ঢাকা ০৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

‘তোর বাবার গাড়ি নাকি, ১০ মিনিটের মধ্যে বাংলোতে নিয়ে আসবি’

  • আপডেট সময় : ০১:১৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
  • ১২১ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : গাড়ি দুর্ঘটনা নিয়ে দুই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। দুই শিক্ষককে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তিনি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। উপাচার্যের এমন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ। বঙ্গবন্ধু চত্বরের পাশে প্রধান সড়কে শতাধিক শিক্ষক মানববন্ধনে অংশ নেন। দুপুর ১২টার দিকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এর আগে রোববার (৩ এপ্রিল) রাতে মোবাইল ফোনে দুই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন উপাচার্য। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষক হলেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তফা সামছুজ্জামান এবং পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমন পাল।
গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়েছেন রেজিস্ট্রার। ওই গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এ নিয়ে অধ্যাপক মোস্তফা সামছুজ্জামান ও অধ্যাপক সুমন পালকে গালিগালাজ ও দুর্ব্যবহার করেছেন উপাচার্য। এ নিয়ে আমরা শিক্ষকরা লজ্জিত ও বিব্রতবোধ করছি। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের একটি গাড়ি বরাদ্দ চেয়ে পরিবহন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি দেন। নিয়ম অনুযায়ী ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের বেশি গাড়ি যেতে হলে উপাচার্যের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ঘটনার দিন উপাচার্য ক্যাম্পাসে অবস্থান না করায় লিখিত অনুমতি না নিয়ে পিএস টু ভিসির মাধ্যমে মৌখিক অনুমতি পেয়ে গাড়ি নিয়ে রেজিস্ট্রার ময়মনসিংহে যান। কিন্তু শুক্রবার (১ এপ্রিল) ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় গাড়িটি। এতে রেজিস্ট্রার ও চালক সুস্থ থাকলেও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক অধ্যাপক মোস্তফা সামছুজ্জামান ও পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক সুমন পালকে রবিবার রাতে মোবাইল ফোনে গালিগালাজ করেন উপাচার্য।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অধ্যাপক ড. মোস্তফা সামছুজ্জামান বলেন, ‘গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। উপাচার্য আমাকে বলেছেন, “তোর বাবার গাড়ি নাকি? তুই কেন গাড়ি রেজিস্ট্রারকে দিয়েছিস। ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি বাংলোতে নিয়ে আসবি। তুই গাড়ি গ্যারেজে পাঠিয়েছিস কেন।” একজন উপাচার্যের এসব কি ধরনের ব্যবহার আমি বুঝতেছি না। আমি অযোগ্য হয়ে থাকলে তিনিও অযোগ্য। তিনি জেনে বুঝে এই পদে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই মর্মাহত। আমাদের যদি কোনও পদ্ধতিগত ভুল হয়ে থাকে তিনি ডেকে বলতে পারতেন। কিংবা চিঠি দিতে পারতেন। তা না করে গালিগালাজ করেছেন। আমি চাই না বর্তমানে তিনি আর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করুন।’
অধ্যাপক ড. সুমন পাল বলেছেন, ‘উপাচার্য আমাকে যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক সমিতিকে বিষয়টি জানিয়েছি আমরা।’
গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইন সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে উপাচার্য যে আচরণ করেছেন তা মোটেই শোভনীয় নয়। উপাচার্য বলেছেন কেন তাকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হলো না, বা কে গাড়ি নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি তার মতো গালিগালাজ করে দুই শিক্ষককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সোমবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু দেখা করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভায় অনেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন। আবার অনেকে উপাচার্যকে এ বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করতে বলেছেন। তবে আমরা উপাচার্যের এমন আচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করছি। যে দুজন শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন উপাচার্যের সঙ্গে কাজ করতে আর আগ্রহী নন। আমরা এখন বিষয়টির সুন্দর সমাধান চাচ্ছি।’
