ঢাকা ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

থমকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মুখে পড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকা আর ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে পার হলো আরেকটি বছর। ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে অল্প দিনের মধ্যে বাংলাদেশে এ রোহিঙ্গা ঢল প্রবেশ করে। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে তাদের বসবাস। এর বাইরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। এদিকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি নিয়ে গতকাল বৃহষ্পতিবার সকালে কক্সবাজারে কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শরণার্থী জীবনের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তারা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের খোলা মাঠে সমাবেশ করেন। সমাবেশে স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে মোনাজাত করেন রোহিঙ্গারা। এতে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা উপস্থিত ছিল। সমাবেশে শিশুদের হাতে হাতে নিজ দেশ মিয়ানমারের পতাকা দেখা গেছে। ফেস্টুনে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট টু ব্যাক হোম’ লেখা ছিল। রোহিঙ্গা শিশুরা জানায়, তারা নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, সেখানে খেলতে চায়, পড়তে চায়। আবদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা শিশু বলে, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে চাই আমরা। এদেশের মানুষ যে পরিমাণ আমাদের ভালোবাসা দিয়েছে, সেটা আমরা কোনো দিন ভুলতে পারব না। আমরা নিজ দেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। উম্মে সালমা বিবি নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই। পশু-পাখির ঘর থাকলেও আমাদের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, প্রত্যাবাসন থমকে গেছে। কারণ মিয়ানমার তাদের ফেরত নিতে চায় না। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে জোরালোভাবে। রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার জুবায়ের বলেন, দিনটি আমাদের জন্য একটি কালো দিন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের এই দিনে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অগ্নিসংযোগ শুরু করে। সেদিন তারা অনেক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল। অসংখ্য মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়। আমরা এক কঠিন অবস্থায় বাংলাদেশে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছি।
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন’
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর বিভিন্ন দেশের চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর পৌরসভায় শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, যখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল তখন এদেশের সরকারের কাছ থেকে অভূতপূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি খুব সহজ নয় যে, এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি সমাধান হবে। এজন্য একত্রে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যদি চায়, তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা যখনই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো তখনই তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। যদি তারা এদেশেই থাকতে চায় তাহলে স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে ক্যাম্পে অবশ্যই তাদের স্বাভাবিক জীবনমান ও রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়াসহ সার্বিক বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর আগে দুই দিনব্যাপী পরিদর্শনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায় হওয়া কাজ মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করেন তিনি। সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট ও জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত মিস নোয়েলিন হেজার। তাদের কাছেও রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে। ক্যাম্প পরিদর্শনে তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কখন কীভাবে হবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ।
কক্সবাজার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৯৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনাখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানব পাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়েছে। এসব কারণে ১ হাজার ৯০৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবশ্যই বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় তথ্যমতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, প্রত্যাবাসন বিষয়টি দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা শুধু রোহিঙ্গাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করাসহ নানা বিষয়ে কাজ করছি। যে কোনো সময় প্রত্যবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে আমরা শতভাগ প্রস্তুত রয়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু না হলেও আপাতত ক্যাম্পে চাপ কমানোর জন্য ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, গেল বছরের শুরুতে চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখা গেলেও ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সেটি থমকে যায়।
ক্যাম্পে কর্মরত কর্মকর্তারা জানিয়েছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বছরে ৩০ হাজার ৪০০ শিশু জন্মগ্রহণ করছে। সে হিসেবে গেল ৫ বছরে প্রায় ২ লাখ শিশু রোহিঙ্গা শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, এ নিয়ে মহা বিপদে রয়েছে কক্সবাজারবাসী। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না গেলে বাংলাদেশ তথা পর্যটন নগরী কক্সবাজার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

থমকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

আপডেট সময় : ০২:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মুখে পড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকা আর ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে পার হলো আরেকটি বছর। ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে অল্প দিনের মধ্যে বাংলাদেশে এ রোহিঙ্গা ঢল প্রবেশ করে। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে তাদের বসবাস। এর বাইরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। এদিকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি নিয়ে গতকাল বৃহষ্পতিবার সকালে কক্সবাজারে কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শরণার্থী জীবনের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তারা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের খোলা মাঠে সমাবেশ করেন। সমাবেশে স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে মোনাজাত করেন রোহিঙ্গারা। এতে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা উপস্থিত ছিল। সমাবেশে শিশুদের হাতে হাতে নিজ দেশ মিয়ানমারের পতাকা দেখা গেছে। ফেস্টুনে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট টু ব্যাক হোম’ লেখা ছিল। রোহিঙ্গা শিশুরা জানায়, তারা নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, সেখানে খেলতে চায়, পড়তে চায়। আবদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা শিশু বলে, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে চাই আমরা। এদেশের মানুষ যে পরিমাণ আমাদের ভালোবাসা দিয়েছে, সেটা আমরা কোনো দিন ভুলতে পারব না। আমরা নিজ দেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। উম্মে সালমা বিবি নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই। পশু-পাখির ঘর থাকলেও আমাদের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, প্রত্যাবাসন থমকে গেছে। কারণ মিয়ানমার তাদের ফেরত নিতে চায় না। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে জোরালোভাবে। রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার জুবায়ের বলেন, দিনটি আমাদের জন্য একটি কালো দিন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের এই দিনে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অগ্নিসংযোগ শুরু করে। সেদিন তারা অনেক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল। অসংখ্য মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়। আমরা এক কঠিন অবস্থায় বাংলাদেশে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছি।
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন’
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর বিভিন্ন দেশের চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর পৌরসভায় শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, যখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল তখন এদেশের সরকারের কাছ থেকে অভূতপূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি খুব সহজ নয় যে, এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি সমাধান হবে। এজন্য একত্রে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যদি চায়, তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা যখনই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো তখনই তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। যদি তারা এদেশেই থাকতে চায় তাহলে স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে ক্যাম্পে অবশ্যই তাদের স্বাভাবিক জীবনমান ও রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়াসহ সার্বিক বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর আগে দুই দিনব্যাপী পরিদর্শনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায় হওয়া কাজ মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করেন তিনি। সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট ও জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত মিস নোয়েলিন হেজার। তাদের কাছেও রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে। ক্যাম্প পরিদর্শনে তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কখন কীভাবে হবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ।
কক্সবাজার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৯৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনাখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানব পাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়েছে। এসব কারণে ১ হাজার ৯০৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবশ্যই বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় তথ্যমতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, প্রত্যাবাসন বিষয়টি দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা শুধু রোহিঙ্গাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করাসহ নানা বিষয়ে কাজ করছি। যে কোনো সময় প্রত্যবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে আমরা শতভাগ প্রস্তুত রয়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু না হলেও আপাতত ক্যাম্পে চাপ কমানোর জন্য ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, গেল বছরের শুরুতে চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখা গেলেও ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সেটি থমকে যায়।
ক্যাম্পে কর্মরত কর্মকর্তারা জানিয়েছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বছরে ৩০ হাজার ৪০০ শিশু জন্মগ্রহণ করছে। সে হিসেবে গেল ৫ বছরে প্রায় ২ লাখ শিশু রোহিঙ্গা শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, এ নিয়ে মহা বিপদে রয়েছে কক্সবাজারবাসী। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না গেলে বাংলাদেশ তথা পর্যটন নগরী কক্সবাজার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।