ঢাকা ১২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
কম্বোডিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে নিহত ১১

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ রাজনৈতিক উৎস

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

বিদেশের খবর ডেস্ক: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত সংঘর্ষ হঠাৎ করে নয়, বরং দীর্ঘদিনের উত্তেজনার ফল। সম্প্রতি সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির পেছনে রয়েছে একাধিক ঘটনার ধারাবাহিকতা। দুই দেশ ৫০৮ মাইল (৮১৭ কিলোমিটার) দীর্ঘ একটি স্থলসীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে; যা মূলত ১৯ শতকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল- যখন ফ্রান্স কম্বোডিয়াকে উপনিবেশ হিসেবে শাসন করছিল। এই সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কম্বোডিয়া অতীতে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কাছে গেছে; যার মধ্যে রয়েছে সর্বশেষ সংঘর্ষস্থলও। তবে থাইল্যান্ড এই আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না। তারা দাবি করেছে, সীমান্তের বহু অংশ; বিশেষ করে কয়েকটি প্রাচীন মন্দির সংলগ্ন এলাকা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হয়নি।

২০১১ সালে এমনই এক বিরোধপূর্ণ এলাকায় ১১ শতকের প্রাচীন প্রেয়া বিহার মন্দির ঘিরে থাই ও কম্বোডিয়ান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঐতিহাসিক মন্দিরটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ওই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং অন্তত ২০ জন প্রাণ হারায়। এই দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবং আইনি অস্পষ্টতা দুই দেশের মধ্যে বারবার উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা বর্তমানে নতুন করে সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক সংকটে রূপ নিচ্ছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যখন এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গেল সীমান্ত এলাকায় (যেখানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত মিলেছে) এক সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। উভয় পক্ষই ওই ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করে এবং নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য কাজ করেছে বলে দাবি করে। সংঘর্ষ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও দুই দেশই এর পর থেকে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পথে হাঁটে এবং সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে। থাইল্যান্ড এরপর সীমান্ত চেকপয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে এবং হুমকি দেয় যে তারা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেবে কাম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরগুলোয়। এর জবাবে কাম্বোডিয়া থাই ফলমূল ও শাকসবজি আমদানি বন্ধ করে এবং থাই সিনেমা ও টিভি নাটক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সম্প্রতি একের পর এক ভূমি মাইন বিস্ফোরণ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। এরপর গত ১৬ জুলাই প্রথম বিস্ফোরণে একজন থাই সেনার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর বুধবার (২৩ জুলাই) দ্বিতীয় বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সেনা আহত হন, যাদের মধ্যে একজনের পা কেটে ফেলতে হয়। এরপর বৃহস্পতিবারের সহিংসতা পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে উসকে দেয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে এবং রাজধানী থেকে কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্ত ইস্যু ঘিরে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন ভয়াবহভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে, যার পরিণতি আরো বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।

কম্বোডিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে নিহত ১১
কম্বোডিয়ার ছোড়া একটি রকেট থাইল্যান্ডের একটি ব্যস্ত গ্যাস স্টেশনে আঘাত হানলে কমপক্ষে ৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং আরো ১০ জন আহত হন বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, সিসাকেত প্রদেশের একটি গ্রামে অবস্থিত গ্যাস স্টেশনটি হামলার শিকার হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং সিএনএন কর্তৃক জিওলোকেশন যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত একটি দোকানের সামনে কয়েকজন আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দোকানটির প্রবেশপথ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং জানালাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।

পটভূমিতে ধোঁয়া দেখা যায় এবং আহত একজনকে সহায়তা করতে মানুষ ছুটে আসতে দেখা যায়- যিনি একটি পিকআপ ট্রাকে শুয়ে ছিলেন।

থাই সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী কম্বোডিয়ার বিভিন্ন হামলায় এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ছিল মাত্র ৮ বছরের একটি শিশু। এই মৃতদের মধ্যে দুইজন সুরিন প্রদেশে এবং একজন উবোন রাতচাথানি প্রদেশে নিহত হন।

সীমান্ত এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই সহিংসতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো সংকটময় করে তুলছে। সূত্র: সিএনএন।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ম না মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ১৫ গাড়িচালকের নামে ঝিলমিলে প্লট বরাদ্দ

