নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ১০টি বিষয়ে সমঝোতা হলেও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি কেন হয়নি, সে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার দেশের কথাগুলো তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর ‘সেবাদাস’ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল গতকাল রোববার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দলের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলের ফখরুল বলেন, এই প্রধানমন্ত্রীর সফরে ‘কোনো সফলতা দেখছেন না’।
“তিনি ভারতে গিয়ে ১০টি চুক্তি করেছেন। বলা হচ্ছে মোমোরেনডাম সই করেছেন, অনেকগুলো তারা চুক্তি করবেন, কারিগরি দল পাঠাবেন সেগুলো। কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো, আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না, সে ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্তু কী হয়েছে? তিস্তা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারতবর্ষ প্রস্তাব করেছে। “আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার, আমরা সবার আগে তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন চাই এবং অভিন্ন যে সমস্ত নদীগুলো আছে, প্রত্যেকটি নদীর আমরা ন্যায্য হিস্যা চাই। এটা আমাদের অধিকার, আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার। এই কথাগুলো সরকার বলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।”
ফখরুল বলেন, “তারা (সরকার) সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু ভারত নয়, সমগ্র আশে-পাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে তারা পুরোপুরি মাথা নীচু করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে।
“মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, জবাবটাও পর্যন্ত তারা দিতে পারে না। এই একটা অথর্ব নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপরে চেপে বসে আছে।”
সরকার বাংলাদেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, “তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। “এই সরকার একটা অবৈধ সরকার। তারা সমস্ত দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে।”
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না শেখ হাসিনা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। সর্বশেষ গত শুক্রবার (২১ জুন) শেষ রাতে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা সেখানে কাউকে প্রবেশ করতেও দিচ্ছেন না। রোববার (২৩ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটা-নাগাদ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। চিকিৎসকেরা দফায় দফায় পর্যালোচনা করে তার পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার হার্টে পেসমেকার লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে রোববার (২৩ জুন) এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। যদিও বিএনপির দায়িত্বশীলরা তা অস্বীকার করেননি। এক নেতার ভাষ্য, ‘আজ পেসমেকার লাগানো হতে পারে, কিংবা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন চিকিৎসকেরা। স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে, গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার নয়া পল্টনে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলে দলের মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। শনিবার (২২ জুন) রুহুল কবির রিজভী সারা দেশে রোববার (২৩ জুন) দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড বার বার বলেছেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা এখানে (বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে, তার চিকিৎসা করাতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন… বার বার একথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেওÑদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে এমনকি বিদেশি মিশনগুলো এখানে (বাংলাদেশে) আছে, তারাও বার বার বলেছে, বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলেছে।’ ‘কিন্তু শেখ হাসিনা তার যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সেই প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে, তাকে কোনোভাবে (বিদেশে) চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বিস্ময়: গণমাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশে উষ্মা প্রকাশ করে বাহিনীর কর্মকর্তাদের সংগঠন পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে, তারও প্রতিক্রিয়া জানান ফখরুল। তিনি বলেন, “কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, তাদের দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান (আজিজ আহমেদ), তার দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়েছে। আবারো কয়েকজন পুলিশের দুর্নীতি কাহিনী বেরিয়ে আসছে। “আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে, গত পরশু পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন থেকে সাংবাদিকদেরকে ‘সত্য প্রকাশে হুমকি দিয়ে’ একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে যে, এই সত্য (পুলিশের দুর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ, এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়।” ফখরুলের দাবি, পুলিশ বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ে তুলেছে এবং সেটি দেশবাসী কেবল নয়, জানে সারা পৃথিবী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুও মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।