প্রত্যাশা ডেস্ক : তৃতীয়বারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন শি জিনপিং। একই সঙ্গে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) শীর্ষ নেতা থাকছেন তিনি। এর মাধ্যমে মাও সে-তুংয়ের পর দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন শি জিনপিং। গত শনিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলসে সিসিপির সম্মেলন (কংগ্রেস) শেষে আগামী পাঁচ বছরের জন্য চীনকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শি জিনপিংকে নির্বাচিত করা হয়। এরপর গতকাল রোববার (২৩ অক্টোবর) সিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির ২০তম অধিবেশনে সাত সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং (কার্যনির্বাহী) কমিটি ঘোষণা করেন শি, যেখানে তিনি রয়েছেন সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকায়। চীনের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি হলো পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি। তাই প্রত্যাশিতভাবেই এ কমিটিতে নিজের সবচেয়ে কাছের ও অনুগতদের রেখেছেন শি। পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটির অন্য ছয় নেতা হলেন- লি কিয়াং, শাও লেজি, ওয়াং হানিং, কাই কি, ডিং শুয়েশিয়াং এবং লি শি। তাদের মধ্যে দেশটির প্রিমিয়ার বা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে সিপিসি’র নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাননি সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের প্রধান ওয়াং ইয়াংকে। সম্মেলনের আগে ওয়াংকে পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ভাবা হয়েছিল। এ কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন আরও দুজন। তারা হলেন ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝানশু (৭২) ও চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের ভাইস-প্রিমিয়ার হান জেং (৬৮)। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আরও বাদ পড়েছেন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ইয়াং জেচি ও ভাইস প্রিমিয়ার লিউ হে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই (৬৯) নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সম্ভবত তিনি ইয়াং জেইচির স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন পলিটব্যুরোতে। এদিকে, ৭২ বছর বয়সেও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ঝাং ইউক্সিয়াও কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়ে গেছেন। কিন্তু জিনজিয়াং দলের সাবেক প্রধান চেন গুয়ানগু (৬৬) কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ধারণাতীত এ রদবদলের মাধ্যমে শি তার অনুসারী নন, এমন চার প্রবীণ নেতাকে অবসরে পাঠিয়ে নিজের পছন্দের নেতাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো ব্যক্তি কেবল দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন, সংবিধান থেকে এমন নিয়ম বিলুপ্ত করেন শি জিনপিং। এ সংশোধীনই তাকে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনন্দন : চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্র্নিবাচিত হওয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার (২৩ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আপনার পুনর্র্নিবাচন আপনার নেতৃত্ব, সাফল্য ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর চীন এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের আস্থার একটি উপযুক্ত স্বীকৃতি। সিপিসির ২০তম কংগ্রেসের সফল সমাপ্তির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, সিপিসির প্রথম শতবর্ষের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে একটি মধ্যপন্থি সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করা। এই টার্গেট নিয়েই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১২ সালে সিপিসির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ‘উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক নীতি, জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ার পথে চীনকে একটি নতুন যাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আপনার সংকল্প ও নির্দেশনার তারিফ করি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষার প্রতি আপনার অব্যাহত সমর্থনের প্রশংসা করি। আমার বিশ্বাস, আপনি এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও অবদান রাখবেন।’
২০১৬ সালে শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সফরকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ রূপান্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০১৯ সালে চীন সফরকালে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শি জিনপিংয়ের অব্যাহত সাফল্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
তৃতীয়বারের মতো চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় শি জিনপিং
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