ঢাকা ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

তিনি একাই ক্লাস নেন, ঘণ্টা বাজান, ঝাড়ুও দেন!

  • আপডেট সময় : ০২:০০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত দুলালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে প্রায় একশ শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। কর্মরত ওই শিক্ষকের নাম মো. আবদুল লতিফ। তিনি একাই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, কেরানি ও দপ্তরির দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুলালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর অবসরে যান। তার আগে আরও দুইজন সহকারী শিক্ষক অবসরে যান। তারপর থেকেই একা হয়ে পড়েন লতিফ।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে দেখা যায়, আবদুল লতিফ তিন শ্রেণিতে একসঙ্গে ক্লাস নিচ্ছেন। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে যাচ্ছেন। শিক্ষক যে ক্লাসে আছেন সেই ক্লাস নীরব থাকলেও অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা হৈচৈ করতে থাকে।
জানতে চাইলে আবদুল লতিফ বলেন, শুক্রবার ও বন্ধের দিন বাদে প্রতিদিন সকাল নয়টায় বিদ্যালয়ে এসে চারটি কক্ষের তালা খুলে ঝাড়ু দেই। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে সব ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। হাজিরা খাতায় নাম লিখতে হয়। আবার ঘণ্টাও বাজাতে হয়। পরীক্ষাও চালাতে হয়। মাসে কমপক্ষে চার-পাঁচবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে নানা কাজে যেতে হয়। এ ছাড়া উপবৃত্তির তালিকার মতো সময় সাপেক্ষ কাজও করতে হয়। আমি আর পারছি না।
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাদ রায়হান ও মায়মুনা বলেন, স্যারের খুব কষ্ট। একবার পড়ায় আবার বেল (ঘণ্টা) বাজায়। অভিভাবক মোর্শেদ আলী ও শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকের অভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো লেখাপড়া হচ্ছে না। অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, একজন শিক্ষক দিয়া কি কোন স্কুল চলে। এই স্কুল থাকা না থাকা সমান কথা।
ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মো. হাসান আলী জানান, ২০১৫ সালে এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল ৩ শতাধিক। বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৯২ জন। লতিফ স্যার বাদে আর সবাই অবসরে যাওয়ায় পর সরকার নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। ফলে ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তারা আশেপাশের মাদ্রাসাগুলোতে চলে গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো মাসুদুর রহমান বলেন, বদলি বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট দূর করা যাচ্ছে না। রবিবার ওই বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে দেয়া হয়েছে। বদলি প্রক্রিয়া শুরু হলে ওই বিদ্যালয়ের দ্রুতই বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকটের সমাধান করা যাবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করল…

তিনি একাই ক্লাস নেন, ঘণ্টা বাজান, ঝাড়ুও দেন!

আপডেট সময় : ০২:০০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত দুলালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে প্রায় একশ শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। কর্মরত ওই শিক্ষকের নাম মো. আবদুল লতিফ। তিনি একাই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, কেরানি ও দপ্তরির দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুলালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর অবসরে যান। তার আগে আরও দুইজন সহকারী শিক্ষক অবসরে যান। তারপর থেকেই একা হয়ে পড়েন লতিফ।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে দেখা যায়, আবদুল লতিফ তিন শ্রেণিতে একসঙ্গে ক্লাস নিচ্ছেন। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে যাচ্ছেন। শিক্ষক যে ক্লাসে আছেন সেই ক্লাস নীরব থাকলেও অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা হৈচৈ করতে থাকে।
জানতে চাইলে আবদুল লতিফ বলেন, শুক্রবার ও বন্ধের দিন বাদে প্রতিদিন সকাল নয়টায় বিদ্যালয়ে এসে চারটি কক্ষের তালা খুলে ঝাড়ু দেই। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে সব ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। হাজিরা খাতায় নাম লিখতে হয়। আবার ঘণ্টাও বাজাতে হয়। পরীক্ষাও চালাতে হয়। মাসে কমপক্ষে চার-পাঁচবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে নানা কাজে যেতে হয়। এ ছাড়া উপবৃত্তির তালিকার মতো সময় সাপেক্ষ কাজও করতে হয়। আমি আর পারছি না।
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাদ রায়হান ও মায়মুনা বলেন, স্যারের খুব কষ্ট। একবার পড়ায় আবার বেল (ঘণ্টা) বাজায়। অভিভাবক মোর্শেদ আলী ও শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকের অভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো লেখাপড়া হচ্ছে না। অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, একজন শিক্ষক দিয়া কি কোন স্কুল চলে। এই স্কুল থাকা না থাকা সমান কথা।
ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মো. হাসান আলী জানান, ২০১৫ সালে এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল ৩ শতাধিক। বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৯২ জন। লতিফ স্যার বাদে আর সবাই অবসরে যাওয়ায় পর সরকার নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। ফলে ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তারা আশেপাশের মাদ্রাসাগুলোতে চলে গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো মাসুদুর রহমান বলেন, বদলি বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট দূর করা যাচ্ছে না। রবিবার ওই বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে দেয়া হয়েছে। বদলি প্রক্রিয়া শুরু হলে ওই বিদ্যালয়ের দ্রুতই বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকটের সমাধান করা যাবে।