ঢাকা ১১:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

তেল নিয়ে তেলেসমাতি, দুষছেন একে-অন্যকে

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০২২
  • ৬৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোক্তারা বলছেন, তেলের মূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। তারপরও চাহিদা মতো তারা তেল পান না বাজারে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, অর্ডার করলেও অনেক দিন থেকে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না তারা। পাইকাররা বলছেন, এক ও দুই লিটার অল্প পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে, তাও দাম বেশি। তবে পাঁচ লিটার তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরির উদ্দেশ্যে গুদামে রাখা হাজার লিটার তেল উদ্ধার করছেন। পাশাপাশি জরিমানাও করছেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী ইসমাইল হোসেন। নিয়মিতই মাসের বাজার করেন কারওয়ান বাজার থেকে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) সয়াবিন তেল কিনতে বাজারে গিয়ে কয়েকটি দোকান ঘুরেছেন কিন্তু তেল পাননি। পরে এক দোকানে পান এক লিটারের তেলের বোতল। দোকানি দাম চেয়েছেন ২০০ টাকা। তিনি ১৯০ টাকায় এক লিটার তেল কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন ছিল ৫ লিটারের কিন্তু পেলাম না। এখন এক লিটারই কিনতে হলো ১৯০ টাকায়, তাও দশ দোকান ঘুরে।’
কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেছে। এসব বাজারে সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। হাতিরপুল এসে রোকসানা নামের একজন গৃহিণী বোতলজাত সয়াবিন তেল পাননি বলে জানান রাইজিংবিডিকে। তিনি বলেন, ‘দোকানিকে তেল না থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন, কোম্পানিরা না দিলে আমরা কী করবো? ঈদের আগে থেকে অর্ডার করার পরও দেয়নি। দু-একটি কোম্পানি সরবরাহ করে যা, সেই তেল নিলে এক লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি করা লাগতো। আপনারা তো ২০০ টাকায় নিতেন না। এখন আমরা কী করবো?’
গ্রিন রোডের স্বপ্ন সুপার শপে গিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল তাদের ডিসপ্লেতে নেই। দায়িত্বরত কর্মী জানান, ঈদের আগেই তেল শেষ হয়ে গেছে। সেখানে কেনাকাটা করতে আসা মনির হোসেন বলেন, ‘অনেক দোকান ঘুরলাম কারো কাছে তেল নেই। ভাবলাম এখানে পাবো, অথচ এখানেও নেই।’
নিউমার্কেটে অনেক খুঁজে দুই লিটার তেলের বোতল কিনেছেন নয়ন নামের একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘তেল দরকার বলে দুই লিটার নিলাম ৩৯০ টাকায়। লিটারের দাম পড়লো ১৯৫ টাকা। ’
তেলের দাম জানতে চাইলে হোসেন স্টোরের আরিফ হোসেন বলেন, ‘সাপ্লাই নেই। পাঁচ লিটারের কোনো তেলের বোতল নেই অনেক দিন থেকে। রমজানের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত ডিলাররা পাঁচ লিটারের কোনো তেল সাপ্লাই করেনি। এক-দুই লিটার যা দিচ্ছে, ২০টা অর্ডার দিলে ৬টা দিচ্ছে। আমাদের দিচ্ছে এক লিটার তেল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। আমরা বিক্রি করছি ২০০ টাকায়। ’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারওয়ান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এখন যাদের কাছে তেল মজুত আছে, তারা সয়াবিন তেলের বোতলের মুখ খুলে সে তেল খোলা আকারে বিক্রি করছেন। এতে তাদের লাভ বেশি হচ্ছে, ঝুঁকিও কম। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরকারি রেট ১৬০ টাকা। কিন্তু কেজি হিসাবে ধরলে (এক কেজি সমান ১.০৯ লিটার) তা ১৭৫ টাকা পড়ে। কিন্তু বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। তাই বেশি লাভের আশায় বোতলের তেল খুলে খোলা বিক্রি করছেন এসব ব্যবসায়ীরা।
