ঢাকা ০৩:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তামার তৈরি কয়েনে কোটি টাকা প্রতারণার ফাঁদ

  • আপডেট সময় : ০২:১৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চোরাই তামার তার গলিয়ে তৈরি হয় কয়েন। এতে দেওয়া হয় পুরনো মুদ্রার ছাপ। দাবি করা হয় এটা শত শত বছরের পুরনো দিনের মুদ্রা, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর দাম হাঁকা হয় কোটি টাকা। পরিকল্পিতভাবে একটি চক্র কয়েকটি ধাপে বিত্তশালী লোভী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে বিনিয়োগে বাধ্য করে। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। এমন অভিযোগে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। শনিবার বিকালে বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, এই চক্রটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সবশেষ মামলাটি হয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানাতে। যার ছায়া তদন্ত করতে গিয়েই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর গুলশান পুলিশের জোনাল টিম উত্তরা, সাভার এবং মানিকগঞ্জ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাইফুল ইসলাম ওরফে বিষ্ণু মালো ওরফে শঙ্কর মালো ওরফে শংকর ওরফে স্বপন, সাইদুল ইসলাম জিহাদ ওরফে রাজা, সৈয়দ মুস্তাকিন ওরফে অহিদুজ্জামান এবং মতিন মোল্লা ওরফে মোল্ল্যা আতিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১১ লাখ টাকা এবং ৪২টি বিভিন্ন আকৃতির ধাতব মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ইন্ডিয়া কোম্পানি, এক আনা, দুই আনা এবং বিভিন্ন প্রতিকৃতি খচিত রয়েছে।
যেভাবে তৈরি করা হয় প্রতারণার ফাঁদ
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই চক্রের আট থেকে নয়জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে দুই থেকে তিনজন বিত্তবান, সহজ-সরল কিন্তু লোভী লোকদের টার্গেট করে তাদের আত্মীয়দের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে বোঝায় যে, তারা একটি দুর্লভ মূল্যবান প্রতœতত্ত্ব জিনিস পেয়েছে, যা বিক্রি করলে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে। এই দুর্লভ জিনিসটিকে দেশে-বিদেশে বিক্রি জন্য একজন স্মার্ট এবং প্রভাবশালী লোকের প্রয়োজন। এদের অন্য দলে থাকে একজন বিদেশি, যে অনর্গল হিন্দি এবং ইংরেজিতে কথা বলে। মাড়োয়ারি পরিচয় ধারণ করা এই বিদেশি ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতত্ত্ব সামগ্রী উচ্চমূল্যে কেনার অভিনয় করেন। চক্রের অপর দলে থাকে অন্তত একজন রেডিওলজিস্ট, যে বিদেশি ব্যবসায়ীদের পক্ষে মুদ্রাসহ ধাতব পদার্থ কেমিক্যাল দিয়ে পরীক্ষা করে তার বয়স এবং ধরন বলে দিতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে সমঝোতা হলে কোনো এক পড়ন্ত বিকালে চক্রটি টার্গেটকৃত ব্যক্তি নিয়ে তারকা হোটেলে বসে। সেখানেই আলোচনা হয় যে, ধাতব বস্তু বা মুদ্রাটি কোনো এক জেলার গ্রামে আছে এবং তার একটা বর্ণনা দেওয়া হয়। বর্ণনা শুনে বিদেশি ব্যবসায়ীর পক্ষে তার এজেন্ট বস্তুটিকে ঢাকায় এনে পরীক্ষা করানোর জন্য আরেকটি তারিখ প্রস্তাব করেন। সেই তারিখে হোটেলেই ধাতব মুদ্রা পদার্থটিকে পরীক্ষা করে একটি পর্যায়ে বলা হয়, এটার বয়স ৩০০ বছর থেকে ৪০০ বছর। তখন বিদেশি পরিচয় ধারণ করা প্রতারক ব্যস্ত হয়ে পড়েন এটা কেনার জন্য।
