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডের অংশে আসা ৪২ বছরের সাবাল ফিউ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ওখানে (থাইল্যান্ডের অংশে) আমাদের ভালই ত্রাণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভিড় এত বেশি যে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে আমাদের স্বাধীনতা বেশি।” স্বামী এবং চার সন্তান নিয়ে সাবাল প্রথমে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু থাইল্যান্ডের মায়ে সত শহরের কাছে অন্যান্য শরণার্থীদের সঙ্গে গবাদিপশু রাখার একটি খালি গোয়ালে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। রেড ক্রসের তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমারের প্রায় আট হাজার শরণার্থী থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়ে আছেন। রয়টার্সের পক্ষ থেকে থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে থাই সরকারের মুখপাত্র বলেন, তার দেশ ‘মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদ-ের ভেতরে থেকেই শরণার্থীদের দেখভাল করছে’।
শরণার্থীদের ঠিকঠাক দেখভালের দাবি করলেও থাইল্যান্ড সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধিদের তার দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। মিয়ানমার সরকারও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বের মিয়ানমারের শরণার্থীদের প্রকৃত অবস্থা জানার সুযোগ হচ্ছে না।
ইউএনএইচসিআর থেকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ হিসেবে মশারি, ঘুমানোর ম্যাট, কম্বল এবং মাস্ক পাঠানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন মনে করেন, থাই সরকারের উচিত যুদ্ধের কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য আরো বেশি কিছু করা। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তে শুধু কয়েক প্যাকেট খাবার ও ওষুধ পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং থাইল্যান্ডে সরকারকে শরণার্থীদের জন্য আরো বেশি কিছু করে মানবাধিকারের সুরক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকে সেখানে নানা অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় যোদ্ধাদের লড়াই চলছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

থাইল্যান্ড সীমান্তে মানবেতর জীবনে মিয়ানমারের হাজারো মানুষ

আপডেট সময় : ১১:৪৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের হাজারো মানুষ থাইল্যান্ড সীমান্তে মোয়ে নদীর পাড়ে তাঁবুতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশটির সেনাবাহানীর ভয়ে তারা বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছে না।
তাদের দাবি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের গ্রামের উপর বোমাবর্ষণ করায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ নদী পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সেখানে শরণার্থী শিবিরগুলোর করুণ দশায় টিকতে না পেরে অনেকে নদীর এপারে মিয়ানমারের অংশে ফিরে গিয়েছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত বছর নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকে স্থানীয় নানা সশস্রবাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর য্দ্ধু চলছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। উদ্বাস্তু ওইসব মানুষদের জন্য আরো বেশি সহায়তা দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
রয়টার্সের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের অংশে মোয়ে নদীর পাড় থেকে ওপাড়ে মিয়ানমারের অংশে চারটি জায়গায় অন্তত দুই হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে আশ্রয় নিয়ে থাকতে দেখেছে। তারা তারপুলিনের তাঁবুতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ত্রাণের খবার ও পানি সংগ্রহ করতে নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডের অংশে আসা ৪২ বছরের সাবাল ফিউ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ওখানে (থাইল্যান্ডের অংশে) আমাদের ভালই ত্রাণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভিড় এত বেশি যে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে আমাদের স্বাধীনতা বেশি।” স্বামী এবং চার সন্তান নিয়ে সাবাল প্রথমে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু থাইল্যান্ডের মায়ে সত শহরের কাছে অন্যান্য শরণার্থীদের সঙ্গে গবাদিপশু রাখার একটি খালি গোয়ালে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। রেড ক্রসের তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমারের প্রায় আট হাজার শরণার্থী থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়ে আছেন। রয়টার্সের পক্ষ থেকে থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে থাই সরকারের মুখপাত্র বলেন, তার দেশ ‘মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদ-ের ভেতরে থেকেই শরণার্থীদের দেখভাল করছে’।
শরণার্থীদের ঠিকঠাক দেখভালের দাবি করলেও থাইল্যান্ড সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধিদের তার দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। মিয়ানমার সরকারও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বের মিয়ানমারের শরণার্থীদের প্রকৃত অবস্থা জানার সুযোগ হচ্ছে না।
ইউএনএইচসিআর থেকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ হিসেবে মশারি, ঘুমানোর ম্যাট, কম্বল এবং মাস্ক পাঠানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন মনে করেন, থাই সরকারের উচিত যুদ্ধের কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য আরো বেশি কিছু করা। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তে শুধু কয়েক প্যাকেট খাবার ও ওষুধ পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং থাইল্যান্ডে সরকারকে শরণার্থীদের জন্য আরো বেশি কিছু করে মানবাধিকারের সুরক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকে সেখানে নানা অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় যোদ্ধাদের লড়াই চলছে।