বিষয়টি স্বীকার করে হাতিরপুলের ব্যবসায়ী মমিনুর রহমান বলেন, ‘এক লিটার বোতলের গায়ে রেট ১৬০ টাকা, কিন্তু আমাদের কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকার বেশি। ক্রেতারা গায়ের রেট দিতে চান, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। তাই আমরা বোতল খুলে তেল বিক্রি করছি। এতে কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। ’ তেলের দাম বেশি-তারপরও সরবরাহ কমের কারণ জানতে চাইলে দেশের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘সরকারের নির্ধারিত দামেই আমরা চাহিদা অনুযায়ী মিল থেকে তেল সরবরাহ করছি। আমাদের উৎপাদন বা সরবরাহে কোনো সংকট নেই। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সঙ্গত কারণে আমাদের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে এমন ভাবনায় ডিলার ও খুচরা দোকানিরা তেল বিক্রি না করে মজুত করছেন। পরে বেশি দামে বিক্রি করবেন, এ কারণেই তারা তেলের সরবরাহের সংকট বলে অজুহাত দেখাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে, তাই এখানেও দাম সমন্বয় করতে হবে। ঈদ শেষ হয়েছে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবো। সেখানে দাম সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করছি বাজারের এই ক্রাইসিস দ্রুত শেষ হবে।’
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক থাকলে তেলের এ সংকট দেখা দিত না। প্রতিটি মার্কেটে পরিবেশক রয়েছে, তারা কি রমজানের সময় চাহিদা অনুযায়ী তেল পেয়েছে? তাহলে কীভাবে তারা দাবি করছে, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক আছে? মিল মালিকরা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেরা ভালো থাকতে চাচ্ছে।’
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘তেলের মূল সমস্যা-সরকার রমজান মাসে যে ১৬০ টাকা লিটার দাম বেঁধে দিয়েছিল, তাতে মিল মালিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তারা আরও বেশি দামে তেল বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার রোজার সময় সেটা করতে দেয়নি। সে কারণেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে সংকট তৈরি করেছে। আর এখন বিভিন্ন পক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার যদি ওই সময় তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তেলের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিত, তাহলে তেলের দাম বেশি হলেও এই সংকট তৈরি হতো না।’
বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিল মালিকরা তেলের সরবরাহ ঠিক রাখলেও ডিলার, পাইকার ও খুচরা দোকানিরা চাহিদা অনুযায়ী তেল বিক্রি করছেন না। যেহেতু ঈদ শেষ হয়েছে, তাই দ্রুত আমরা মিল মালিকদের প্রতিনিধি, পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ডাকবো। আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।’
তেলের মূল্য বৃদ্ধি, বাজারে তেলের সংকটসহ সার্বিক বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেল সংকট নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, মিলগুলো তাদের সরবরাহ ঠিক রাখলেও ডিলার, পাইকার ও খুচরা দোকানিরা চাহিদা অনুযায়ী দোকান থেকে তেল বিক্রি করছেন না। তারা পর্যাপ্ত তেল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযানে গিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছি। এ কারণে আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে তেল মজুত করার দায়ে জরিমানাও করেছি।’
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বক্তব্যের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ ভোজ্যতেল বাল্ক আকারে বিক্রি হয়। কিন্তু অধিকাংশ মিল থেকে বাল্কে তেল বিক্রি করেনি। ঢাকায় বাল্কে তেল বিক্রি করেছে মাত্র তিনটি মিল এবং চট্টগ্রামে দুটি। এর মধ্যে ঢাকায় সিটি, মেঘনা, টি কে গ্রুপ আর চট্টগ্রামে এস আলম আর সিটি গ্রুপ। অন্য যেসব ভোজ্যতেলের প্রতিষ্ঠান আছে, তারা চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করেনি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এসব মিলে তেলের কোনো সংকট নেই। তাই সব মিল চাহিদা মতো সরবরাহ করলেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তেল নিয়ে তেলেসমাতি, দুষছেন একে-অন্যকে