ডিএমপির গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, দুর্লভ এই মুদ্রা বা ধাতব বস্তুর মালিক সম্ভাব্য ভিকটিমকে হাত-পা ধরে বলতে থাকেন, বিদেশিদের সাথে দরাদরি করে তারা পারবেন না। বিদেশিরা ঠকিয়ে দেবে। তাই একটি এগ্রিমেন্ট করে প্রতারকরা সম্ভাব্য ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে বস্তুটি বুঝিয়ে দিতে চায় এবং তার কাছ থেকেই বিক্রয়লব্ধ টাকা পেতে চায়। ওই সূত্রটি জানায়, বস্তুটির মূল্য যত কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয় বিদেশি প্রতারকের এজেন্ট বলতে থাকে, আপাতত তাদের কাছে অর্ধেক পরিমাণ টাকা আছে। বাকি টাকা তারা পরদিন এনে দিতে পারবেন। বস্তুর মালিক প্রতারক এবং বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতারক পরদিন সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা হবে এই শর্তে সম্ভাব্য লোভী ভুক্তভোগীকে অনুরোধ করেন বাকি টাকা বিনিয়োগ করতে। টাকা বিনিয়োগ করার পরই পালিয়ে যায় প্রতারক চক্রটি। গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার-স্বপ্নে কয়েনের পেছনে ছুটে প্রতারিত হয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করা মৌলভীবাজারের সৈয়দ মুস্তাকিন আলি ওরফে ওয়াহিদুজ্জামান নিজেই কয়েন প্রতারণার ব্যবসায় নেমে পড়েন। মতিন মোল্লা ওরফে মোল্লা আতিকের কাছ থেকে একই প্রক্রিয়ায় প্রতারণার কৌশল শেখা সাইদুল ইসলাম জিহাদ ওরফে রাজার সাথে সৈয়দ মুস্তাকিন আলি ওরফে অহীদুজ্জামানের পরিচয় হয়। প্রথমে সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপন কমলাপুর এলাকার রনির মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে প্রতারক চক্র প্রথমে তাদের বাসায় এবং পরবর্তী সময়ে একবার রেডিসন হোটেলে, দুইবার লা মেরিডিয়ান হোটেল এবং পরে দুইবার উত্তরার লেকভিউ হোটেলে মিটিং করে প্রতারণার বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করে।
ওই সূত্রটি জানায়, এই প্রতারক চক্রটি প্রথমে তিনটা গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ সম্পন্ন করে। প্রথম গ্রুপে থাকে মেডিয়া ম্যান, যার নেতৃত্ব দেন সাইদুল ইসলাম ওরফে রাজা। দ্বিতীয় গ্রুপে থাকেন মুদ্রার মালিক সাইফুল ইসলাম ওরফে শংকর মালো ওরফে স্বপন এবং মতিন মোল্লা ওরফে মোল্লা আতিক। তৃতীয় গ্রুপে থাকেন দুজন বিদেশি বায়ার এবং একজন বায়ারের প্রতিনিধি। বিদেশি বায়ার দুজনকে ম্যানেজ করেন সৈয়দ মুসতাকিন ওরফে ওয়াহিদুজ্জামান। সিলেটে বাড়ি লন্ডন প্রবাসী আখলাক এবং সাইমন বিদেশি বায়ার সাজেন এবং তাদের প্রতিনিধি এবং কেমিস্ট সাজেন সৈয়দ মুস্তাকিন আলি ওরফে অহিদুজ্জামান। মুদ্রার মালিকপক্ষ ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে প্রথম দিকে একাত্ম হয়ে যায় এবং বোঝাতে থাকে- এত টাকার মালামাল হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষমতা তাদের নেই। মালিক পক্ষ দুই কোটি টাকায় দুর্লভ কয়েন ভুক্তভোগী পক্ষকে দিতে রাজি হয়, ভুক্তভোগী পক্ষ যা বিদেশি বায়ারের কাছে বিক্রি করে পাঁচ কোটি টাকা পাবে। আবহ তৈরির জন্য প্রতারকরা বিভিন্ন ধনকুবেরের নম্বর সেভ করে ফোনে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার কথোপকথন করতে থাকে। বায়ারের প্রতিনিধি এবং কেমিস্ট ওয়াহিদুজ্জামান ওরফে সৈয়দ মুস্তাকিন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং কেমিক্যালস, কার্বন, ম্যাগনিফাইং গ্লাস ইত্যাদি দিয়ে কয়েনের রেডিয়েশান এবং তার গুণগতমান ভুক্তভোগীর সামনে পরীক্ষা করে মতামত দেন। এই ভুয়া যন্ত্রটি তিনি মিটফোর্ড এলাকা থেকে কিনেন, যা মূলত কান পরীক্ষা করার ডাক্তারি যন্ত্র। এই যন্ত্রটি কয়েনের উপর ধরলে হালকা রঙিন আভা পাওয়া যায় এবং কেমিক্যালসগুলো মূলত বিভিন্ন শ্যাম্পু, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি। বায়ার এবং তার প্রতিনিধি পরদিন ভিকটিমকে টাকা দেবে বলে আশ্বস্ত করে পালিয়ে যায়। একই প্রক্রিয়ায় চক্রটি একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারণা করেছে। দুর্লভ প্রতœতাত্ত্বিক এবং ম্যাগনেটিক কয়েন পাওয়া যায় এমন গুজবই মূলত এই প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি করে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তামার তৈরি কয়েনে কোটি টাকা প্রতারণার ফাঁদ

