ঢাকা ০২:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

তাসনিম খলিল, সামিসহ চারজনের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

  • আপডেট সময় : ০১:০৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেসবুকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের’অভিযোগে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেনপ্রবাসী তাসনিম খলিলসহ চার ‘পলাতক’ আসামির সম্পত্তি ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বাকি তিনজন হলেন হাঙ্গেরি প্রবাসী সামিউল ইসলাম খান সামি ওরফে জুলকারনাইন, ব্লগার আশিক মোহাম্মাদ ইমরান এবং মো. ওয়াহিদুন্নবী ওরফে স্বপন ওয়াহিদ।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন গত সোমবার এই ক্রোকের আদেশ দেন। বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে জানান এ ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামিম আল মামুন।
এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত সাত আসামির মধ্যে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, পাঠচক্রভিত্তিক সংগঠন ‘রাষ্ট্রচিন্তার’ সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান ইমন জামিনে আছেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বিচারক এ মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে চার আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছিল। মহামারীর মধ্যে গত বছর ৬ মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী-লেখক মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে ওই দুজনসহ ১১ জনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিক। পরদিন মিনহাজ মান্নান ও দিদারুলকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
ফেসবুকে ‘ও ধস ইধহমষধফবংযর’ পেইজে সম্পৃক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোর, মুশতাক, দিদারুলকে, যে পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল বলে তখন দাবি করে র‌্যাব।
হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করা হয় মামলার এজাহারে। দিদারুল ও মিনহাজ ফেইসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, “তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান চার মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান। রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুলকেও সে সময় জামিন দেয় হাই কোর্ট। তবে কিশোর ও মুশতাকের জামিন আবেদন সে সময় বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়। রমনা থানা পুলিশ তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই মহসীন সর্দার। বাকি আটজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তিনি।
এদিকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় সেনাপ্রধানকে নিয়ে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামিউল ইসলাম খান সামি ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামির নাম আলোচনায় আসে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন খানের ছেলে সামি থাকেন হাঙ্গেরিতে। তিনি ছিলেন ওই প্রতিবেদনের ‘মূল তথ্যদাতা’। আর সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিলকেও ওই প্রতিবেদনে কথা বলতে দেখা যায়। পুলিশ তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করায় সে সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই মাসের শেষ দিকে মুশতাক আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেলে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও তখন নতুন করে জোরালো হয়ে ওঠে। পরে ৩ মে হাই কোর্ট জামিন দিলে কারাগার থেকে মুক্তি পান কিশোর। এর এক সপ্তাহ পর গত ১০ মে মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) আফছর আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রথম অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়া মিনহাজ মান্নান, সামি, তাসনিম খলিল, আশিক ইমরান ও স্বপন ওয়াহিদকে আসামির তালিকায় ফিরিয়ে এনে সাতজনের বিরুদ্ধে ওই প্রতিবেদন দেন তিনি। গত মার্চে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কার্টুনিস্ট কিশোর অভিযোগ করেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানোর আগে তার ওপর ‘নির্যাতন’ করা হয়। ওই অভিযোগে একটি মামলার আবেদনও তিনি করেছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে, আমাদের পথ দেখাচ্ছে: ফখরুল

তাসনিম খলিল, সামিসহ চারজনের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

আপডেট সময় : ০১:০৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেসবুকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের’অভিযোগে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেনপ্রবাসী তাসনিম খলিলসহ চার ‘পলাতক’ আসামির সম্পত্তি ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বাকি তিনজন হলেন হাঙ্গেরি প্রবাসী সামিউল ইসলাম খান সামি ওরফে জুলকারনাইন, ব্লগার আশিক মোহাম্মাদ ইমরান এবং মো. ওয়াহিদুন্নবী ওরফে স্বপন ওয়াহিদ।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন গত সোমবার এই ক্রোকের আদেশ দেন। বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে জানান এ ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামিম আল মামুন।
এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত সাত আসামির মধ্যে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, পাঠচক্রভিত্তিক সংগঠন ‘রাষ্ট্রচিন্তার’ সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান ইমন জামিনে আছেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বিচারক এ মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে চার আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছিল। মহামারীর মধ্যে গত বছর ৬ মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী-লেখক মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে ওই দুজনসহ ১১ জনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিক। পরদিন মিনহাজ মান্নান ও দিদারুলকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
ফেসবুকে ‘ও ধস ইধহমষধফবংযর’ পেইজে সম্পৃক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোর, মুশতাক, দিদারুলকে, যে পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল বলে তখন দাবি করে র‌্যাব।
হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করা হয় মামলার এজাহারে। দিদারুল ও মিনহাজ ফেইসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, “তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান চার মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান। রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুলকেও সে সময় জামিন দেয় হাই কোর্ট। তবে কিশোর ও মুশতাকের জামিন আবেদন সে সময় বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়। রমনা থানা পুলিশ তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই মহসীন সর্দার। বাকি আটজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তিনি।
এদিকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় সেনাপ্রধানকে নিয়ে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামিউল ইসলাম খান সামি ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামির নাম আলোচনায় আসে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন খানের ছেলে সামি থাকেন হাঙ্গেরিতে। তিনি ছিলেন ওই প্রতিবেদনের ‘মূল তথ্যদাতা’। আর সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিলকেও ওই প্রতিবেদনে কথা বলতে দেখা যায়। পুলিশ তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করায় সে সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই মাসের শেষ দিকে মুশতাক আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেলে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও তখন নতুন করে জোরালো হয়ে ওঠে। পরে ৩ মে হাই কোর্ট জামিন দিলে কারাগার থেকে মুক্তি পান কিশোর। এর এক সপ্তাহ পর গত ১০ মে মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) আফছর আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রথম অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়া মিনহাজ মান্নান, সামি, তাসনিম খলিল, আশিক ইমরান ও স্বপন ওয়াহিদকে আসামির তালিকায় ফিরিয়ে এনে সাতজনের বিরুদ্ধে ওই প্রতিবেদন দেন তিনি। গত মার্চে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কার্টুনিস্ট কিশোর অভিযোগ করেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানোর আগে তার ওপর ‘নির্যাতন’ করা হয়। ওই অভিযোগে একটি মামলার আবেদনও তিনি করেছেন।