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোক্তারা বলছেন, তেলের মূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। তারপরও চাহিদা মতো তারা তেল পান না বাজারে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, অর্ডার করলেও অনেক দিন থেকে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না তারা। পাইকাররা বলছেন, এক ও দুই লিটার অল্প পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে, তাও দাম বেশি। তবে পাঁচ লিটার তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরির উদ্দেশ্যে গুদামে রাখা হাজার লিটার তেল উদ্ধার করছেন। পাশাপাশি জরিমানাও করছেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী ইসমাইল হোসেন। নিয়মিতই মাসের বাজার করেন কারওয়ান বাজার থেকে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) সয়াবিন তেল কিনতে বাজারে গিয়ে কয়েকটি দোকান ঘুরেছেন কিন্তু তেল পাননি। পরে এক দোকানে পান এক লিটারের তেলের বোতল। দোকানি দাম চেয়েছেন ২০০ টাকা। তিনি ১৯০ টাকায় এক লিটার তেল কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন ছিল ৫ লিটারের কিন্তু পেলাম না। এখন এক লিটারই কিনতে হলো ১৯০ টাকায়, তাও দশ দোকান ঘুরে।’
কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেছে। এসব বাজারে সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। হাতিরপুল এসে রোকসানা নামের একজন গৃহিণী বোতলজাত সয়াবিন তেল পাননি বলে জানান রাইজিংবিডিকে। তিনি বলেন, ‘দোকানিকে তেল না থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন, কোম্পানিরা না দিলে আমরা কী করবো? ঈদের আগে থেকে অর্ডার করার পরও দেয়নি। দু-একটি কোম্পানি সরবরাহ করে যা, সেই তেল নিলে এক লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি করা লাগতো। আপনারা তো ২০০ টাকায় নিতেন না। এখন আমরা কী করবো?’
গ্রিন রোডের স্বপ্ন সুপার শপে গিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল তাদের ডিসপ্লেতে নেই। দায়িত্বরত কর্মী জানান, ঈদের আগেই তেল শেষ হয়ে গেছে। সেখানে কেনাকাটা করতে আসা মনির হোসেন বলেন, ‘অনেক দোকান ঘুরলাম কারো কাছে তেল নেই। ভাবলাম এখানে পাবো, অথচ এখানেও নেই।’
নিউমার্কেটে অনেক খুঁজে দুই লিটার তেলের বোতল কিনেছেন নয়ন নামের একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘তেল দরকার বলে দুই লিটার নিলাম ৩৯০ টাকায়। লিটারের দাম পড়লো ১৯৫ টাকা। ’
তেলের দাম জানতে চাইলে হোসেন স্টোরের আরিফ হোসেন বলেন, ‘সাপ্লাই নেই। পাঁচ লিটারের কোনো তেলের বোতল নেই অনেক দিন থেকে। রমজানের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত ডিলাররা পাঁচ লিটারের কোনো তেল সাপ্লাই করেনি। এক-দুই লিটার যা দিচ্ছে, ২০টা অর্ডার দিলে ৬টা দিচ্ছে। আমাদের দিচ্ছে এক লিটার তেল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। আমরা বিক্রি করছি ২০০ টাকায়। ’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারওয়ান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এখন যাদের কাছে তেল মজুত আছে, তারা সয়াবিন তেলের বোতলের মুখ খুলে সে তেল খোলা আকারে বিক্রি করছেন। এতে তাদের লাভ বেশি হচ্ছে, ঝুঁকিও কম। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরকারি রেট ১৬০ টাকা। কিন্তু কেজি হিসাবে ধরলে (এক কেজি সমান ১.০৯ লিটার) তা ১৭৫ টাকা পড়ে। কিন্তু বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। তাই বেশি লাভের আশায় বোতলের তেল খুলে খোলা বিক্রি করছেন এসব ব্যবসায়ীরা।