ড. মোশাররফ হোসাইন আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলো থেকে শিক্ষকরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখনও রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেওয়া না হলেও ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। তবে রাগের মাথায় কি বলেছি, খেয়াল নেই। তাদের সঙ্গে একটু রাগ করে কথা বলেছি, এটি সত্য। গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে, অথচ ব্যাপারটা তারা আমার কাছে গোপন করেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানানো উচিত ছিল। তারা কেউ আমাকে জানাননি। তিন দিন পর আমি অন্য একজনের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। সেই গাড়ি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়েছে আমাকে না জানিয়ে। আসল ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য তারা এমনটি করেছেন। ৬০ লাখ টাকার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়বে, অথচ উপাচার্যকে জানাবেন না, এজন্য তাদের সঙ্গে রাগ করা যাবে না? গাড়ি দুর্ঘটনার কথা চাপা দিতেই এখন টালবাহানা করছেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ি রেজিস্ট্রার নিয়ে গেছেন। সে বিষয়ে আমি কোনও আপত্তি দিইনি। আমার কথা হলো দুর্ঘটনার পরও আমাকে কেন জানানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনার কথা জানাতে হবে এবং সেই গাড়ি কোথায় কীভাবে মেরামত করা হবে সেটার জন্যও উপাচার্যের অনুমতি লাগবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তাদের সঙ্গে রাগ করা আমার অধিকার। আমি রাগ করতেই পারি। ডিনদের জন্য বরাদ্দকৃত আরেকটি নতুন গাড়ি শহরে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল সপ্তাহ খানেক আগে। অথচ কোনও ডিন সেদিন গাড়ি নিয়ে যাননি। কার অনুমতিতে, কেন রাত ২টা পর্যন্ত গাড়ি শহরে ঘোরাফেরা করে? দুর্ঘটনার দায় কে নেবে? পরিবহন শাখার পরিচালককে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তারা দুটি গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয় আমার কাছে গোপন করে বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। গাড়ি রাস্তায় চলতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। আমি সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না। গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে না জানানোর পর আবার সিলেটের ওয়ার্কশপে মেরামত করতে দিয়েছেন অনুমতি ছাড়াই। সেটি আরেকটি অপরাধ। এই দুটি বিষয়ে আমি রাগ করেছি তাদের ওপর। সরকারি সম্পত্তি দেখার দায়িত্ব আমার ওপর। কোটি টাকার দুটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে সেটা আমাকে জানাবেন না, আবার কিছু বলাও যাবেনা; এটা হতে পারে না। তাদের সঙ্গে রাগ করবো না তো কি আদর করবো।’
গাড়ি দুর্ঘটনার কথা উপাচার্যকে জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমন পাল বলেন, ‘না। দুর্ঘটনার বিষয়ে জানানো হয়নি। আমি যখন জেনেছি দুর্ঘটনা ঘটেছে, গাড়ি গ্যারেজে নেওয়ার কথা বলেছি। আমি গিয়ে দেখেছি, বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। সেক্ষেত্রে ভেবেছি, যখন প্রয়োজন হবে তখন জানাবো উপাচার্যকে। ডিন কাউন্সিলকে যে গাড়ি দেওয়া হয়েছে সে গাড়ির রিকুইজিশন তারা দেখাশোনা করেন। ডিনদের গাড়ি কার জন্য কোথায় গেছে সেটা আমি বলতে পারবো না।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মিটফোর্ড হাসপাতাল ‘শাটডাউন’ ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

‘তোর বাবার গাড়ি নাকি, ১০ মিনিটের মধ্যে বাংলোতে নিয়ে আসবি’

আপডেট সময় : ০১:১৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : গাড়ি দুর্ঘটনা নিয়ে দুই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। দুই শিক্ষককে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তিনি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। উপাচার্যের এমন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ। বঙ্গবন্ধু চত্বরের পাশে প্রধান সড়কে শতাধিক শিক্ষক মানববন্ধনে অংশ নেন। দুপুর ১২টার দিকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এর আগে রোববার (৩ এপ্রিল) রাতে মোবাইল ফোনে দুই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন উপাচার্য। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষক হলেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তফা সামছুজ্জামান এবং পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমন পাল।
গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়েছেন রেজিস্ট্রার। ওই গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এ নিয়ে অধ্যাপক মোস্তফা সামছুজ্জামান ও অধ্যাপক সুমন পালকে গালিগালাজ ও দুর্ব্যবহার করেছেন উপাচার্য। এ নিয়ে আমরা শিক্ষকরা লজ্জিত ও বিব্রতবোধ করছি। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের একটি গাড়ি বরাদ্দ চেয়ে পরিবহন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি দেন। নিয়ম অনুযায়ী ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের বেশি গাড়ি যেতে হলে উপাচার্যের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ঘটনার দিন উপাচার্য ক্যাম্পাসে অবস্থান না করায় লিখিত অনুমতি না নিয়ে পিএস টু ভিসির মাধ্যমে মৌখিক অনুমতি পেয়ে গাড়ি নিয়ে রেজিস্ট্রার ময়মনসিংহে যান। কিন্তু শুক্রবার (১ এপ্রিল) ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় গাড়িটি। এতে রেজিস্ট্রার ও চালক সুস্থ থাকলেও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক অধ্যাপক মোস্তফা সামছুজ্জামান ও পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক সুমন পালকে রবিবার রাতে মোবাইল ফোনে গালিগালাজ করেন উপাচার্য।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অধ্যাপক ড. মোস্তফা সামছুজ্জামান বলেন, ‘গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। উপাচার্য আমাকে বলেছেন, “তোর বাবার গাড়ি নাকি? তুই কেন গাড়ি রেজিস্ট্রারকে দিয়েছিস। ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি বাংলোতে নিয়ে আসবি। তুই গাড়ি গ্যারেজে পাঠিয়েছিস কেন।” একজন উপাচার্যের এসব কি ধরনের ব্যবহার আমি বুঝতেছি না। আমি অযোগ্য হয়ে থাকলে তিনিও অযোগ্য। তিনি জেনে বুঝে এই পদে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই মর্মাহত। আমাদের যদি কোনও পদ্ধতিগত ভুল হয়ে থাকে তিনি ডেকে বলতে পারতেন। কিংবা চিঠি দিতে পারতেন। তা না করে গালিগালাজ করেছেন। আমি চাই না বর্তমানে তিনি আর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করুন।’
