ঢাকা ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

তারেক রহমানের আবেগঘন বক্তব্য, মায়ের ত্যাগ তুলে ধরে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আহ্বান

  • আপডেট সময় : ১১:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও আদর্শকে স্মরণ রেখে দলীয় ঐক্য অটুট রাখার।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছয়বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দল ও নেতাকর্মীদের ত্যাগ করেননি। তার এই ত্যাগ ও সাহসকে সামনে রেখে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আবেগঘন বক্তব্যে অশ্রুসিক্ত হলেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। এসময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

১০টি সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় তারেক রহমান দলের ঐক্য, ত্যাগ ও মূল্যায়ন বিষয়ে হৃদয়ছোঁয়া বক্তব্য রাখেন।

খালেদা জিয়ার ত্যাগের গল্প
তারেক রহমান বলেন, আমার মা-ও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলে মাকে নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু মা তো আপনাদের ছেড়ে আসেননি। ছয়বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও মা আপনাদের ত্যাগ করেননি। যিনি আপনাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই মাকে সামনে রেখে আপনারা এক থাকবেন।

তারেক রহমান আরো বলেন, শেখ হাসিনা আমার মাকে চল্লিশ বছরের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মা তার সন্তানকেও হারিয়েছেন। কিন্তু সেই মা কখনো আপস করেননি। কারণ, তার লক্ষ্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। ইচ্ছে করলে মা আপোষ করতে পারতেন, তবুও করেননি। কারণ, মা জানতেন—এই আপোষ জনগণকে দূরে সরিয়ে দেবে।

‘আসল মা’র উদাহরণ ও ঐক্যের আহ্বান
একপর্যায়ে তারেক রহমান এক আদালতের ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, দুই মায়ের মধ্যে এক সন্তানের দাবিতে বিচারক বলেছিলেন, সন্তানকে দুই ভাগ করে দেবেন। তখন আসল মা বলেছিলেন, সন্তানকে ভাগ করবেন না, অন্যজনকেই দিন—আমি দূর থেকে দেখব। আসল মা তিনিই, যিনি সন্তানের ক্ষতি হতে দেননি।
আমি চাই আপনারা সেই আসল মায়ের মতো হোন। ঐক্যের স্বার্থে ত্যাগ শিখুন। একজন প্রার্থীকে সবাই সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করুন। ঐক্যবদ্ধ থাকুন, তাহলেই বিএনপি এগিয়ে যাবে। বক্তৃতার একপর্যায়ে তারেক রহমান নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

সভা শেষে একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তারেক রহমানের কথায় ছিল না রাজনীতি, ছিল এক মা ও ছেলের আত্মত্যাগের গল্প। সেই গল্পের ভেতরেই দলীয় ঐক্যের বার্তা।

রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বক্তব্য দেন।

মনোনয়ন পরবর্তী মিষ্টি বিতরণে নিষেধাজ্ঞা
বিএনপির সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। প্রত্যেক বিভাগের নেতাদের তিনি নির্বাচনী পরিস্থিতি, ঐক্য রক্ষা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

সিলেট ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানান, তারেক রহমান বলেছেন, মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয় নয়। দলের ঐক্য রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় বিজয়। তিনি আরও নির্দেশ দেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর কেউ যেন মিছিল-মিষ্টি বিতরণ না করে। এতে দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা ব্যাহত হবে।

এর আগে, গত রোববার (২৬ অক্টোবর) রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিনি।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিক্রিয়া
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য ছিল অসাধারণ। পুরো হলে এক ধরনের নীরবতা নেমে এসেছিল। তিনি যখন মা ও দলের ঐক্যের কথা বলছিলেন, তখন আমরা কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি—দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করবো।

আব্দুস সালাম আজাদ আরো জানান, তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই তার পক্ষেই কাজ করবেন। মনোনয়নের পর কোনো মিছিল বা মিষ্টি বিতরণ করা যাবে না—এতে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে।

বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, তারেক রহমান আমাদের বলেছেন, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যই সর্বোচ্চ শক্তি। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই তার পক্ষে কাজ করতে হবে। দলের স্বার্থই যেন সবার আগে থাকে—এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি।

