নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণ চেয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা। অপসারণের জন্য তিন দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
সংগঠনটির ব্যানারে আন্দোলনে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বাস ও আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় তাই তাঁর অপসারণের দাবি তোলা হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের নেতারা এই দাবি জানান। আগামী বৃহস্পতিবারের (২৯ মে) মধ্যে তাঁকে অপসারণের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে লাগাতার অসহযোগ’ কর্মসূচি যথারীতি কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা অব্যাহত থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন, উপকর কমিশনার রইসুন নেসা, এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল। এ সময় অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা আশা করি, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার কর-রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, কর-রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান, দক্ষতা ও বাস্তব কর্ম-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান পদে পূর্ণকালীন দায়িত্ব প্রদান করবেন।
রাজস্ব ক্ষতি পোষাতে প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় কাজ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। প্রয়োজনে প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা বেশি কাজ করবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগামী মাসে ‘কেমন এনবিআর চাই’ এই শিরোনামে সেমিনারের আয়োজনের কথাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এর আগে গত রোববার (২৫ মে) রাতে চলমান আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব দপ্তরে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচিও আপাতত স্থগিত রয়েছে।
গত রোববার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। তার আগে অবশ্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। ঘোষিত ওই কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয়ে কর্মবিরতির কথা ছিল। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবাকেও এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়। তবে ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম আমদানি কর্মবিরতির আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। এরপরই নড়েচড়ে বসে অর্থ মন্ত্রণালয়। সমঝোতার প্রক্রিয়া হিসেবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অধ্যাদেশ স্থগিতের আশ্বাস দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ চালুর ঘোষণা দিয়ে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুধু এনবিআর নয়, ঢাকা কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ভোমরা স্থলবন্দরসহ দেশের অন্যান্য শুল্ক স্টেশনেও কয়েক দিন ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি মূলত চারটি। প্রথমত, জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; দ্বিতীয়ত, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ; তৃতীয়ত, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং চতুর্থত, এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।
পরিষদ বলেছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আশা করে, আগামী ৩১ জুলাই তারিখের মধ্যে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর লক্ষ্যে সরকার খুব শীঘ্রই আলোচনা শুরুসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দৃশ্যমান করবে।