আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানের মোট ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৬টিরও বেশি দখল করে নিয়েছে। কান্দাহার ও হেরাত দখল করার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে পুল-ই আলম, ফেরুজ কোহ, কালা-ই-নউ ও লস্কর গহ শহর দখল করে নিয়েছে। শুক্রবার কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলের প্রদেশ লোগারের রাজধানী পুল-ই আলম দখল করে নিয়েছে তালেবান। এই শহরটি রাজধানী কাবুল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে।
তালেবান এই শহরের গভর্নর এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বন্দি করেছে। এছাড়া তারা সরকারি ভবন দখলে নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর হাসিবুল্লাহ স্টানিকজাই ও আফগানিস্তানের সংসদ সদস্য হুমা আহমাদি।
গভর্নর অফিসের ঘনিষ্ঠ একজন পুল-ই আলম শহর দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রাদেশিক গভর্নর আব্দুল কাইয়ুম রাহিমি ১২ ঘণ্টা ধরে লড়াই করেছেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনীয় সমর্থন পাননি। তিনি বারবার বিমান সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাকে চারদিক থেকে ফিরে ফেলা হয়েছিল।
লোগার প্রদেশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। কাবুল থেকে গাড়ি চালিয়ে গেলে এই প্রদেশে প্রবেশ করতে ৯০ মিনিট সময় লাগে। পুল-ই আলম হচ্ছে তালেবানের দখল করা ১৬তম প্রাদেশিক রাজধানী।
আফগানিস্তানে দূতাবাস খালি করার প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের : তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের বড় দুটি শহরের দখল নেওয়ার খবরের মধ্যেই কাবুল থেকে দূতাবাস খালি করার তোড়জোড় শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দুই দশকের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের সর্বশেষ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তালেবান তখন একের পর এক এলাকা দখল করে নিয়ে এগোচ্ছে রাজধানী কাবুলের দিকে।
বৃহস্পতিবার তারা দেশটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার ও হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে খবর এসেছে। তালেবান বাহিনীর একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, বড় শহরগুলোর পতনে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে আফগানরা তালেবানকে ‘স্বাগত জানাচ্ছে’।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। বেশিরভাগ কর্মীকে সরিয়ে নিয়ে সেখানে শুধু মূল কূটনৈতিক উপস্থিতি থাকবে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, দূতাবাস থেকে কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র। অগাস্টের শেষ নাগাদ এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করার আশা করছেন তিনি।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কাবুল শহর থেকে সরিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে বলে পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং দেশটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছেন। এ সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের জন্যও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য বলেছে, তাদের নাগরিক এবং আফগান দোভাষীদের সরিয়ে আনতে ৬০০ সেনা মোতায়েন করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি তাদের সব নাগরিককে অবিলম্বে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বলেছে। আর জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করে বলেছে, তালেবান বাহিনী কাবুল দখল করে নিলে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, কাবুলে দূতাবাসের কর্মী কাটছাঁটের এই ঘোষণা আসার আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে ধারাবাহিক বৈঠক ও ফোনকল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
বাইডেন প্রশাসনের মূল্যায়ন হচ্ছে ২০০১ সালের পর তালেবানের সামরিক শক্তি এখন সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। এমনকি ওই গোষ্ঠীর সাফল্যও খুব দ্রুত আসছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মকর্তার কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের মূল্যায়ন হচ্ছে, কাবুল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে- তালেবানের হাতে পতনের সম্ভাবনাও রয়েছে- কয়েক সপ্তাহের মধ্যে না হলেও, কয়েক মাসের মধ্যেই তা হতে পারে।
তালেবানের দখলে ১৬টিরও বেশি প্রাদেশিক রাজধানী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