অগ্রঃ-বিসর্গ : সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় মহামারির সময়ে তিনশ বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছন উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। বাল্যবিয়ে বন্ধের অভিজ্ঞতা, নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হোন এই কর্মকর্তা।
হ্যালো: বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে তালা উপজেলার প্রেক্ষাপটটি জানতে চাই?
নাজমুন নাহার: আমি যখন তালা উপজেলায় অর্থাৎ আমার কর্মস্থলে যোগদান করি তখন তালা উপজেলায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা অনেক বেশি ছিল। নতুন কর্মস্থল হওয়ায় সর্ব প্রথম বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে একটু সমস্যা হয়। আস্তে আস্তে আমি একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করি। যাদের মাধ্যমে আমি বাল্যবিবাহের তথ্য পেতে থাকি। সেই তথ্য অনুযায়ী আমি আমার টিম নিয়ে বিয়েগুলো প্রতিরোধ করি। তবে মহামারিতে তালায় বাল্যবিয়ে প্রবণতা হঠাৎ করে তীব্রমাত্রায় বেড়ে যায়। তখন দেখা যায় এক মাসে ১৫-১৬টা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা লাগত। মহামারির সময় অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সমানতালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছি।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের দুই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা জানতে চাই?
নাজমুন নাহার: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ মোটেও সহজ কাজ নয়। এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং। নিজেদের পরিচয় গোপন করে ঝড় বাদলেও আমাদের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হয়েছে। অনেক সময় এমন হয়েছে অফিস করে বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়েছি একটি জায়গায় বাল্যবিবাহ হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতে সেখানে গিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হয়েছে। এমনও হয়েছে যে বিয়ের গাড়ি ধাওয়া করে থামিয়ে তারপরে সে বিয়ে ভাঙতে হয়েছে। এমনকি অনেক সময় জনপ্রতিনিধিরাও বাল্যবিবাহের পক্ষে অবস্থান নেন।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের লড়াইয়ের সহযোদ্ধা হিসেবে কাদেরকে পেয়েছেন?
নাজমুন নাহার: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের এই লড়াইয়ে আমার সঙ্গে পেয়েছি কিশোর-কিশোরী ক্লাবকে, পেয়েছি আমার অফিসের স্টাফদের, পুলিশ প্রশাসন তো ছিলই। এমনকি এমনও হয়েছে সাংবাদিকরাও আমাদের সঙ্গে অভিযানে গিয়েছেন।
হ্যালো: আপনি কী পরিমান বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন?
নাজমুন: আমি তালা উপজেলায় যোগদানের পর তিন বছরে তিনশর উপরে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছি, যার মধ্যে দুইশ ৮৬ থেকে দুইশ ৮৭টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ডকুমেন্ট আছে।
হ্যালো: সাতক্ষীরায় স্থায়ীভাবে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করণীয় কী? আপনার পরামর্শ জানতে চাই।
নাজমুন নাহার: সর্বপ্রথম আমি যেটি বলব সেটি হলো সবাইকে সচেতন হতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে যদি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা তাহলে ভালো হবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: সাতক্ষীরা। সৌজন্যে: বিডিনিউজের শিশু সাংবাদিকতা বিভাগ ‘হ্যালো’।
তিনশ বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন যে কর্মকর্তা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