নিজস্ব প্রতিবেদক : আজকের তরুণদের নেওয়া উদ্যোগই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পৌঁছে দেবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুব সমাজের মেধা ও জ্ঞানের বিকাশের পাশাপাশি তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে সব সময় পাশে থাকবেন তিনি।
গতকাল সোমবার জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের পঞ্চম আসরের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভিডিও বক্তৃতায় এই প্রতিশ্রুতি দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “বর্তমানকে সামনে নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কাজেই আমরা আমাদের বর্তমান উৎসর্গ করেছি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে, বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠে জাতির পিতার স্বপ্ন যেমন পূরণ করবে আর বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে বাঙালি জাতি এগিয়ে যাবে।”
দেশ ও মানুষের কল্যাণে যেসব তরুণ উদ্যোক্তা ও সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে ৩১ ব্যক্তি ও সগঠনকে এ অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা ২০১৪ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভিডিও বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সব উদ্যোগ বাংলাদেশে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই উদ্যোগই পারবে আমাদের যে লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ হবে- সেই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারব ইনশাল্লাহ।
“শুধু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, ২০৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করব।”
আর সেভাবেই নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তরুণদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমি বলব যে তরুণদের যে মেধা, যে জ্ঞান তা বিকশিত করার জন্য এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সেইভাবেই তাদের কাজ করতে হবে। “তরুণদের মেধা, জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমাদের বাংলাদেশের যতটুকু আজ অর্জন হয়েছে গত ১২ বছরে হঠাৎ করে হয়নি। আমাদের সরকারের নীতি এবং আমাদের কর্মসূচির দ্বারাই এটা সম্ভব হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানে আমরা সব সময় চেয়েছি আমাদের তরুণ সমাজ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, নিজের কাজ নিজে করবে এবং আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। এবং সেভাবেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।” এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন- সিআরআই এর ‘অগ্রণী ভূমিকার’ প্রশংসা করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, “সিআরআই উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রতিভাবান ও সফল তরুণ যুবকদের তারা পুরষ্কৃত করবে। যাতে তাদের ভেতরে একটা সাহস জেগে উঠে, এবং তাদের যে জ্ঞান এবং শক্তি, তা তার নিজের ও সমাজের কাজে লাগে। সেই অনুপ্রেরণা যেন তারা পায়। সেই লক্ষ্য নিয়েই এই পুরস্কার বিতরণের আয়োজন।” আওয়ামী লীগ সব সময় ‘তরুণদের গুরুত্ব দেয়’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তরুণদের জীবন উন্নত করা গেলে, তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা গেলে তারাই পারে পরিবর্তন আনতে। “একই ধারায় পৃথিবী সব সময় চলে না। এখন বিজ্ঞানের যুগ, প্রযুক্তির যুগ। প্রতিনিয়ত এক্ষেত্রে বিবর্তন হচ্ছে, প্রতিনিয়ত এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। উন্নত প্রযুক্তি আসছে। সেই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রযুক্তির সাথে পা ফেলেই এগিয়ে যেতে হবে। “আর সেই পরিবর্তনটা সব সময় যুব সমাজই আনে এবং আনতে পারে। তাদের জ্ঞান, মেধা, সেটাই কিন্তু তাদের সেই সুযোগটা দেয়।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশের তরুণ সমাজ যেভাবে মানুষের কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং নির্ভয়ে মানবসেবায় নিয়োজিত হয়েছে, সেজন্য তিনি ‘গর্বিত’। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের তরুণ ও যুব সমাজের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে সব সময় আমি এই তরুণ সমাজ, তোমাদের পাশে আছি।” যুব সমাজকেই আওয়ামী লীগের ‘মূল শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, গত নির্বাচনে তার দল যে ইশতেহার দিয়েছিল, সেটা যুব সমাজকেই উৎসর্গ করা হয়েছিল। “আজকের তরুণরা নিজেদের প্রস্তুত করবে আগামী দিনের জন্য, যেন এই দেশকে তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে তারুণ্যের শক্তি, উদ্যোগ, উদ্যম কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সে কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ বয়স থেকেই এদেশের নিপীড়িত, শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে তুলতেও জাতির পিতা তরুণদের গুরুত্ব দিয়েছিলেন।”
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণ করা ভিডিও বক্তব্য দেখানো হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ: জাতির পিতার নীতি অনুসরণ করে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আর্থ সামাজিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২০ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবারের পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব) মো. খুরশেদ আলমের নাম ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি এ বছর এই পদক প্রদানের মাধ্যমে আমাদের কূটনৈতিকরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত হবেন। “পাশাপাশি আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কূটনৈতিকগণও তাদের স্ব স্ব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন শিখরে উন্নীত করতে উৎসাহিত হবেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই সকলের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক এবং আর্থ সামাজিক উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। “বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা; যেখানে কোন ক্ষুধা থাকবে না, দারিদ্র থাকবে না, মানুষের দুঃখ, কষ্ট দূর হবে, মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। “
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই হচ্ছে আমাদের বড় অর্জন। বাংলাদেশকে আমরা আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
“আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করব ২০৩০ সালের মধ্যে। আবার পাশপাশি আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।”
নিজের জীবনে কিছু ‘চাওয়ার নেই’ মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “আমি কোনো কিছুই চাই না। আমার জন্য কিছু করা হোক, সেটাও আমার কাছে কামনা না। কারণ আমি জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।
“কারণ আমি তো আমার বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। কিন্তু আমি একটা সিদ্ধান্তই নিয়েছি, যত কষ্ট, যত আঘাত, যত বাঁধাই আসুক, যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে।” ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দারিদ্র্য বলে, মঙ্গা বলে বাংলাদেশে কিছু থাকবে না। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে- সেটাই আমার লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমার পথ চলা।” অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
তারুণ্যের উদ্যোগই পৌঁছে দেবে উন্নত বাংলাদেশে: প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