বিষয়টি স্বীকার করে হাতিরপুলের ব্যবসায়ী মমিনুর রহমান বলেন, ‘এক লিটার বোতলের গায়ে রেট ১৬০ টাকা, কিন্তু আমাদের কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকার বেশি। ক্রেতারা গায়ের রেট দিতে চান, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। তাই আমরা বোতল খুলে তেল বিক্রি করছি। এতে কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। ’ তেলের দাম বেশি-তারপরও সরবরাহ কমের কারণ জানতে চাইলে দেশের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘সরকারের নির্ধারিত দামেই আমরা চাহিদা অনুযায়ী মিল থেকে তেল সরবরাহ করছি। আমাদের উৎপাদন বা সরবরাহে কোনো সংকট নেই। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সঙ্গত কারণে আমাদের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে এমন ভাবনায় ডিলার ও খুচরা দোকানিরা তেল বিক্রি না করে মজুত করছেন। পরে বেশি দামে বিক্রি করবেন, এ কারণেই তারা তেলের সরবরাহের সংকট বলে অজুহাত দেখাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে, তাই এখানেও দাম সমন্বয় করতে হবে। ঈদ শেষ হয়েছে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবো। সেখানে দাম সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করছি বাজারের এই ক্রাইসিস দ্রুত শেষ হবে।’
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক থাকলে তেলের এ সংকট দেখা দিত না। প্রতিটি মার্কেটে পরিবেশক রয়েছে, তারা কি রমজানের সময় চাহিদা অনুযায়ী তেল পেয়েছে? তাহলে কীভাবে তারা দাবি করছে, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক আছে? মিল মালিকরা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেরা ভালো থাকতে চাচ্ছে।’
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘তেলের মূল সমস্যা-সরকার রমজান মাসে যে ১৬০ টাকা লিটার দাম বেঁধে দিয়েছিল, তাতে মিল মালিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তারা আরও বেশি দামে তেল বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার রোজার সময় সেটা করতে দেয়নি। সে কারণেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে সংকট তৈরি করেছে। আর এখন বিভিন্ন পক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার যদি ওই সময় তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তেলের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিত, তাহলে তেলের দাম বেশি হলেও এই সংকট তৈরি হতো না।’
বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিল মালিকরা তেলের সরবরাহ ঠিক রাখলেও ডিলার, পাইকার ও খুচরা দোকানিরা চাহিদা অনুযায়ী তেল বিক্রি করছেন না। যেহেতু ঈদ শেষ হয়েছে, তাই দ্রুত আমরা মিল মালিকদের প্রতিনিধি, পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ডাকবো। আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।’
তেলের মূল্য বৃদ্ধি, বাজারে তেলের সংকটসহ সার্বিক বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেল সংকট নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, মিলগুলো তাদের সরবরাহ ঠিক রাখলেও ডিলার, পাইকার ও খুচরা দোকানিরা চাহিদা অনুযায়ী দোকান থেকে তেল বিক্রি করছেন না। তারা পর্যাপ্ত তেল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযানে গিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছি। এ কারণে আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে তেল মজুত করার দায়ে জরিমানাও করেছি।’
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বক্তব্যের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ ভোজ্যতেল বাল্ক আকারে বিক্রি হয়। কিন্তু অধিকাংশ মিল থেকে বাল্কে তেল বিক্রি করেনি। ঢাকায় বাল্কে তেল বিক্রি করেছে মাত্র তিনটি মিল এবং চট্টগ্রামে দুটি। এর মধ্যে ঢাকায় সিটি, মেঘনা, টি কে গ্রুপ আর চট্টগ্রামে এস আলম আর সিটি গ্রুপ। অন্য যেসব ভোজ্যতেলের প্রতিষ্ঠান আছে, তারা চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করেনি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এসব মিলে তেলের কোনো সংকট নেই। তাই সব মিল চাহিদা মতো সরবরাহ করলেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে।’