এসি/আপ্র/২৮/১০/২০২৫

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

তারেক রহমানের আবেগঘন বক্তব্য, মায়ের ত্যাগ তুলে ধরে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আহ্বান

আপডেট সময় : ১১:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও আদর্শকে স্মরণ রেখে দলীয় ঐক্য অটুট রাখার।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছয়বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দল ও নেতাকর্মীদের ত্যাগ করেননি। তার এই ত্যাগ ও সাহসকে সামনে রেখে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আবেগঘন বক্তব্যে অশ্রুসিক্ত হলেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। এসময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

১০টি সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় তারেক রহমান দলের ঐক্য, ত্যাগ ও মূল্যায়ন বিষয়ে হৃদয়ছোঁয়া বক্তব্য রাখেন।

খালেদা জিয়ার ত্যাগের গল্প
তারেক রহমান বলেন, আমার মা-ও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলে মাকে নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু মা তো আপনাদের ছেড়ে আসেননি। ছয়বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও মা আপনাদের ত্যাগ করেননি। যিনি আপনাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই মাকে সামনে রেখে আপনারা এক থাকবেন।

তারেক রহমান আরো বলেন, শেখ হাসিনা আমার মাকে চল্লিশ বছরের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মা তার সন্তানকেও হারিয়েছেন। কিন্তু সেই মা কখনো আপস করেননি। কারণ, তার লক্ষ্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। ইচ্ছে করলে মা আপোষ করতে পারতেন, তবুও করেননি। কারণ, মা জানতেন—এই আপোষ জনগণকে দূরে সরিয়ে দেবে।

‘আসল মা’র উদাহরণ ও ঐক্যের আহ্বান
একপর্যায়ে তারেক রহমান এক আদালতের ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, দুই মায়ের মধ্যে এক সন্তানের দাবিতে বিচারক বলেছিলেন, সন্তানকে দুই ভাগ করে দেবেন। তখন আসল মা বলেছিলেন, সন্তানকে ভাগ করবেন না, অন্যজনকেই দিন—আমি দূর থেকে দেখব। আসল মা তিনিই, যিনি সন্তানের ক্ষতি হতে দেননি।
আমি চাই আপনারা সেই আসল মায়ের মতো হোন। ঐক্যের স্বার্থে ত্যাগ শিখুন। একজন প্রার্থীকে সবাই সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করুন। ঐক্যবদ্ধ থাকুন, তাহলেই বিএনপি এগিয়ে যাবে। বক্তৃতার একপর্যায়ে তারেক রহমান নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

সভা শেষে একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তারেক রহমানের কথায় ছিল না রাজনীতি, ছিল এক মা ও ছেলের আত্মত্যাগের গল্প। সেই গল্পের ভেতরেই দলীয় ঐক্যের বার্তা।

রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বক্তব্য দেন।

মনোনয়ন পরবর্তী মিষ্টি বিতরণে নিষেধাজ্ঞা
বিএনপির সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। প্রত্যেক বিভাগের নেতাদের তিনি নির্বাচনী পরিস্থিতি, ঐক্য রক্ষা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

সিলেট ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানান, তারেক রহমান বলেছেন, মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয় নয়। দলের ঐক্য রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় বিজয়। তিনি আরও নির্দেশ দেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর কেউ যেন মিছিল-মিষ্টি বিতরণ না করে। এতে দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা ব্যাহত হবে।

এর আগে, গত রোববার (২৬ অক্টোবর) রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিনি।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিক্রিয়া
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য ছিল অসাধারণ। পুরো হলে এক ধরনের নীরবতা নেমে এসেছিল। তিনি যখন মা ও দলের ঐক্যের কথা বলছিলেন, তখন আমরা কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি—দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করবো।

আব্দুস সালাম আজাদ আরো জানান, তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই তার পক্ষেই কাজ করবেন। মনোনয়নের পর কোনো মিছিল বা মিষ্টি বিতরণ করা যাবে না—এতে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে।

বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, তারেক রহমান আমাদের বলেছেন, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যই সর্বোচ্চ শক্তি। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই তার পক্ষে কাজ করতে হবে। দলের স্বার্থই যেন সবার আগে থাকে—এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি।

এসি/আপ্র/২৮/১০/২০২৫