অধ্যাপক ড. সুমন পাল বলেছেন, ‘উপাচার্য আমাকে যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক সমিতিকে বিষয়টি জানিয়েছি আমরা।’
গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইন সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে উপাচার্য যে আচরণ করেছেন তা মোটেই শোভনীয় নয়। উপাচার্য বলেছেন কেন তাকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হলো না, বা কে গাড়ি নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি তার মতো গালিগালাজ করে দুই শিক্ষককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সোমবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু দেখা করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভায় অনেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন। আবার অনেকে উপাচার্যকে এ বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করতে বলেছেন। তবে আমরা উপাচার্যের এমন আচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করছি। যে দুজন শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন উপাচার্যের সঙ্গে কাজ করতে আর আগ্রহী নন। আমরা এখন বিষয়টির সুন্দর সমাধান চাচ্ছি।’
ড. মোশাররফ হোসাইন আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলো থেকে শিক্ষকরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখনও রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেওয়া না হলেও ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। তবে রাগের মাথায় কি বলেছি, খেয়াল নেই। তাদের সঙ্গে একটু রাগ করে কথা বলেছি, এটি সত্য। গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে, অথচ ব্যাপারটা তারা আমার কাছে গোপন করেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানানো উচিত ছিল। তারা কেউ আমাকে জানাননি। তিন দিন পর আমি অন্য একজনের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। সেই গাড়ি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়েছে আমাকে না জানিয়ে। আসল ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য তারা এমনটি করেছেন। ৬০ লাখ টাকার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়বে, অথচ উপাচার্যকে জানাবেন না, এজন্য তাদের সঙ্গে রাগ করা যাবে না? গাড়ি দুর্ঘটনার কথা চাপা দিতেই এখন টালবাহানা করছেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ি রেজিস্ট্রার নিয়ে গেছেন। সে বিষয়ে আমি কোনও আপত্তি দিইনি। আমার কথা হলো দুর্ঘটনার পরও আমাকে কেন জানানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনার কথা জানাতে হবে এবং সেই গাড়ি কোথায় কীভাবে মেরামত করা হবে সেটার জন্যও উপাচার্যের অনুমতি লাগবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তাদের সঙ্গে রাগ করা আমার অধিকার। আমি রাগ করতেই পারি। ডিনদের জন্য বরাদ্দকৃত আরেকটি নতুন গাড়ি শহরে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল সপ্তাহ খানেক আগে। অথচ কোনও ডিন সেদিন গাড়ি নিয়ে যাননি। কার অনুমতিতে, কেন রাত ২টা পর্যন্ত গাড়ি শহরে ঘোরাফেরা করে? দুর্ঘটনার দায় কে নেবে? পরিবহন শাখার পরিচালককে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তারা দুটি গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয় আমার কাছে গোপন করে বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। গাড়ি রাস্তায় চলতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। আমি সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না। গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে না জানানোর পর আবার সিলেটের ওয়ার্কশপে মেরামত করতে দিয়েছেন অনুমতি ছাড়াই। সেটি আরেকটি অপরাধ। এই দুটি বিষয়ে আমি রাগ করেছি তাদের ওপর। সরকারি সম্পত্তি দেখার দায়িত্ব আমার ওপর। কোটি টাকার দুটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে সেটা আমাকে জানাবেন না, আবার কিছু বলাও যাবেনা; এটা হতে পারে না। তাদের সঙ্গে রাগ করবো না তো কি আদর করবো।’
গাড়ি দুর্ঘটনার কথা উপাচার্যকে জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমন পাল বলেন, ‘না। দুর্ঘটনার বিষয়ে জানানো হয়নি। আমি যখন জেনেছি দুর্ঘটনা ঘটেছে, গাড়ি গ্যারেজে নেওয়ার কথা বলেছি। আমি গিয়ে দেখেছি, বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। সেক্ষেত্রে ভেবেছি, যখন প্রয়োজন হবে তখন জানাবো উপাচার্যকে। ডিন কাউন্সিলকে যে গাড়ি দেওয়া হয়েছে সে গাড়ির রিকুইজিশন তারা দেখাশোনা করেন। ডিনদের গাড়ি কার জন্য কোথায় গেছে সেটা আমি বলতে পারবো না।’