নিজস্ব প্রতিবেদক : সোমবার (৩১ মে) বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘কমিট টু কুইট’। তবে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে।
গতকাল রোববার বেসরকারি তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (প্রগতির জন্য জ্ঞান) প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তামাক ছাড়ার সুফল অনেক। যদি কোনও ব্যক্তি টানা ১ বছর তামাকমুক্ত থাকতে পারেন, তবে তার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ধূমপায়ীর তুলনায় অর্ধেক কমে যায় এবং ধূমপান ছাড়ার দশ বছরের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে তামাক ছাড়লে প্রত্যাশিত আয়ু তামাক ব্যবহারকারীর তুলনায় প্রায় ১০ বছর বেড়ে যায়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রাক্কালে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী পণ্যের দামবৃদ্ধির প্রতি অধিক সংবেদনশীল। তামাকপণ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাকের ব্যবহার, তামাকজনিত মৃত্যু ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি অধিকহারে হ্রাস পায়। তাই তামাকে বর্ধিত করারোপ একটি দরিদ্র-বান্ধব পদক্ষেপ।
প্রজ্ঞা’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে, সর্বোপরি ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জন করতে হলে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) এর মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ প্রভৃতি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রজ্ঞা মনে করে, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ, যেখানে অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠির মধ্যে এই হার মাত্র ২৪ শতাংশ।