আপডেট সময় : ০২:১৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : চোরাই তামার তার গলিয়ে তৈরি হয় কয়েন। এতে দেওয়া হয় পুরনো মুদ্রার ছাপ। দাবি করা হয় এটা শত শত বছরের পুরনো দিনের মুদ্রা, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর দাম হাঁকা হয় কোটি টাকা। পরিকল্পিতভাবে একটি চক্র কয়েকটি ধাপে বিত্তশালী লোভী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে বিনিয়োগে বাধ্য করে। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। এমন অভিযোগে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। শনিবার বিকালে বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, এই চক্রটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সবশেষ মামলাটি হয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানাতে। যার ছায়া তদন্ত করতে গিয়েই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর গুলশান পুলিশের জোনাল টিম উত্তরা, সাভার এবং মানিকগঞ্জ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাইফুল ইসলাম ওরফে বিষ্ণু মালো ওরফে শঙ্কর মালো ওরফে শংকর ওরফে স্বপন, সাইদুল ইসলাম জিহাদ ওরফে রাজা, সৈয়দ মুস্তাকিন ওরফে অহিদুজ্জামান এবং মতিন মোল্লা ওরফে মোল্ল্যা আতিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১১ লাখ টাকা এবং ৪২টি বিভিন্ন আকৃতির ধাতব মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ইন্ডিয়া কোম্পানি, এক আনা, দুই আনা এবং বিভিন্ন প্রতিকৃতি খচিত রয়েছে।
যেভাবে তৈরি করা হয় প্রতারণার ফাঁদ
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই চক্রের আট থেকে নয়জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে দুই থেকে তিনজন বিত্তবান, সহজ-সরল কিন্তু লোভী লোকদের টার্গেট করে তাদের আত্মীয়দের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে বোঝায় যে, তারা একটি দুর্লভ মূল্যবান প্রতœতত্ত্ব জিনিস পেয়েছে, যা বিক্রি করলে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে। এই দুর্লভ জিনিসটিকে দেশে-বিদেশে বিক্রি জন্য একজন স্মার্ট এবং প্রভাবশালী লোকের প্রয়োজন। এদের অন্য দলে থাকে একজন বিদেশি, যে অনর্গল হিন্দি এবং ইংরেজিতে কথা বলে। মাড়োয়ারি পরিচয় ধারণ করা এই বিদেশি ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতত্ত্ব সামগ্রী উচ্চমূল্যে কেনার অভিনয় করেন। চক্রের অপর দলে থাকে অন্তত একজন রেডিওলজিস্ট, যে বিদেশি ব্যবসায়ীদের পক্ষে মুদ্রাসহ ধাতব পদার্থ কেমিক্যাল দিয়ে পরীক্ষা করে তার বয়স এবং ধরন বলে দিতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে সমঝোতা হলে কোনো এক পড়ন্ত বিকালে চক্রটি টার্গেটকৃত ব্যক্তি নিয়ে তারকা হোটেলে বসে। সেখানেই আলোচনা হয় যে, ধাতব বস্তু বা মুদ্রাটি কোনো এক জেলার গ্রামে আছে এবং তার একটা বর্ণনা দেওয়া হয়। বর্ণনা শুনে বিদেশি ব্যবসায়ীর পক্ষে তার এজেন্ট বস্তুটিকে ঢাকায় এনে পরীক্ষা করানোর জন্য আরেকটি তারিখ প্রস্তাব করেন। সেই তারিখে হোটেলেই ধাতব মুদ্রা পদার্থটিকে পরীক্ষা করে একটি পর্যায়ে বলা হয়, এটার বয়স ৩০০ বছর থেকে ৪০০ বছর। তখন বিদেশি পরিচয় ধারণ করা প্রতারক ব্যস্ত হয়ে পড়েন এটা কেনার জন্য।
