অর্থনৈতিক ডেস্ক: ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দেওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারব বলে আশা করছি। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহ থেকে গ্রাহকরা আর ফিরে যাবে না। একই সঙ্গে বন্ধের পর্যায়ে যাবে না ন্যাশনাল ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে ‘ন্যাশনাল ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা ও আগামী কর্মপরিকল্পনা’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা তিনি।
লিখিত বক্তব্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সাম্প্রতিককালে ব্যাংকিং খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতি চরম মন্দা ও তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যায়। যার মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকও রয়েছে। এই ক্ষতির বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও গুজব। যার ফলে গ্রাহক এবং আমানতকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং ব্যাংকিং খাতের প্রতি তাদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক-কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর আওতায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে। নতুন পরিচালনা পর্যদের তত্ত্বাবধানে এই কঠিন সময়েও ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত ‘গার্মেন্টস শিল্প ও কারখানাগুলো’ পাশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষত এলসি সুবিধা প্রদানসহ গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করায় ন্যাশনাল ব্যাংক সদা সচেষ্ট। এর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল ব্যাংক যথেষ্ট সচেষ্ট আছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়েও রেমিট্যান্সে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থান দৃঢ় রয়েছে। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ঋণ খেলাপিদের প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের জবাবে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির নাম আমরা বলতে চাচ্ছি না। এই ব্যাংকে অনিয়ম ছিল নানা মাত্রিক ও পাক্ষিক। আমরা সেগুলো অডিট করার কাজ করছি। আমরা তাদের শনাক্ত করার ও টাকা পুনরুদ্ধারের কাজ করছি। এই ব্যাংকে যেন আর কোনো রকম অনিয়ম না হয়, সেই জন্য কিছু কমিটি করে দিয়েছি। আমরা বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের বিদেশে থাকা রেমিট্যান্স হাবগুলোকে একটিভ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
গ্রহকদের যেন ফিরে যেতে না হয়, এ উদ্যোগের কথা জানিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, এটা সত্যি, আমাদের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। অনেক গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই আস্থা উদ্ধারের কাজ করছি। এখনও কিছু গ্রাহকদের ফিরে যেতে হচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারব বলে আশা করছি। এই সপ্তাহ থেকে গ্রাহকরা ফিরে যাবে না।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, গত কয়েক বছরে মজুরি যে হারে বেড়েছে, ব্যয় তার থেকে অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে জাতীয় সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। যার চাপ ন্যাশনাল ব্যাংকের ওপরও পড়েছে। তবে ন্যাশনাল ব্যংক এমন পর্যায়ে যাবে না যে, বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু গ্রাহকরা যদি সবাই একসঙ্গে টাকা তুলে নেন তাহলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকই টিকবে না। আমরা গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে চাই, তাদের চিন্তার কিছু নেই। ন্যাশনাল ব্যাংকে গত তিন মাস কোনো অনিয়ম হয়নি। আশা করছি, ভবিষ্যতেও হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকরা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. তৌহিদুল আলম খানসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
‘তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হবে ন্যাশনাল ব্যাংক’
জনপ্রিয় সংবাদ