অর্থনৈতিক ডেস্ক : সরকারি খাতে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসে নিয়ম মানছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও সংস্থাটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে চিঠি দিয়ে তাগাদা দেওয়া হলেও তা আমলে নিচ্ছে না সংস্থাটি। কাস্টমস আইন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশ অনুযায়ী, জ্বালানি তেল খালাসের আগে শুল্কায়নের জন্য ঋণপত্র, ইনভয়েসসহ কয়েকটি দলিল জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এসব নথিতে পণ্য আমদানির প্রকৃত মূল্য থাকে। নথি না দেওয়ায় ফার্নেস অয়েল আমদানিতে রাজস্ব কম দিচ্ছে বিপিসি। আবার রাজস্ব খাতে আইন না মানার নজিরও তৈরি করেছে সরকারি এই সংস্থাটি। প্রকৃত তথ্য না দেওয়ায় দিন শেষে আমদানি ব্যয়ের সঠিক তথ্যও মিলছে না। পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সরকারি সংস্থা। জ্বালানি আমদানিতে সংস্থাটির ন্যায্য রাজস্ব না দেওয়ার সুযোগ নেই।
এ বি এম আজাদ, চেয়ারম্যান, বিপিসি জ্বালানি তেল খালাসে নিয়ম পালনের জন্য বিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে গত মার্চে বৈঠক করের কাস্টমস কর্মকর্তারা। সেখানে বিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, ঋণপত্র ও আমদানি দলিলাদি বিপিসির কাছে সংরক্ষিত থাকে। বিপিসি এসব দলিল তাদের কাছে না পাঠানোর কারণে জমা দেওয়া যাচ্ছে না। এই বৈঠকের পর বিপিসিকে চিঠি দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। তবু কাজ হয়নি। কোনো নথিপত্র ছাড়াই শুধু বিল অব এন্ট্রি পূরণ করে পণ্য শুল্কায়নের পর খালাস করছে সংস্থাটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলক এসব নথি জমা না দিলে খালাস দূরের কথা, শুল্কায়নই হওয়ার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা গতকাল বুধবার জানান, সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার জন্যই আইন সমান। এই তাগিদ দিয়ে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বিপিসিকে। রাজস্ব সংরক্ষণে জটিলতা এড়াতে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবু বিপিসি এগিয়ে আসছে না।সরকারি খাতে জ্বালানি পণ্যের ঋণপত্র খুলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি। বিপিসির পক্ষে জ্বালানি তেল খালাস করে সংস্থাটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল, মেঘনা অয়েল ও ইস্টার্ন রিফাইনারি। বিপিসির হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি ৬৬ লাখ টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। জাহাজভাড়া ছাড়া এই জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ৫৫৫ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, একই সময়ে বিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক-কর পরিশোধ করে খালাস করেছে ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টন তেল। নথিপত্র জমা না দিয়ে এসব তেলের ইনভয়েস ভ্যালু বা ঘোষিত মূল্য দেখানো হয়েছে ২৫৫ কোটি ডলার, যা প্রকৃত আমদানি ব্যয়ের অর্ধেক। প্রকৃত তথ্য না দেওয়ায় কীভাবে ফার্নেস অয়েলে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে সংস্থাটি, তা দেখা যাক। ফার্নেস অয়েলে মোট করভার ৩৪ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি খাতে ফার্নেস অয়েল আমদানি হয়। গত নভেম্বর মাসে পদ্মা ও মেঘনা অয়েল প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের আমদানিমূল্য ঘোষণা করেছে ২৬৫ ডলার। অথচ একই সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ফার্নেস অয়েল আমদানি করেছে টনপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫১৮ ডলার করে। ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা আছে। ন্যূনতম মূল্য হলো টনপ্রতি ২৬৫ ডলার। বিশ্ববাজার থেকে যত দরেই কেনা হোক, বিপিসি সব সময় এই মূল্যে আমদানির তথ্য দিচ্ছে। এতে প্রতি টনে সংস্থাটিকে ৯ হাজার টাকা শুল্ককর দিতে হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো গত নভেম্বর মাসে টনপ্রতি রাজস্ব দিয়েছে কমবেশি ১৮ হাজার টাকা। অপরিশোধিত তেল, ডিজেল, অকটেন ও জেট ফুয়েল যে দামে আমদানি হোক, নির্ধারিত মূল্যে (ট্যারিফ ভ্যালু) তা শুল্কায়ন হয়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে রাজস্বহানি হচ্ছে না। তবে আইনের বাধ্যবাধকতা মানা হচ্ছে না। জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সরকারি সংস্থা। জ্বালানি আমদানিতে সংস্থাটি ন্যায্য রাজস্ব না দেওয়ার সুযোগ নেই। আমদানি পণ্য খালাসে নথিপত্র জমা দেওয়ার বিষয় কোম্পানিগুলো দেখছে জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
তেল আমদানি
জ্বালানি তেল খালাসে আইন মানছে না বিপিসি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