ডিএমপির গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, দুর্লভ এই মুদ্রা বা ধাতব বস্তুর মালিক সম্ভাব্য ভিকটিমকে হাত-পা ধরে বলতে থাকেন, বিদেশিদের সাথে দরাদরি করে তারা পারবেন না। বিদেশিরা ঠকিয়ে দেবে। তাই একটি এগ্রিমেন্ট করে প্রতারকরা সম্ভাব্য ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে বস্তুটি বুঝিয়ে দিতে চায় এবং তার কাছ থেকেই বিক্রয়লব্ধ টাকা পেতে চায়। ওই সূত্রটি জানায়, বস্তুটির মূল্য যত কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয় বিদেশি প্রতারকের এজেন্ট বলতে থাকে, আপাতত তাদের কাছে অর্ধেক পরিমাণ টাকা আছে। বাকি টাকা তারা পরদিন এনে দিতে পারবেন। বস্তুর মালিক প্রতারক এবং বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতারক পরদিন সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা হবে এই শর্তে সম্ভাব্য লোভী ভুক্তভোগীকে অনুরোধ করেন বাকি টাকা বিনিয়োগ করতে। টাকা বিনিয়োগ করার পরই পালিয়ে যায় প্রতারক চক্রটি। গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার-স্বপ্নে কয়েনের পেছনে ছুটে প্রতারিত হয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করা মৌলভীবাজারের সৈয়দ মুস্তাকিন আলি ওরফে ওয়াহিদুজ্জামান নিজেই কয়েন প্রতারণার ব্যবসায় নেমে পড়েন। মতিন মোল্লা ওরফে মোল্লা আতিকের কাছ থেকে একই প্রক্রিয়ায় প্রতারণার কৌশল শেখা সাইদুল ইসলাম জিহাদ ওরফে রাজার সাথে সৈয়দ মুস্তাকিন আলি ওরফে অহীদুজ্জামানের পরিচয় হয়। প্রথমে সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপন কমলাপুর এলাকার রনির মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে প্রতারক চক্র প্রথমে তাদের বাসায় এবং পরবর্তী সময়ে একবার রেডিসন হোটেলে, দুইবার লা মেরিডিয়ান হোটেল এবং পরে দুইবার উত্তরার লেকভিউ হোটেলে মিটিং করে প্রতারণার বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করে।
ওই সূত্রটি জানায়, এই প্রতারক চক্রটি প্রথমে তিনটা গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ সম্পন্ন করে। প্রথম গ্রুপে থাকে মেডিয়া ম্যান, যার নেতৃত্ব দেন সাইদুল ইসলাম ওরফে রাজা। দ্বিতীয় গ্রুপে থাকেন মুদ্রার মালিক সাইফুল ইসলাম ওরফে শংকর মালো ওরফে স্বপন এবং মতিন মোল্লা ওরফে মোল্লা আতিক। তৃতীয় গ্রুপে থাকেন দুজন বিদেশি বায়ার এবং একজন বায়ারের প্রতিনিধি। বিদেশি বায়ার দুজনকে ম্যানেজ করেন সৈয়দ মুসতাকিন ওরফে ওয়াহিদুজ্জামান। সিলেটে বাড়ি লন্ডন প্রবাসী আখলাক এবং সাইমন বিদেশি বায়ার সাজেন এবং তাদের প্রতিনিধি এবং কেমিস্ট সাজেন সৈয়দ মুস্তাকিন আলি ওরফে অহিদুজ্জামান। মুদ্রার মালিকপক্ষ ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে প্রথম দিকে একাত্ম হয়ে যায় এবং বোঝাতে থাকে- এত টাকার মালামাল হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষমতা তাদের নেই। মালিক পক্ষ দুই কোটি টাকায় দুর্লভ কয়েন ভুক্তভোগী পক্ষকে দিতে রাজি হয়, ভুক্তভোগী পক্ষ যা বিদেশি বায়ারের কাছে বিক্রি করে পাঁচ কোটি টাকা পাবে। আবহ তৈরির জন্য প্রতারকরা বিভিন্ন ধনকুবেরের নম্বর সেভ করে ফোনে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার কথোপকথন করতে থাকে। বায়ারের প্রতিনিধি এবং কেমিস্ট ওয়াহিদুজ্জামান ওরফে সৈয়দ মুস্তাকিন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং কেমিক্যালস, কার্বন, ম্যাগনিফাইং গ্লাস ইত্যাদি দিয়ে কয়েনের রেডিয়েশান এবং তার গুণগতমান ভুক্তভোগীর সামনে পরীক্ষা করে মতামত দেন। এই ভুয়া যন্ত্রটি তিনি মিটফোর্ড এলাকা থেকে কিনেন, যা মূলত কান পরীক্ষা করার ডাক্তারি যন্ত্র। এই যন্ত্রটি কয়েনের উপর ধরলে হালকা রঙিন আভা পাওয়া যায় এবং কেমিক্যালসগুলো মূলত বিভিন্ন শ্যাম্পু, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি। বায়ার এবং তার প্রতিনিধি পরদিন ভিকটিমকে টাকা দেবে বলে আশ্বস্ত করে পালিয়ে যায়। একই প্রক্রিয়ায় চক্রটি একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারণা করেছে। দুর্লভ প্রতœতাত্ত্বিক এবং ম্যাগনেটিক কয়েন পাওয়া যায় এমন গুজবই মূলত এই প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি করে।