লাইফস্টাইল ডেস্ক : ঝকঝকে সুন্দর ত্বক সৌন্দর্যের চাবিকাঠি। নিজেকে সবসময় সুন্দর ও আকর্ষণীয় রাখাটা সুস্থ জীবনেরই একটা অংশ। তবে সেলেব্রিটিদের সুস্থ শরীর ও সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য অনেকেই আসল রহস্যের কথা জানিয়েছেন। সেই রহস্যের মূলে রয়েছে পানি। সেলেব্রিটিদের সুন্দর ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যের পিছনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস। স্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, ঝকঝকে ত্বক পেতেও পানি পান করার অবদান রয়েছে। পানি ছাড়া জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে অপরিহার্য হল পানি। শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পানির অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের শরীর প্রায় ৬০ শতাংশ পানি দিয়ে তৈরি। তাই শরীরকে সম্পূর্ণরূপে পরিস্কার করে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোকে নির্গত করে।
মস্তিষ্ক এবং হৃদপি-ে, এ দুটো অঙ্গের ৭৩ শতাংশ জলীয়। সবচেয়ে বেশি পানি থাকে ফুসফুসে। ফুসফুসের ৮৩ শতাংশ পানি। এমনকি শুনতে অবাক হলেও আমাদের চামড়ার ৬৪ শতাংশ জলীয় পদার্থ দ্বারা তৈরি। রক্তকে অনেকে শরীরের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জলীয় পদার্থ মনে করে। বরং রক্তের মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জলীয়। যে হাড় আমরা এত শক্ত ভাবি, তার ৩১ শতাংশ তরল পদার্থ দিয়ে গঠিত। গবেষকরা জানিয়েছেন, পান করা এই পানি শরীর থেকে ঘাম, মূত্র এবং নিশ্বাসের সঙ্গে বের হয়ে আসে। আমাদের শরীরের পানির পরিমাণ ১ থেকে ২ শতাংশ কমে গেলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। পাশাপাশি ত্বকের যতেœর জন্যও সেরা কাজ করে। পর্য়াপ্ত পরিমাণে পানি পান করা হলে শরীরের প্রতিটি কোষকে রক্তের মাধ্যমে হাইড্রেট করা সম্ভব। রক্তের মধ্যে মিশে থাকা বিষাক্ত পদার্থগুলোকে নির্গত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা আবশ্যক। ত্বকের যতেœর জন্য পানির উপকারিতাগুলো একবার দেখে নিনৃ
ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে : ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে তুলতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। ব্রণের ব্রেকআউট, ছিদ্রমুক্ত করতে জলের গুরুত্ব অনেক। শরীরের স্বাস্থ্যকর পিএইচ স্তরও স্বাভাবিকভাবে বজায় থাকে। ত্বকের তারুণ্যভাব ও উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে জল খান পর্যাপ্ত পরিমাণে।
ব্রণের সমস্যা দূর হয় : প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা হলে ত্বকে থাকা অতিরিক্ত তেল নির্গত হয়। অত্যাধিক তেল উৎপাদন ও সিবাম নিঃসরণকেও রোধ করে। ত্বকের উপরিভাগের ছিদ্রগুলোকে পরিস্কার করে ব্রণের প্রবণতাকে ঠেকাতে সাহায্য করে। ব্যস্ত জীবনধারায় সারাদিন হাইড্রেটেড থাকতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান উচিত।
টোনড ত্বকের জন্য : পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করলে ত্বক ও শরীর থেকে টক্সিন বের হয় অনায়াসে। ত্বকের রক্তপ্রবাহকে বৃদ্ধি করে ত্বকের স্বাভাবিক টোনিং বজায় রাখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
ফুসকুড়ি বা জ্বালাভাব দূরে রাখুন : শরীরের প্রয়োজনীয় জলীয় উপাদান শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। গরম আবহাওয়ায় বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের কারণে শরীর অত্যধিক গরম হয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া হলে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। একইভাবে ত্বকের তাপ-সম্পর্কিত ত্বকের সমস্যা যেমন ফুসকুড়ি, ফোঁড়ার মত সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়।
ত্বকে ট্যান পড়া রোধ করে : গরমে তাপের কারণে ত্বকে কালো ছোপ বা ট্যানড পড়ে। রোদে পোড়া দাগ নির্মূল করার জন্য একমাত্র হাতিয়ার হল পানি। ট্যানড বা সান বার্নের দাগ থেকে মুক্তি পেতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান পাবেন। স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ত্বকের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা প্রয়োজন।
ত্বকের অকাল বার্ধক্য রোধ করে : প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীর ও ত্বক হাইড্রেটেড থাকে। ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করতেও সাহায্য করে। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি হলে ত্বক ঝুলে যাওয়া, বলিরেখা স্পষ্ট হওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়ার মত সমস্যা দেখা যায়। প্রতিদিন নিয়ম করে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে অকাল বার্ধক্যের লক্ষণ যেমন ফাইন লাইন, ফোলাভাব এবং বলিরেখা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। তাতে ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করবেন : স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস বা ২ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। তবে আপনি যদি এর চেয়ে বেশি পান করতে পারেন তাহলে আরও ভালো এবং গরমকালে ২ লিটারের চেয়ে বেশি অর্থাৎ কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এছাড়াও যারা পরিশ্রম করে বেশি এবং বেশি বেশি ঘামে তাদের পানির প্রয়োজনীয়তা আরও অনেক। এবং যাদের ওজন বেশি তাদের ও বেশি পানি পান করা উচিত। অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানি কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি পানি পান করতে পারেন।