কম্বোডিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে নিহত ১১

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ রাজনৈতিক উৎস

আপডেট সময় : ০৫:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত সংঘর্ষ হঠাৎ করে নয়, বরং দীর্ঘদিনের উত্তেজনার ফল। সম্প্রতি সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির পেছনে রয়েছে একাধিক ঘটনার ধারাবাহিকতা। দুই দেশ ৫০৮ মাইল (৮১৭ কিলোমিটার) দীর্ঘ একটি স্থলসীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে; যা মূলত ১৯ শতকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল- যখন ফ্রান্স কম্বোডিয়াকে উপনিবেশ হিসেবে শাসন করছিল। এই সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কম্বোডিয়া অতীতে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কাছে গেছে; যার মধ্যে রয়েছে সর্বশেষ সংঘর্ষস্থলও। তবে থাইল্যান্ড এই আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না। তারা দাবি করেছে, সীমান্তের বহু অংশ; বিশেষ করে কয়েকটি প্রাচীন মন্দির সংলগ্ন এলাকা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হয়নি।

২০১১ সালে এমনই এক বিরোধপূর্ণ এলাকায় ১১ শতকের প্রাচীন প্রেয়া বিহার মন্দির ঘিরে থাই ও কম্বোডিয়ান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঐতিহাসিক মন্দিরটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ওই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং অন্তত ২০ জন প্রাণ হারায়। এই দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবং আইনি অস্পষ্টতা দুই দেশের মধ্যে বারবার উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা বর্তমানে নতুন করে সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক সংকটে রূপ নিচ্ছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যখন এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গেল সীমান্ত এলাকায় (যেখানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত মিলেছে) এক সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। উভয় পক্ষই ওই ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করে এবং নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য কাজ করেছে বলে দাবি করে। সংঘর্ষ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও দুই দেশই এর পর থেকে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পথে হাঁটে এবং সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে। থাইল্যান্ড এরপর সীমান্ত চেকপয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে এবং হুমকি দেয় যে তারা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেবে কাম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরগুলোয়। এর জবাবে কাম্বোডিয়া থাই ফলমূল ও শাকসবজি আমদানি বন্ধ করে এবং থাই সিনেমা ও টিভি নাটক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সম্প্রতি একের পর এক ভূমি মাইন বিস্ফোরণ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। এরপর গত ১৬ জুলাই প্রথম বিস্ফোরণে একজন থাই সেনার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর বুধবার (২৩ জুলাই) দ্বিতীয় বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সেনা আহত হন, যাদের মধ্যে একজনের পা কেটে ফেলতে হয়। এরপর বৃহস্পতিবারের সহিংসতা পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে উসকে দেয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে এবং রাজধানী থেকে কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্ত ইস্যু ঘিরে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন ভয়াবহভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে, যার পরিণতি আরো বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।

কম্বোডিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে নিহত ১১
কম্বোডিয়ার ছোড়া একটি রকেট থাইল্যান্ডের একটি ব্যস্ত গ্যাস স্টেশনে আঘাত হানলে কমপক্ষে ৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং আরো ১০ জন আহত হন বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, সিসাকেত প্রদেশের একটি গ্রামে অবস্থিত গ্যাস স্টেশনটি হামলার শিকার হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং সিএনএন কর্তৃক জিওলোকেশন যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত একটি দোকানের সামনে কয়েকজন আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দোকানটির প্রবেশপথ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং জানালাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।

পটভূমিতে ধোঁয়া দেখা যায় এবং আহত একজনকে সহায়তা করতে মানুষ ছুটে আসতে দেখা যায়- যিনি একটি পিকআপ ট্রাকে শুয়ে ছিলেন।

থাই সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী কম্বোডিয়ার বিভিন্ন হামলায় এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ছিল মাত্র ৮ বছরের একটি শিশু। এই মৃতদের মধ্যে দুইজন সুরিন প্রদেশে এবং একজন উবোন রাতচাথানি প্রদেশে নিহত হন।

সীমান্ত এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই সহিংসতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো সংকটময় করে তুলছে। সূত্র: সিএনএন।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